Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বৈরী আবহাওয়ায় চা উৎপাদনে ধস, ভঙ্গুর সড়ক যোগাযোগ

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বৈরী আবহাওয়ায় চা উৎপাদনে ধস, ভঙ্গুর সড়ক যোগাযোগ

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : বছরের শুরুতে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি চা বাগান সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা দেখা দেয়। লম্বা সময় পাড়ি দিয়ে কয়েক দফা ভারী বৃষ্টিপাত, গরমে মশা (হেলোপেটিস) ও লাল মাকড়সা (রেড স্পাইডার) এর আক্রমণে চা বাগান সমুহে উৎপাদনে ধস নামে।

মার্চ মাস থেকে এক নাগারে অতিবৃষ্টিজনিত কারণে চা গাছের কচি পাতায় পোকামাকড়ের আক্রমণ, মাটির উর্বরতা শক্তি বিনষ্ট, কলোনী সমুহে শ্রমিক বসত ঘর, টিলা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটে ক্ষতিসাধন ও উৎপাদনসহ নানাভাবে চা শিল্পের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করে।

সরেজমিন কমলগঞ্জের এনটিসি সহ কয়েকটি চা বাগান ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এপ্রিল ও মে মাস থেকে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে চায়ের টিলাভূমি ও রাস্তাঘাটে ধস নামছে। চায়ের টিলার উর্বর মাটি খসে পড়ছে। চা বাগানের ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিনষ্ট ও ভরাট হয়ে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়ে নতুন চারা বিনষ্ট হচ্ছে।

বাগানের ভেতরের রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ও কাদা জমে সমস্যা দেখা দেয়ায় সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চায়ের প্লাকিং ও উত্তোলনকৃত চা পাতা পরিবহনে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সাথে চা প্লান্টেশন এলাকায় উর্বর মাটি সরে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া এসব নানা কারণে সময় মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারায় বিভিন্ন স্থানে চা গাছে লাল মাকড়শা ও মশার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে ও চায়ের উৎপাদনেও কিছুটা প্রভাব পড়ছে।

চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল ও মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির ফলে চা বাগানের নার্সারী, লেবার লাইন, মাটির উর্বরতা ও চায়ের কোয়ালিটি বিনষ্টসহ কাজকর্মে ব্যাঘাত ও গাছগাছালি ভেঙ্গে চা শিল্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারনত বছরের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে চা উৎপাদন কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। এবছর খরার কবল দেখা দিলে চা বাগান সমুহে ইরিগেশন শুরু হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ২০১৬ সনে দেশে ১৬২ বছরের ইতিহাসে সর্ব্বোচ্ছ ৮৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। চলতি বছরে প্রথমেই খরার কবলে পড়লেও মার্চের কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের ফলে উৎপাদন ভালো হওয়ার আশাবাদী হয়ে উঠেন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। পরবর্তীতে অব্যাহতভাবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ভারী বর্ষন নানা সমস্যার সৃষ্টি করে।

শমশেরনগর ইউনিয়নের চা বাগান অঞ্চলের ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন, প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে বাগানে রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থা দেখা দিয়েছে। শ্রমিক কলোনীর জরাজীর্ন ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে অবর্ননীয় দুর্ভোগ ছাড়াও বৃষ্টির মধ্যে নারী শ্রমিকদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

পত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে চায়ের অনেক উচু টিলায় ধ্বস ও প্লাকিং এর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া পোকামাকড় দমনে চায়ের সেকশন সমুহে যথা সময়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) ধলই ভ্যালির ডিজিএম মোহাম্মদ শাহাজাহান ইত্তেফাককে বলেন, এবছর অতিবৃষ্টির সাথে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি চা বাগান সমুহে মারাত্মক অবস্থা দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির উর্বরতা বিনষ্ট, রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও নতুন চারাও নষ্ট হচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer