ঢাকা : বিমান চলাচলে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টির অপরাধে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিধানের প্রস্তাব করে বুধবার সংসদে বেসামরিক বিমান চলাচল বিল, ২০১৭ উত্থাপন করা হয়েছে।
`বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন।
বিলে বিদ্যমান সিভিল এভিয়েশন অধ্যাদেশ ১৯৬০ রহিত করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুগোপযোগী বিধান সন্নিবেশিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে লাইসেন্স এবং ক্ষেত্রমত, সার্টিফিকেট ব্যতিত কোন বিমান বন্দর বা বিমান ঘাঁটি পরিচালনা করা যাবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্টিফিকেটের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তপূরণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে।
বিলে কোন বেসামরিক বিমান নিবন্ধিত না হলে তা বাংলাদেশে পরিচালনা করা যাবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি এয়ারম্যান লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট ছাড়া কোন বিদেশী ব্যক্তি বা নাগরিক এয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলেও বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে এয়ারওর্দিনেস সার্টিফিকেট ছাড়া বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোন বেসামরিক বিমান পরিচালনা করা যাবে না।
বিলে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট ছাড়া কোন ব্যক্তি বাণিজ্যিক বিমান পরিবহন করতে পারবেন না। পাশাপাশি সার্টিফিকেট ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিচালনা সংক্রান্ত কোন প্রশিক্ষণ সংস্থা বা বিমান রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা পরিচালনা করা যাবে না।
বিলে পারমিট ছাড়া কোন বিদেশী এয়ার অপারেটর বাংলাদেশে কোন বাণিজ্যিক বিমান পরিবহন সেবা প্রদান করতে পারবে না বলে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশে কোন এয়ার অপারেটরের পক্ষ থেকে সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সাথে বিমান চলাচল চুক্তি থাকতে হবে।
বিলে লাইসেন্স, সার্টিফিকেট বা পারমিটের জন্য আবেদন এবং তা প্রদানের পদ্ধতি, লাইসেন্স সার্টিফিকেট, পারমিট স্থগিত বা বাতিল ও শিকাগো কনভেনশনভুক্ত রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স বা পারমিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা, বেসামরিক বিমান পরিবহনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এএনও, আদেশ ও নির্দেশ জারি, আকাশ পথে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন, সুরক্ষা তদারকি সংক্রান্ত চুক্তি, পরিদর্শন, আটক, ফ্লাইট প্রতিরোধ ও বিমান আটক, বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত, ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যুদ্ধাবস্থা ও জরুরি অবস্থা সরকারের বিশেষ ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে উল্লেখিত আইন বিধি, এএনওসহ অন্যান্য বিধান লংঘনে সুনির্দিষ্ট দন্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সার্টিফিকেট, নিবন্ধন সার্টিফিকেট, লাইসেন্স বা পারমিটের কোন শর্ত লংঘনে অনধিক ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। লাইসেন্স পারমিটসহ সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট জাল করলে অনধিক ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিমানে নেভিগেশনে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক যাবজ্জীব কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে এয়ার অপারেটর কর্তৃক রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করা, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক ৩ বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করা, তথ্য প্রদানে অস্বীকার করা সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক ১ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে এছাড়া বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির অপরাধে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিলে দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের যন্ত্রাংশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সরিয়ে ফেলা, বিমানে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন, দেশের আকাশ সীমা লংঘন, বিপজ্জনক পদ্ধতিতে বিমান পরিচালনা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট দন্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে এছাড়া অপরাধ সংঘটনের সহায়তাকারীরও সুনির্দিষ্ট দন্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে এসব অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ প্রযোজ্য করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে জাতীয় রেকর্ডিং সিস্টেম, ক্ষমতা অর্পণ, অপারেটর, সেবা প্রদানকারী সংস্থার দায়িত্ব, শিকাগো কনভেনশনের মানদন্ডের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এএনও সম্পর্কে আইসিএওকে অবহিতকরণ, পেটেন্টের ব্যবহার, বিধিমালার প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বিলটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
এর আগে বিলটি উত্থাপনের পর্যায়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম আপত্তি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।