Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোলানাথের গণতন্ত্র দর্শন

পদ্মনাভ অধিকারী

প্রকাশিত: ০২:০৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ভোলানাথের গণতন্ত্র দর্শন

                                        ১ম দৃশ্য

(সময় সকাল দশটা)

মাঝ বয়সি ভোলানাথ। বাম ঘাড়ে একটা ঝোলা। মাথায় ঝাকড়া চুল-কাঁচা পাকা।মুখে খোচা খোচা দাঁড়ি।গায়ে গেঞ্জি। ডান ঘাড়ে একটা গামছা। পরণে হাঁটু পর্যন্ত উঠানো ঠেটি ধোত্যি পরা।খোলা মঞ্চে প্রবেশ করে লাঠি হাতে। স্থানটা বাস স্ট্যান্ড।লোক চলাচল করছে। হকাররা হাঁক ছেড়ে সংবাদ পত্র বিক্রী করছে। কমলা বিক্রেতা, শশা বিক্রেতা, বাদম ও সিদ্ধ ডিম বিক্রেতাও হাঁক ছাড়তে ছাড়তে যাচ্ছে। ভোলানাথের চোখে পুরাতন গোল কাঁচ বসানো চশ্মা। এক চোখে কাঁচ নেই। মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। কৌতুহলি কিশোর উত্তর ক,জন ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়ায়। নিজেরা হাত নেড়ে চোখের ইশারায় আলাপ করে নিঃশব্দে। হঠাৎ তাদের একজন ভোলাকে জিজ্ঞাসা করে-

দাদু- ও দাদু।

ক্যানো ?

বাড়ি কোথায় ?

দক্ষিণি।

কোথায় যাবা, মেয়ের বাড়ি ? কথার মাঝে বাকিরা ভোলার ঝোলা- দ্যাখে। টিপাটিপি করে। নাগো

না, মেয়ে পাবো কনে, বে করলিতো।

তাহলি শহরে আইছো কি করতি ?

শুনলাম, দেশে গণতন্ত্র এয়েছে। তাই দেখতি এয়েছি-

ওরা হো হো, হা হা করে হাসতে হাসতে, হাতে তালি দিতে দিতে বলতে বলতে চলে যায়-দেশে নাকি

গণতন্ত্র এয়েছে, সেই ভূতে দাদুরে পেয়েছে,

দাদু গ্রাম ছেড়ে মরেছে, দাদুরে এবার যমে ধরেছে।

ওরা চারজন চলে গেলে। ভোলানাথ তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলে-
সেই দক্ষিণে সুন্দবনের ধারে আমার বাড়ি। দশ ক্রোশ হেঁটে এসে চড়লাম গাড়ি। পার করলাম এক রাত। গাড়িরতে নেইমে দিলো, এই নাস্তার ধারে, ঘোমের জ্বালায় হয়ে পড়লাম কাত। অজাত মশা এসে কেমড়ে কেমড়ে ঘুমানোর গুষ্টি মারলে। ভোর হোলো। ভাবলাম, চলে ফিরে দেখি- গণতন্ত্র কেমন দেখতি লাগে। পাজির দল আসে-পিন্ডি চোটকে-কিসব অ¯্রাব্য কথা বলতি বলতি চলে গ্যালো। তাহলি কি এডাই গণতন্ত্র! কি যে করি ঘুরে-ঘারে দেখি,গণতন্ত্র কনে।

(লাইট অফ)
                                                     ২য় দৃশ্য

(লাইট)

ভোলানাথ একটা পার্কে আসে। এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা বেঞ্চে তিন যুবক বসে আছে। তারা সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছাড়ে। আচমকা হাসে। একজন উঠে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে। ভোলানাথকে জিজ্ঞাসা করে-ও দাদু, পার্কে এয়েছেন কি জন্যে?

ভোলাঃ ক্যানো, আসতি মানা-নাকি?

যুবকঃ না- না, মানা হবে ক্যানো।

ভোলাঃ তাহলি?

যুবকঃ আসল কথা কি জানেন, আপনাদের বয়সের লোকেরা এখানে আসে না বুঝলেন?

ভোলাঃ বুঝিছি, কিন্তু...আমি যে তারে খুঁজদিছি।

যুবকঃ কারে? দিদি ভাই-হারিয়ে গেছে নাকি?

ভোলাঃ ধুর পুড়ামুখো। বে করলিতো সে থাকতো?

যুবকঃ তাহলে কাকে খুঁজছেন? কথার ফাঁকে বাদাম বিক্রেতা-ডিম বিক্রেতা হাঁক ছেড়ে চলে যায়। বাকি দুজন যুবক ভোলার ঝোলা টিপে দেখে।

ভোলাঃ গণতন্ত্র।

যুবকঃ দাদু, আপনি কি পাগল, নাকি মাথায় ছিট আছে আপনার?

অন্যদুজন যুবক চোখের ঈশারায়-মাথায় হাত দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ভোলা পাগল। তিন যুবক নীরব।

ভোলানাথ বলে-

ভোলাঃ পাগল বলেই তো গেরাম ছাড়ে শহরে এয়েছে। সহসা নেপথ্য থেকে হাঁক আসে আই লাভ ইউ মিনা। সহসা একটা মেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে এক কোণে মঞ্চের সামনের দিকে দাঁড়িয়ে পড়ে। একজন যুবক। আধুনিক পোষাকে হাতে একটা ছোট শিশি। সে মঞ্চে এসে গুণ গুণ করে গাইতে থাকে-
তু চিজ বড়ি হ্যায় মসতি মসতি। হাতে রাখা শিশির মুখ খুলেই মেয়েটার মুখে ছুড়ে মারে। মেয়েটা চিৎকার করে ওঠে আ...। বাঁচাও বাঁচাও। ছেলেটা পালিয়ে যায়। ভোলাসহ তিন যুবক সজাগ হয়। মেয়েটা চলে যায়। ভোলা বেঞ্চে বসে ঝোলা থেকে চিড়া গুড় বের করে খেতে থাকে। সহসা এক উকিল তার মুহুরিকে নিয়ে প্রবেশ করে। হাতে বাজারের প্যাকেট। উকিল মঞ্চের মাঝ খানে এসে ঘুরে বলে

                                       ৩য় দৃশ্য

বুঝলি চিত্তো!

বলেন স্যার?

কি আর বলবো, বাজারে গিয়ে কেনাকাটার পরিবেশ নেই। শুনলিতো, বেয়াদপটার কথা গুলো?

আজ্ঞে স্যার।

পাজিটা একবারও ভাবলো না, কার সাথে কি বলছে!

আজ্ঞে স্যার।ওরাই এখন ফাদার মাদার।

কথায় বলে খদ্দের লক্ষ্মি।

আজ্ঞে স্যার। যে যুগ হয়েছে পা.. .. র।

তার মানে!

এখন মূল্য টাকার। আপনার মত উকিল আর আমার মত মুহুরি ওরা পোছে না। ওদের এখন
অভাব নেই বলেই তো স্বভাব খারাপ। মানুষের মান রেখে কথা বলে না।

আজ্ঞে স্যার। চলুন তো।

(সহসা দুই যুবক এসে হাজির) একজন বলে-

কাকু নমস্কার।

উকিলঃ নমস্কার। ঠিক চিনতে পারলাম নাতো!

যুবকঃ এই তো সমস্যা। একই মহললায় থাকেন, অথচ আমাদের চিনছেন না!

উকিলঃ না মানে- ঠিক। মনে করতে পারছি না।

যুবকঃ রতন কি হয়?

উকিলঃ ছেলে।

যুবকঃ আমরা তার বন্ধু। ক’দিন আগে আপনার চেম্বারে গিয়েছিলাম।

উকিলঃ ও হ্যাঁ, হ্যাঁ। একটা রেপ কেস সম্ভবত.. .. ..।

যুবকঃ মনে পড়েছে কাকু।

উকিলঃ হ্যা বাপ। (অন্য যুবক ছুরি খুলে দেখিয়ে ভাজ করে।) ওটা নিয়ে আমি ভেবেছি। একটা কথা

বলি বাপু-

যুবকঃ বলুন?

উকিলঃ এবারের মত ঝামেলাটা মিটে াবে। তবে এমন কেসে নিজেদের ভবিষ্যতে জড়াতে যেয়ো না।

যুবকঃ ঠিক আছে। ওরা চলে গেলে উকিল বলে-চিত্তো-কি বুঝলি?

ঈশারায় বলে গ্যালো। হাতে ছিল শক্তিশেল। কাজটা করে দিতে পারলে ভাল। না পারলে করতে হবে হার্ট-ফেল। চলুন স্যার।

দুজনে চলে গেলে, ভোলা উঠে দাঁড়ায়। দূরে রাত আটটা বাজার শব্দ হয়।

মঞ্চে আসে একজন মাঝ বয়সি লোক। ভদ্র বেশ। মাথায় কাঁচা পাকা চুল। তার দুপাশ থেকে দুজন করে চারজন যুবক এসে পথ আটকে দাঁড়ায়। বাম দিকের দুজনের একজন বলে-

                                    ৪র্থ দৃশ্য

সালামা আলাইকুম স্যার।

অলাইকুম সালাম। তোমরা!

আমরা আপনার ছাত্র স্যার। কেমন আছেন স্যার?

ভাল। তোমরা ভালতো বাবা।

জি স্যার। আসি স্যার। ওরা চলে গেলে, ডান দিকের দুই যুবক সামনে এসে দাঁড়ায়।

একজন বলে-একটা কথা বলতাম স্যার।

বলো-কিথা? কিন্তু তোমাদের তো ঠিক চিনতে পারলাম না!

ওদের চিনেছেন, তাই না?

হ্যা, ওরা। আমার কাছে প্রাইভেট পড়তো। কিন্তু তোমরা...

আমরা আপনার ক্লাশে পড়তাম।

ও আচ্ছা- আচ্ছা। তা বলো বাপ কি চাও তোমরা।

পরীক্ষায় পাশ করতে চাই।

খুব আনন্দের কথা। সেজন্যে আমি কি করতে পারি, তোমরা সঠিক লিখলে- পাশ করে যাবে-ব্যাস।

ঠিক তা নয় স্যার।

তাহলে?

যুবকঃ আমরা অবশ্য নকল নিয়ে যাব না স্যার।

শিক্ষকঃ সাথে নেবে ক্যানো। অন্য সবার মত মাথায় করে যাবে। এতে অনুরোধের কি আছে বাবা।

ছাত্রঃ স্যার, আমরা কানে করে নিয়ে যাব।

শিক্ষকঃ কানে করে, এতো অদ্ভুদ ব্যাপার? তা আমাকে কি করতে হবে?

ছাত্রঃ আপনি কোন চেক করবেন না।

শিক্ষকঃ বেশতো। তোমরা মাথার বদলে কানে নিয়ে যাবে, তাতে ক্ষতি কি?

ছাত্রঃ আছে।

শিক্ষকঃ কেমন?

ছাত্রঃ সেটা শোনার দরকার নেই। আপনি শুধু কথা দিন, চেক করতে যাবেন না।

চেক করাতো দূরের কথা, আমি তোমাদের ধারে কাঁছেই যাব না। কি তাহলে হবে তো?

ধন্যবাদ স্যার। আসি স্যার। ওরা চলে যায়। শিক্ষক পায়চারী করতে থাকে- দুজন পুলিশ প্রবেশ করে। একজন সালাম জানিয়ে বলে-

                                        ৫ম দৃশ্য

এতো রাতে এখানে কি করছেন?

(ঘড়ি দেখে) এতো রাত মানে-সবে সাড়ে আটটা বাজে।

কি করেন আপনি?

আমি একজন শিক্ষক।

বেশতো, বাসায় ফিরে যান।

ক্যানো, আমি কি পাবলিক রাইট থেকে বঞ্চিত?

বলছিতো-কথা বাড়াবেন না। লক আপে ভরে দেব।

আমার অপরাধটা কি? আমার বিরুদ্ধে কোন কেস আছে নাকি?

থানায় নিয়ে গেলে কেসের অভাব হবে না বুঝলেন? আপনি শিক্ষক মানুষ, কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়–ন। যান-যান এখান থেকে।


                                          ৬ষ্ঠ দৃশ্য

শিক্ষক চলে গেলে মঞ্চের লাইট নিভে যায়। ভোলানাথ বেঞ্চে বসে থাকে। পুলিশ দুজন টর্চ লাইট জ্বেলে এপাশ ওপাশ আর দর্শকদের দিকে আলো ফেলতে থাকে। এর মাঝে দুজন লোক ভারী বস্তা মাথায় করে মঞ্চে আসে। একজন পুলিশ বলে-

এই, তোরা কারারে? ওরা দুজন বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। একজন পুলিশ বাঁশি বাজাতে বাজাতে সরে পড়ে। অন্যজন এ পাশ ওপাশ করতে থাকে। হঠাৎ একজন বস্তা মাথায় নিয়ে আসে। পুলিশ বলে- দাঁড়া।

লোকটা বলে- টিকিট আছে স্যার। দাঁড়াতে গেলি কাজ হবে না। এলেই গ্যাট থেকে একটা চিরকুট বের করে এগিয়ে দেয়। পুলিশ বলে-ঠিক আছে। বড় বাবুকে বড় বানাও। আমরা বুঝি বেশো।
সকালে হোটেলে পরেটা খাওয়াবো স্যার। কথা পাক্কা?

জি।

ঠিক আছে ভাগ।সে গেলে আরও দুজন বস্তা মাথায় আসে।

পুলিশ বলে- টোকেন আছে?

একজন বলে-জে স্যার, আছে। অন্যজন চুপ।

পুুলিশ বলে- এই তোর বস্তায় কি?

চা-পাতি

টোকেন দ্যাখা।

সে একশ টাকার নোট এগিয়ে দেয়- নেন স্যার। হাবু ভাইয়ের মাল।

বেশ, যা।

ওরা চলে গেলে ধীরে ধীরে মঞ্চে ভোরের আলো আর পাখিদের কোলাহল। ভোলানাথ আড়মোড়া খেয়ে উঠে বসে।

                                        ৭ম দৃশ্য
ভোলানাথঃ যাই-হাত মুখ ধুয়ে এসে চিড়ে গুড় খাতি হবে। হরি-হরি-হরি.. .. ..।

ভোলা চলে গেলে কিশোর দুই টোকাই এসে ভোলার ঝোলা নেড়ে চেড়ে হাতড়ে-চিড়ে গুড় দেখে ঝোলা নিয়ে সরে পড়ে। এক কোণে বসে খেতে থাকে। ভোলা এসে বেঞ্চে ঝোলা না দেখে, কপালে আঘাত করে। এদিক ওদিক দ্যাখে। টোকাই দুজন কাছে এসে বলে-

দাদু এই নাও। সব খাইনি। আসি টা টা.. .. ..।

ভোলা ঝোলা হাতে নিয়ে বেঞ্চে গিয়ে সে চিড়া গুড় খেতে থাকে। নানান ধরনের পথচারি। মহিলা পুরুষ আসা যাওয়া করতে থাকে। হঠাৎ পুলিশের বাঁশি বাজে। পথচারীরা থমকে দাঁড়ায়। একজন যুবকের ঘাড় ধরে দুজন পুলিশ আসে মঞ্চে।
 

                                            ৮ম দৃশ্য

১ম পুরুষঃ এই হারামজাদা- সব পুলিশকে এক মনে করিস, তাই না। দলের নাম করে চাঁদাবাজি করবি, চা পান বেচাদের কাছ থেকেও চাঁদা নিবি আবার প্রতিবাদ করতে গেলে দলের ভয় দ্যাখাবি, কি রে জবাব দে?

২য় পুলিশঃ এই শালা, তোর বোনকে নিয়ে বাড়ছে জ্বালা। তুই কোন দল করিসরে?

যুবকঃ সরকারি দল।

১ম পুলিশঃ প্রমাণ দিতি পারবিতো?

যুবকঃ জি।

২য় পুলিশঃ তুমি যে দলের হনু হওনা কেন, টাকা বের কর (বেতের বাড়ি দেয়)

যুবকঃ মারছেন কেন? কাজটা ভাল করছেন না।

১ম পুলিশঃ খারাপ কি করছি? সরকার কি দেশ চালানোর ক্ষমতা তোর হাতে ছেড়ে দিয়েছে? (আবার পাছায় বাড়ি) কি হলো জবাব দে? (এঘটনার মাঝে ফেরি করে পান বিক্রেতা ও চা বিক্রেতা এসে হাজির হয়)

২য় পুলিশঃ এই তোরা কারারে?

পান বিক্রেতাঃ জি স্যার, আমাগের দুজনের কাছ থেকে টাকা নেছে স্যার। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় (কান্না) ঘুরে রোদি পুড়ে যা আয় করি, তাইতো বুড়ো বাপ মার জন্যি সওদা করে ঘওে ফিরি স্যার। পঞ্চাশ টাকা যদি নিয়ে নেই তাহলি ব্যবসা চলবে কি করে স্যার?

১ম পুলিশঃ এই টাকা দিয়ে দে। কি হলো টাকা দে।

(যুবক ওদের দুজনের টাকা দিয়ে দেয়) পুলিশ যুবকের গলায় ধাক্কা দিয়ে বলে) যা ভাগ, এখান থেকে। যা তোর নেতাদের গিয়ে বলগে যা শালা হারামজাদা-নিমক হারাম, বেয়াদপ।

যুবকঃ কাজটা ভাল করলেন না ভাই-পরে বুঝবেন।

১ম+২য় পুলিশঃ কি বল্লি, দাঁড়া দ্যাখাচ্ছি মজা। ধাওয়া দেয়-যুবক ও ২ পুলিশ মঞ্চ ছেড়ে যায়। ভোলা মঞ্চের মাঝখানে এসে বলে-কি দেখতি কি দেখতিছি-ওভাই সকলেরা। আমি যে গণতন্ত্র দেখতি এয়েলাম, তা কনে গেলি দেখতি পাব?
                                             

                                         ৯ম দৃশ্য

১ম কিশোরঃ আরে! ও দাদু তোমার মেয়ের বাড়ি যাওনি?

২য় কিশোরঃ ঝোলায় কি?

৩য় কিশোরঃ তোমার মতলবটা কি, কও দেখি?

৪র্থ কিশোরঃ আঃ, তোরা থামতো। মুরুব্বিদের নাড়তে নেই। ঐযে সেদিন বলল, গ্রাম ছেড়ে শহরে এয়েছেন, কি দেখতি... ও হ্যা, মনে পড়েছে, গণতন্ত্র দেখতে এয়েছেন।

ভোলাঃ ঠিক বলিছিস-গণতন্ত্র দেখতি এয়েছি? তোরা কি করে বেড়াচ্ছি সব-মুখপোড়ার দল?
৪র্থ কিশোর হেসে বলে- আমরা রাস্তায় রাস্তায় কালো সোনা খুঁজে বেড়াচ্ছি বুঝলে, ৪র্থ কিশোর সহসা-আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি-গেতে গেতে চলে যায়।

ভোলানাথঃ বাঃ বা- বা বাঃ কি মিষ্টি সুরে গায়তে গায়তে চলে গেলো পাজির দল। পাজি হলেও দেশ প্রেম আছে বলতি হবে। বাঃ বা বা বাঃ। কিন্তু আমার অপেক্ষায় থাকতি হবে। যদি তার দ্যাখা পাই।
                                                 

                                      ১০ম দৃশ্য

ভোলা বেঞ্চে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে। মঞ্চের পরিবেশ-পড়ন্ত বিকাল বেলা। মঞ্চে কিশোর কিশোরী যুবক যুবতীদের আসা যাওয়া। বাদাম বিক্রেতা। ডিম বিক্রেতা হেঁকে বেড়াচ্ছে। কিছু সময় পর মঞ্চে কেবল ভোলা। সহসা নেপথ্যে শোরগোল-

ধর ধর ধর, শালাকে। মার শালাকে। মার মার।(শোরগোলের মাঝে মঞ্চে দৌড়ে আসে সেই এসিড নিক্ষেপকারী যুবক। সে এপাশ ওপাশ করতে থাকে। এর মাঝে দুপাশ থেকে চার চার আটজন যুবক এসে ঘিরে ধরে। তাদের হাতে হকিস্টীক, লাঠি, চাপাতি-ছুরি। যুবক বলে-

তোমরা কারা ভাই, এভাবে আমাকে... তাড়াচ্ছো ক্যানো? ওদের একজন বলে- চিনতে পারছিস না -তাই না?

যুবকঃ না-মানে আমি ঠিক...।

: চিনতে পারছিস না এই তো? (অন্যএকজন বলে)

: এখনই চিনতে পারবি। (অন্য একজন বলে)

: ভেবেছিস, আমার বোনকে এসিড মেরে তুই দাপিয়ে বেড়াবি? (বলেই মার শুরু করে। এক সময় যুবকটা চিৎকার করে। ঝমাঝম বুকে পেটে ছুরি চালাতে থাকে। যুবক চিৎকার করে। বাঁচাও বাঁচাও এর মাঝে ছুরি ফেলে ওরা পালিয়ে যায়। ভোলা উঠে এসে দেখতে থাকে। আর কপালে হাত চাপড়াতে থাকে। সহসা দুজন পুলিশ আসে। তাদের সাথে এক যুবক।

পুলিশঃ এই তুমি কে?

ভোলানাথ,পিতা হরিনাথ, পিতামহ যদুনাথ, তার বাপ রঘুনাথ ...।

পুুলিশঃ বাড়ি কোথায়?

এজ্ঞে-দক্ষিণে। সোন্দরবনের ধারে।

২য় পুলিশঃ তা শহরে কি তোমার?

এজ্ঞেঃ গণতন্ত্র দেখতি এয়েছি।

২য় পুলিশঃ হাসে। হেসে বলে-গণতন্ত্র দেখতে এসে মানুষ মেরে ফেল্লে?

এজ্ঞে না। আমি মারিনি। আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম। (চিৎকার শুনে জেগে পড়ে কাছে এসে দেখতিছি। কোন মুখপোড়ারা যে মারলে কতি পারিনে। আমি মারিনি। বিশ্বাস করো আমি মারিনি।

১ম পুুলিশঃ ঠিক আছে। ঠিক আছে। উঠো। গণতন্ত্র দ্যাখবা?

এজ্ঞে।

ওটা হাতে ন্যাও। আমাদের সাথে চলো।

সথে আসা যুবক নিজ পকেট থেকে এক বান্ডিল টাকা বের করে পুলিশের হাতে দেয়। সে সরে পড়ে। পুলিশ ভোলাকে ছুরি হাতে নিতে বাধ্য করে। ভোলা বলে-আমার ঝোলা নেব না?
পুলিশঃ ন্যাও, ন্যাও জলদি চলো। ভোলা ঝোলা ঘাড়ে নিতেই লাইট অফ।

                                            ১১তম দৃশ্য

(লাইট)

ভোলানাথ ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে। আসামির পোষাক পরিহিত। সামনের ফাঁসির দড়ি ঝুলবে। জল্লাদ দড়ি ধরে থাকবে। জেলর হাত ঘড়ি দ্যাখবে।

নেপথ্যে কণ্ঠে বাজতে থাকবে-

এই সেই ভোলানাথ, যৌবনে যে ছিল দুরন্ত মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হলে স্বদেশের মাটিতে অনেক আশা ভরসা নিয়ে ফিরে এসেছিল। ফিরে এসেছিল গণতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে। সে বিশ্বাস করতো, স্বাধীনতা মানে মুক্তি। আর মুক্তি মানে গণতন্ত্র-আইনের শাসন। সুদূর দক্ষিণে, সুন্দরবণের বিচিত্র সৌন্দর্য ও মোহ ত্যাগ করে এসেছিল এই শহরে, গণতন্ত্রের ছবি দেখতে! তার সেই সাধ পূর্ণ হলো। স্বাধীনতার যুদ্ধে হারিয়েছিলাম বাপ মা ভাই বোন। অবশেষে দিতে হলো নিজের জীবন।

লাইট অফ

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer