Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা

তুহিন আহামেদ, গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০১:০১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

প্রিন্ট:

মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা

ফাইল ছবি

গাজীপুর : মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণেই সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার সকল যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে নিষিদ্ধ এসব অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অবাদে চলাচল করছে।

মহাসড়কে তিন চাকার এসব যান চলাচলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তাদের ভাষ্যমতে, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতির কারণেই মহাসড়কের উপর দিয়ে যেনতেনভাবে অবাদে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এসব রিকশা। যার ফলে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। অনেকেই জীবন দিয়েছেন আবার অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে বসে আছেন। অথচ হাইওয়ে পুলিশ এসব নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

অভিযোগ রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজস থাকার কারণে অনায়াশে মহাসড়ক দিয়ে এসব অটোরিকশা চলাচল কবরছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাইকোর্ট থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা অবাদে চলাচল করছে। সেই সাথে জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা, জয়দেবপুর, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে এসব নিষিদ্ধ হাজার হাজার অটোরিকশা তৈরী করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানে প্রশাসনের নাকের ডগার মধ্যে এসব অটোরিকশা তৈরী হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভুমিকা পালন করছে।

অভিযোগ রয়েছে, নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা তৈরী করা কারখানার মালিকদের সাথে থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের যোগসাজস রয়েছে। যার ফলে প্রকাশ্যে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে অবাদে অটোরিকশা তৈরী করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইননানুগ ব্যবস্তা নেয়া হয় না। তবে মাঝে মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ লোক দেখানো ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায়। আবার পুনরায় তা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। এনিয়ে জরগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে আবার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এ দুটি মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার অটোরিকশা চরাচল করছে। অথচ ট্রাফিক পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ তাদের কিছুই বলছে না। অবাদে মহাসড়ক দিয়ে নিষিদ্ধ এসব অটোরিকশা চলাচলের ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। অথচ মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণেই সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার সকল যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাসড়ক সহ বিভিন্ন লিংক সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন।

ব্যাটারি চালিত এসব অটোরিকশা অবৈধভাবে মহাসড়কের পাশেই অনেকে আবার ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য গ্যারেজ করেছেন। যেসকল গ্যারেজে পল্লী বিদ্যুতের আবাসিকের মিটার লাগানো রয়েছে। আবার অনেক গ্যারেজ মালিক পল্লীবিদ্যুতের কর্তাদের সাথে মোটা অংকের অতের্কর বিনিময়ে বানিজ্যিক মিটার নামিয়ে তাতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে। একেকটা গ্যারেজে ২০-৩০টি করে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়।

অনেক গ্যারেজ আবার এর অধিক পরিমাণ অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়। পুরো জেলায় প্রায় দুই শতাধিক ব্যাটারি চার্জ করার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, জরুন, দেওলিয়াবাড়ি, পূবাইল, মীরের বাজার, ভবানীপুর, হাতিমারা, সারদাগঞ্জ, চক্রবর্তী, মাধবপুর, লোহাকৈর, আমবাগ, বাইমাইল, জিরানী বাজার, পানিশাইল, হালিম মার্কেট, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর, আন্ধার মানিক, মৌচাক, তেলিরচালা, দোকানপাড়, ভান্নারা, ফুলবাড়িয়া, রতনপুর, পূর্ব মৌচাক, হরিণহাটি, চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ, বোর্ড মিল, বোর্ডঘর, সাহেব বাজার, পল্লীবিদ্যু মোল্লাপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, পাশা গেইট, মাটিকাটা রেল ক্রসিং, কালামপুর, হিজলহাটি, খোলাপাড়া, জালশুকা বাজার, টঙ্গী’র চেরাগ আলী, মাঝুখান, কালীগঞ্জের দড়িপাড়া, কাপাসিয়া ও শ্রীপুরে আরো প্রায় অর্ধশত ব্যাটারি চার্জ দেয়ার গ্যারেজ রয়েছে।

এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দেয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবাসিক এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় বিদ্যুতের সাধারন গ্রাহকদের।

এব্যাপারে গাজীপুর পল্লীবিদ্যুতের কোনাবাড়ি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান সরকার জানান, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ দেয়া গ্যারেজের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জেল জরিমানাও করা হচ্ছে। আর এটা অব্যাহত থাকবে।

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার দৌরাত্ব সম্পর্কে সালনা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হোসেন সরকার বহুমাত্রিক.কম-কে জানান, মহাসড়কে চলাচলরত অবৈধ অটোরিকশার ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যাটারি খোলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপরও থামছে না। মহাসড়ক থেকে এসব তিন চাকার যান সরাতে আমরা সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নিয়ন্ত্রণে আনতে একটু সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer