Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

বোরো ধানে ব্লাস্ট প্রাদুর্ভাবে সতর্কতা প্রয়োজন

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:১২, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বোরো ধানে ব্লাস্ট প্রাদুর্ভাবে সতর্কতা প্রয়োজন

ব্লাস্ট রোগটি ছত্রাকঘটিত। Magnaporthe oryzae নামক ছত্রাক প্যাথোজেন দ্বারা রোগটির বিস্তার ঘটে থাকে। এ রোগটি গমেও দেখা দিয়ে থাকে। গত ২-৩ বছর গম উৎপাদন মৌসুমে ব্লাস্ট রোগটি বেশ মহামারি আকার ধারণ করেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এতে গমের উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। গমের ব্লাস্ট রোগে কৃষকের ক্ষতির ধকল কাটেিয় উঠতে না উঠতেই এবারে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধানেও তা দেখা দিয়েছে। আর এটা হাওর এলাকাতেও কিছু কিছু জমিতে দেখা দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কৃষি ফসলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থাকবে স্টো একেবারে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রোগ যদি মহামারি আকারে হয় তখনই সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 


ছত্রাক জাতীয় কোন রোগের বিস্তার লাভের উপযুক্ত আবহাওয়া হলো দিনে রৌদ্রের খরতাপ, রাতে ঠা-া এবং কুঁয়াশা। তাছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়া। অপরদিকে পরপর কয়েকবছর একই জমিতে একই জাতের ধান বা গম আবাদ করা। সেখানে পূর্বের বছরের ধান বা গমের উচ্ছ্বিষ্টাংশ বা অবশিষ্টাংশ ধ্বংস না করে রেখে দেওয়া। বীজ শোধন না করা। কিংবা উপযুক্ত উৎসের বীজ ব্যবহার না করা। এসব কারণে ধান কিংবা গম ক্ষেতে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

ব্লাস্ট রোগ হলে প্রথমে ধানের পাতা, পরে কা-, তারপরে পুরো ধানগাছ এবং অবশেষে ধানের শীষ আক্রান্ত হয়ে শীষ মরে গিয়ে ধান চিটা হয়ে যায়। অর্থাৎ ধান গাছে পোড়া রোগ দেখা দেয়। ধানের শীষের গোঁড়ায় আক্রান্ত হয় বিধায় একে নেক ব্লাস্ট বলা হয়ে থাকে। গতবছর (২০১৭) সালে দেশের হাওরসহ সারাদেশে আগাম বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে যেখানে বোরো উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছিল। এবারে (২০১৮) সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে কৃষকগণ আশায় বুক বেধে বাম্পার ফলনের প্রতীক্ষায় রত। ঠিক তখনই সারাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব কৃষকেদের নতুন করে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

দেখা গেছে দেশের ধানের ভা-ার খ্যাত হাওর এলাকা অর্থাৎ সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ছাড়াও রংপুর, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলের হাজারো একর জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে একটি জিনিস এখানে উল্লেখ্য, যেখানে ব্রিধান২৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে সেই ধানের জাতটিতেই কেবল ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ব্রিধান২৯সহ অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতগুলোতে ব্লাস্ট রোগ দেখা যায়নি। আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে যে, এবারে বোরো ধানে সেটি মহামারি আকারে এখনো দেখা দেয়নি বিধায় সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করে পূর্ব সতর্ককতা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

আমরা দেখেছি বোরোর আবাদ বাড়ার সাথে সাথে গমের আবাদ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তবে যেটুকু গমের আবাদ দেশে হচ্ছে সেটাকে যদি ব্লাস্ট রোগমুক্ত রাখা যায় তবে সেখানে একদিকে দেশের উৎপাদন বাড়বে এবং অন্যদিকে কৃষক লাভবান হবেন। ধানের ক্ষেত্রেও তাই একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্লাস্ট যেহেতু একটি ছত্রাক জাতীয় রোগ সেজন্য এটি হয়ে গেলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ কৃষকসহ কৃষি বিশেষজ্ঞ সকলে জানেন যে ছত্রাক জাতীয় রোগ মুক্তিতে যেকোন ছত্রাকনাশক নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এতে ধানের উৎপাদন খরচের উপর বাড়তি একটি বোঝা যুক্ত হয়। এমনিতেই মাড়াই মৌসুমে বোরো ধান মাড়াইয়ের জন্য উচ্চমূল্যের শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সেখানে এর উপর যে কোন উপসর্গ কৃষককুলকে দিশেহারা করে দেয়।

সেজন্য ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর’-এ ফর্মুলাতে গিয়ে কাজ করলে বেশি সফল হওয়া যাবে। রোগ যাতে না হয় সেুদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেজন্য প্রতিবছর একই জমিতে ধান আবাদ না করে শস্য পর্যায় এবং শস্য আবর্তন করা। বারবার একই জাতের ধান আবাদ না করা। ব্রিধান২৮ এখন একটু পুরানো হয়েছে, সেজন্য এতে অনেক রোগজীবাণু ভর করেছে। কাজেই কিছুদিন ধানের এ জাতটি আবাদ না করে অন্য লেটেস্ট উচফলনশীল জাতের আবাদ করা। আবাদের পূর্বে বীজ শোধন, জমির মাটি শোধন এবং আগের বছরের আবাদকৃত ধানের অবশিষ্টাংশ ক্ষেতের ভিতরেই আগুনে পুড়ে ধ্বংস করে দেওয়া।

ভালো মানের এবং সঠিক উৎসের বীজ ব্যবহার করা। তার পরেও জমিতে রোগের যেকোন ধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে নিকটস্থ কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করা। এভাবেই সম্মিলিতভাবে এবং সচেতনভাবে ধানের ব্লাস্ট রোগকে মোকাবেলা করা যেতে পারে। আগামী বছরের বোরো ধানের আবাদ হোক ব্লাস্টমুক্তভাবে- আসুন এ প্রত্যাশাই করি।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer