ছবি: বহুমাত্রিক.কম
গাজীপুর-সাভার ব্যুরো : সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সবাই আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেছে। কিন্তু আনন্দে মেতে উঠতে পারেনি জুয়েল। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অদম্য এই মেধাবী ছাত্র জুয়েল মিয়া এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত। আর ভবিষ্যৎ চিন্তায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। হাসি নেই তার মুখে। শুধু একটাই প্রশ্ন উচ্চ শিক্ষা চালাতে পারবো তো?
কথা হয় মেধাবী ছাত্র জুয়েল এর সাথে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, জুয়েলের মা ছোলেমা বেগম অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজে ব্যস্ত। আর বাবা রফিকুল ইসলাম ব্যস্ত অন্যের জমিতে বর্গা চাষীর কাজ করে। আর বাবার বর্গা চাষীর কাজে কোন ফসলই ঘরে তুলতে পারেন না। ২ ভাই ৩ বোনের সংসার। বোনদের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই সোহেল মিয়া এক সময় সংসারের হাল ধরে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই বড় ভাইও মানসিক সমস্যায় চিকিৎসা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাবন করছেন। যেখানে পুরো পরিবারের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জুটে না পেটে। সেখানে তারা চিকিৎসার আশা করেন কিভাবে?
কিন্তু অভাবে জর্জরিত পরিবারে এই ছেলেটির জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে কোন আনন্দ নেই তাদের। বরং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সে শঙ্কায় শঙ্কিত। উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারীয়াখোলা গ্রামে একচালা জরাজীর্ণ ঘরে বাস করে জুয়েলদের পরিবার।
২০১১ সালে পিএসসি’তে জিপিএ-৫ পায় জুয়েল। জেএসসি দেওয়ার আগে পরিবারের অভাব-অনটনের কথা ভেবে লেখা-পড়া ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করে সে। কিন্তু শত বাঁধায় নিজেকে স্থির করে জেএসসি পরীক্ষা দেয় ২০১৪ সালে। ফলাফল জিপিএ-৪.৩৯। আর এ ফলাফলের জন্য মাঝ পথে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই দায়ী। এসএসসির জন্য পূর্ণোদ্যোমে শুরু করে লেখাপড়া। নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে জুয়েল স্থানীয় একটি সমিতিতে কাজ শুরু করে এবং ৯ম শ্রেণি থেকেই প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে। কিন্তু এসএসসিতে দারিদ্র জয় করলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত জুয়েল।
সমাজের বিত্তবান এমন কারো সহযোগিতা পেলে জুয়েল ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কারণ নিজে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে বুঝেছেন শিক্ষকতাই মহান পেশা। আর এই স্বপ্ন পুরণে সকলের সহযোগিতা চেয়েছে জুয়েল।
দক্ষিণ চুয়ারীয়াখোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ও খুবই মেধাবী ও ভদ্র একজন ছেলে। তবে ওরা খুব দরিদ্র। সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে হয়তো ছেলেটির লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় একজন মেধাবীর ছেলের মেধার অপমৃত্যু হবে।’
তুমলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার লিটন ফ্রান্সিস রিবেরু বলেন, ‘জুয়েল এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে ভেবেছি। কিন্তু এতো ভালো করবে ভাবিনি। দরিদ্র এই ছেলেটির উচ্চ শিক্ষায় কোন বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসলে হয়তো লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবে।’
বহুমাত্রিক.কম