খুলনা : নিরালা আবাসিক এলাকার বেসরকারী সংস্থায় কাজ করেন আল অমিন। অফিসিয়াল সকল কাজ করতে হয় তাকে ল্যাপটপে। কীবোর্ডে হাত রেখে কাজ করতে গিয়ে তাকে বার বার হাত নেড়ে মশা তাড়াতে হচ্ছে। মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে পারেন না। পাশের কলিগ সৌমিত্রের এলার্জির সমস্যা রয়েছে।
অফিস কক্ষটিতে কাজ করতে হয় জ্বানালা খুলে তাই এরোসল ব্যবহার করতে পারেন না। মশার উৎপাত ভনভনানি আর কামড়ে শুধু আল আমিন নন প্রায় প্রতিটি নাগরিকই যন্ত্রণায় রয়েছেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি বিভাগ যদিও দাবি করছে মশা নিধনের জন্য নগরীতে ৪১টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সিটি মেয়র জানালেন মশা নিধনে প্রতিনিয়ত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ চিটানো হচ্ছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হবে।
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সিটি হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান। এর আয়তন ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ১৫ লাখের উপর। ৩১টি ওর্য়াডে বিভক্ত। বৃহৎ আয়তনের এই সিটির অধিবাসীরা বর্তমানে মশার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। দিনে রাতে সব সময়ই মশার উৎপাত রয়েছে। বাসাবাড়িতে দিনের বেলায়ও শিক্ষার্থীদের মশারি টানিয়ে পড়ালেখা করতে হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে কাজ করতে হচ্ছে মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা মশা নিধক এরোসল ব্যবহার করে।
নগরীর ড্রেন নর্দমায় ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ন। ড্রেণের আবর্জনা সময়মত পরিস্কার করা হয় না। সেখানে মশার বংশ বৃদ্ধি হলেও তা ধ্বংস করা হচ্ছে নঅ বলে নগরবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
কেসিসি মার্কেটের একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে দলিল লেখার কাজ করছিলেন আব্দূস সাত্তার নামে এক ব্যক্তি তিনি বার বার মশার কামড়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেই মশার কয়েল কিনে আনলেন। দোকানীকে মশার কয়েল কিনতে বললে তিনি বললেন ভাই আমাদের মশার কাপড় খেযে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন কামড়ালে বুঝতে পারি না।
মশার গুনগুনানি পোঁ পোঁ শব্দে আর রক্তাক্ত কামড়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শিকেয় উঠেছে। মশার কামড়ে নগরবাসির অবস্থা এখন ত্রাহী মধুসুদন। এ সুযোগে করে বেড়েছে মশার কয়েল বিক্রি। নগরবাসির অভিযোগ, মশার কয়েলেও ঠেকানো যাচ্ছে না এত বিপুল মশা। নগরবাসী এই ভয়ঙ্কর মশার হাত থেকে বাঁচতে চায়।
সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুলতানা প্রিয়া বলেন, দিনের বেলাতেও বই পড়া যায় না। মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে গুডনাইট স্প্রে ব্যবহার করি। কিন্তু বিদ্যুৎও সময় মত পাওয়া যায় না। মশার কয়েল জ্বালালে চোখ পড়ে, কাশি হয়। কিন্তু তারপরও কয়েল জ্বালাতে হয়।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই বাড়িঘর-সংসার সব মশার দখলে চলে যায়। সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা জ্বানালা বন্ধ করে দিতে হয়। না হলে বিদ্যুতের আরোয় বাইরে থেকে শত শত মশা এসে ঘরে আশ্রয় নেয়।
খুলনা মহানগরীর মশা নিধনের দায়িত্ব খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি বিভাগের। কঞ্জারভেন্সি বিভাগ মশা নিধনে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি পদ্ধিতির মাধ্যমে তারা শুধু মশার ডিম মারে এবং অন্য পদ্ধতিতে তারা পূর্ণবয়স্ক মশা মেরে থাকে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (খুশিক) কন্জারভেন্সি অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নগরীতে মশার উপদ্রব কমাতে বদ্ধপরিকর। নগরীর ৩১টি ওর্য়াডে ৪১টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশা নিধনের জন্য ওষুধ স্প্রে করা হয়।
তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশ এখন নিজেরাই পদ্মা অয়েল থেকে ডিজেল ও কেরোসিন কিনে থাকে। প্রতি লিটার ডিজেলে ৮০ মিলিলিটার সাইফারমেথ্রিণ কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা হয়। তাছাড়া এক ধরনের কালো তেল ছিটানো হয়। কালো তেল আঠালো হওয়ায় মশা তেলে আটকে যায়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, শীতের শেষে গ্রীষ্মের শুরুতে মশার উপদ্রব বাড়ে। এখন মশার প্রজনন মৌসুম। আগামী বর্ষা মৌসুম শুরু আগ পর্যন্ত এ অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে। মশা নিধনে নগরীর ড্রেণ,নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত স্প্রে করা হচ্ছে মশানিধক ওষুধ। তিনি বলেন, মশার বংশ বিস্তাররোধে শুরু হচ্ছে ক্রাশ প্রোগাম।
বহুমাত্রিক.কম