ছবি : বহুমাত্রিক.কম
কুষ্টিয়া : নিজের সাফল্য আর দেশের কৃষিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক থেকে মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করা তরতাজা যুবক মফিজুর রহমান মাফুজ পেলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে সম্মাননা।
রোববার বিকেলে কুষ্টিয়ার দিশা টাওয়ারে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া বিভাগের শাখা ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মী সমাবেশ-২০১৭ অনুষ্ঠানে সারাদেশের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় চুয়াডাঙ্গার মা এ্যাগ্রো ভার্মি কম্পোষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান মাফুজের হাতে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাঈল।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রান্তিক চাষীদের সহজ শর্তে কৃষি ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। মাঝারি এগ্রো শিল্পে কৃষি ব্যাংক ঋন প্রদান করে দেশকে স্বনির্ভর করতে চায়। ইদানিং কৃষি ব্যাংকের সুদের হার কমিয়েছে। কৃষি ব্যাংক ১০০ ভাগ সরকারি ব্যাংক, তাই এ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জনগণের প্রতি দায়িত্ব অপরিসীম।
সম্মাননা স্মারক পেয়ে তার অভিব্যক্ত প্রকাশ করতে গিয়ে মফিজুর রহমান মাফুজের জানান, ২০০২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হই। তারপর লেখাপড়ার প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। তখন আমি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য গবাদিপশু ও মুরগির খামার গড়ে তুলি। কিন্তু ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময় অতিরিক্ত গরমে একদিনেই আড়াই হাজার মুরগি মারা যায়। গরুর খামারটিও নষ্ট হয়ে যায়। আবার হতাশ হয়ে পড়ি আমি। প্রায় তিন বছর এভাবে থাকার পর নতুন উদ্যোমে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে থাকি। এ সময় পরিচয় হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তার পরামর্শে ২০০৭ সালের শুরুতে আমি ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
তিনি আরও জানান, ‘ভারত থেকে প্রতিটি তিন টাকা দরে ১ লাখ ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান কেঁচো কিনে শুরু করি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের কাজ। নিজের সাফল্য আর দেশের কৃষিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক থেকে মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করছেন।
নিজের অতীতের কথা স্মরণ রেখে জেলার দরিদ্র কৃষকদেরকে বিনামূল্যে পরামর্শ ও ভার্মি কম্পোস্ট বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তিনি।
মাফুজ আরও বলেন, ‘মা এগ্রো ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের পাশাপাশি জেলার প্রতিটি গ্রামের দরিদ্র কৃষক বিশেষ করে নারী কৃষকদের এ সার উৎপাদন বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমার লক্ষ্য দেশের কৃষিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক থেকে মুক্ত করা। আমি শুধু নিজ জেলাতেই নয়, এরই মধ্যে দেশের ৬১টি জেলাতে এ বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’
এই মফিজুর রহমান মাফুজ তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর বঙ্গবীর ওসমানী পদকেও ভূষিত হয়েছেন। আজকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের হাত থেকে পুরস্কার পাওয়াটাও গর্বের বিষয় বলেও অভিহিত করেন। এক সময়ের হতাশাগ্রস্ত মাফুজের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৫ জন নারী শ্রমিকও কাজ করছেন।
বহুমাত্রিক.কম