Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেতন নেই চার বছর, বাঁচার তাগিদে দিনমজুরিতে শিক্ষকরা

আব্দুর রশীদ তারেক, নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০৫:৩০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রিন্ট:

বেতন নেই চার বছর, বাঁচার তাগিদে দিনমজুরিতে শিক্ষকরা

নওগাঁ : নওগাঁর নিয়ামতপুরের ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষক দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বাঁচার তাগিদে অনেক শিক্ষক দিনমজুরিও করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে সকল বেসরকারি রেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ঘোষণা করলেও সারা দেশের ৩০টি বিদ্যালয় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত হয়। এর মধ্যে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় ৮টি।

বিদ্যালয় গুলো হচ্ছে আক্কেলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈরকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধানসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়পুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরশৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সন্তোষপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উষ্টিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পৈলানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত ১ জানুয়ারি ২০১৩ইং তারিখে সকল বেসরকারি রেজিষ্ট্রার্ড বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ঘোষণা করলেও ওই সমস্ত বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত হয়। ওই সমস্ত বিদ্যালয়ের ৩২জন শিক্ষক দীর্ঘ ৪৫ মাস থেকে বেতন ভাতা বেতনসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় ওই সমস্ত শিক্ষক ও তাদের পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তারা খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। কোন কোন শিক্ষক দিন মজুরের কাজও করছেন। অভিযোগ রয়েছে কিছু শিক্ষক ও তৎকালীন নিয়ামতপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার দীপক কুমার গোস্বামীর দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ বঞ্চিত হয়েছে।

ধানসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ৮টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেই সময়ে নিয়ামতপুরে কর্মরত উপজেলা শিক্ষা অফিসার দীপক কুমার গোস্বামীকে উৎকোচ না দেওয়ার কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের কাগজপত্র সঠিক সময়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেন নাই। আমাদের কাগজের বিভিন্ন ক্রটি, জমির খারিজ সংক্রান্ত কাগজপত্রে ত্র“টি ইত্যাদি কারন দেখিয়ে কালক্ষেপন করেন’।

তিনি বলেন, ‘ক্যাটাগরির মধ্যে না পড়েও শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ঝাজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশান না হওয়া সত্ত্বেও জাতীয়করণের তালিকায় এ বিদ্যালয়টিকে “এ” ক্যাটাগরিতে দিয়েছিল। কিন্তু জেলা অফিস তদন্ত করে সেই বিদ্যালয়ের নাম বাতিল করেন’।

উষ্টিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজাহার আলী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৪৫ মাস মাসে ৩ বছর ৯মাস যাবত কোন বেতন-ভাতা পাই না। আমাদের সংসার কিভাবে চলে? আমাদের সন্তানদের কিভাবে লেখাপড়া করাবো? আমাদের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অভাবে তাড়নায় কোন কোন শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি দিন মজুরির কাজও করছেন। অথচ সরকারি শিক্ষকসহ প্রত্যেকের বেতন সরকার দ্বিগুণ করে দিয়েছে। শুধু মাত্র দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসার দীপক কুমার গোস্বামী ও কিছু দালালদের কারণে আমরা ৩২টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছি’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহার আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হলাম। স্ত্রী সন্তানদের চাওয়া পাওয়া পুরণ না করতে পেরে চোরের মত সংসার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নিরবে চোখের পানি ফেলছি’।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এবিষয়ে বলেন, ওই সময় আমি চাপাইনবাবগঞ্জে ছিলাম। গত ১৭ আগষ্ট ৮টি বিদ্যালয়কে গেজেটে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন বিদ্যালয়গুলোর শুধুমাত্র ৩২জন শিক্ষক গেজেটভুক্ত হলে তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে।

তৎকালীন নিয়ামতপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বর্তমানে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় কর্মরত দীপক কুমার গোস্বামী তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘জাতীয়করণ ৩ ধাপে হচ্ছে। ১ম ও ২য় দাপ শেষ হয়েছে, ৩য় ধাপ চলমান রয়েছে।

এ কাজে কোন প্রকার ঘূষ বা দূর্নীতির প্রশ্নই আসেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউএনও, এসিল্যান্ড,পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহ:শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ে একটি বাছাই কমিটি ছিল। তাঁদের সমন্বয়ে সরকারী বিধি মোতাবেক সকল কর্ম সমাধা করা হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer