Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

ভারতে প্রশ্নের মুখে হোয়াটসঅ্যাপ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ৪ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ভারতে প্রশ্নের মুখে হোয়াটসঅ্যাপ

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়ানো গুজবের জেরে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনার পর সরকার কার্যত ওই মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটির কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে।

জবাবে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ সরকারকে চিঠি লিখে বলেছে, যেভাবে একটার পর একটা হিংসার ঘটনা ঘটছে তাতে তারাও `আতঙ্কিত` - এবং সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। এই উদ্দেশ্যে শুধু ভারতের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ একটি নতুন লেবেল পরীক্ষা করছে বলেও জানিয়েছে।

তবে ভারতে তুমুল জনপ্রিয় এই মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানো কীভাবে ঠেকানো সম্ভব তা নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট ঐকমত্য নেই - যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন হোয়াটসঅ্যাপও এখানে দায় এড়াতে পারে না।

গত কয়েকদিনে ছেলেধরা বা ওই জাতীয় গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ছত্তিশগড়, গুজরাট, কর্নাটক, তামিলনাডু, তেলেঙ্গানার মতো বহু রাজ্যে - আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই গুজব ছড়ানোর মাধ্যম ছিল হোয়াটসঅ্যাপ। চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে তুমুল আলোচনা - গণপিটুনি বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অজুহাত হিসেবে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজকে।

ভুয়ো মেসেজের সমস্যাটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু যেখানে বিশ কোটিরও বেশি ভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন এবং ওই প্ল্যাটফর্মে তারা রোজ তেরোশো কোটিরও বেশি বার্তা আদানপ্রদান করেন - সেখানে সমাধানটা ঠিক কী হবে সেই উত্তরটা এখনও জানা নেই।

এই পটভূমিতেই ভারত সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সোমবার হোয়াটসঅ্যাপকে চিঠি লিখে বলেছিল, তারা যেন `বিস্ফোরক খবর` ছড়ানো ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়। ভারতের দ্য সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির গবেষণা-প্রধান সুমন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন প্রচলিত আইনও বলে এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ কিন্তু তাদের হাত মুছে ফেলতে পারে না।

তিনি বলছেন, "এই ধরনের সমস্যার একটা টেকনিক্যাল নাম আছে, ইন্টারমিডিয়ারি লায়াবিলিটি। হোয়াটসঅ্যাপ এখানে ইন্টারমিডিয়ারি বা মধ্যস্থ প্ল্যাটফর্ম - সেটাকে ব্যবহার করে কোনও ঘটনা ঘটানো হলে তাতে তাদের কতটা বা কীরকম দায়বদ্ধতা থাকবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার আন্তর্জাতিক আইনও আছে।"

"হোয়াটসঅ্যাপ যেহেতু একটা ডিজিটাল মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, তাই ধরেই নেওয়া যায় কোন নম্বর বা অ্যাকাউন্ট থেকে কোন বার্তা কোথায় যাচ্ছে, তার একটা সার্বিক ছবি তাদের কাছে আছে। ফলে প্রশাসন বা পুলিশ যখন তাদের বলে অমুক বার্তাটা হেইট স্পিচ বা তমুক বার্তা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তখন হোয়াটসঅ্যাপের বলার কোনও অবকাশ নেই তারা জানে না সেটা কে কাকে পাঠিয়েছে!"

এসব ক্ষেত্রে সচরাচর হোয়াটসঅ্যাপের জবাব হয়, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের গোপনীয়তার জন্য তাদের হাত পা বাঁধা। আর ভারতের বর্তমান সরকার এখনও যে কোনও এনক্রিপশন নীতিমালাই চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি, সেটাও এখানে একটা বড় প্রতিবন্ধকতার কাজ করছে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও মনে করেন, "ভারতের মতো মুক্ত গণতন্ত্রে একটা এনক্রিপশন নীতির খুব দরকার।"

কিন্তু ঘটনা হল তিন বছর আগে একটা খসড়া নীতিমালা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সরকারও এখনও নতুন খসড়া পেশই করতে পারেনি। প্রয়োজনটা সরকারও বুঝছে, কিন্তু কাজ এগোচ্ছে না।

তবে কাশ্মীর হোক বা তামিলনাডু - এখনও ভারতের যে প্রান্তেই যখনই কোনও উত্তেজনা মাথা চাড়া দেয় - প্রথম কোপ পড়ে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতেই। সুমন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, একটা দেশের আইন মেনে এখানে হোয়াটসঅ্যাপকেও দরকারে তাদের প্রযুক্তি বদলাতে হবে।

তিনি বলছেন, "হোয়াটসঅ্যাপ বলে থাকে তারা কারও মেসেজ পড়তে চায় না, সেন্সর করতে চায় না - সে কারণেই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করার অনুমতি দিয়ে থাকে। ভাল কথা, কিন্তু মেসেজটা কী তা না-জেনেও কিন্তু সেই বিশেষ মেসেজটা ডিজিট্যালি আইডেন্টিফাই করা খুবই সম্ভব।"

"যদি ধরেও নেই তাদের কাছে এই মুহূর্তে যা প্রযুক্তি আছে তাতে এটা সম্ভব নয়, তারপরও এই সব ঘটনার যা পাবলিক ইমপ্যাক্ট তাতে তো সেই টেকনোলজি বদলানোর কথা তাদের ভাবতে হবে! মানে আইন মানা যাচ্ছে না কারণ আমার প্রযুক্তি সেটা অ্যালাও করছে না - এটা বললে তো চলবে না, কোনও কোনও আইন কিছুতেই পাল্টানো যাবে না", বলছিলেন সুমন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

সরকারকে লেখা চিঠিতে হোয়াটসঅ্যাপ বলেছে, তারা ভারতে এমন লেবেল চালু করতে চাইছে যাতে বোঝা যাবে একটা বার্তা কেউ নিজে লিখেছেন - নাকি স্রেফ ফরোয়ার্ড করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়ো বার্তার রমরমা ঠেকাতে এটুকুই যথেষ্ট নয় - সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আরও কিছু টেকনিক্যাল আপস হয়তো তাদের করতেই হবে। বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer