Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব ঐতিহ্যে অসাম্প্রদায়িক মঙ্গল শোভাযাত্রা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১২ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বিশ্ব ঐতিহ্যে অসাম্প্রদায়িক মঙ্গল শোভাযাত্রা

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে আন্তর্জাতিকভাবে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই গৌরবের ও আত্মসম্মানের।

প্রতিবছর বঙ্গাব্দের শুরতে পহেলা বৈশাখ কিংবা ১৪ এপ্রিল সগৌরবে পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ। প্রতিবছর দিবসটির আয়োজনে মঙ্গলের আহবানে অশুভ শক্তির বিনাশে একটি কে থিম ঠিক করা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি এ উপলক্ষে বের করা বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ হিসেবে অভিহিত করে একে সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় ৩০ নভেম্বও ২০১৬ তারিখে বুধবার ইউনেস্কার ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ বিষয়ক আন্তঃসরকার কমিটির ১১তম অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে জরা-গ্লানি মুছে দিয়ে প্রাণে প্রাণে, মঙ্গল বার্তা আবাহণের অন্যতম প্রতীক মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশ্বক স্বীকৃতি মিলেছে। একটি জাতির ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ধরনের একটি সামাজিক উৎসব উদযাপন প্রেরণাদায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতির খবওে আমরা উচ্ছ্বসিত।

এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিশ্ব ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত হল। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের লড়াইয়ে সাহস ও শক্তির এবং সত্য ও ন্যায়কে সমর্থন জানানোর নিদর্শন।

বর্ণ, মত, ধর্ম, লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে জনগণকে একতাবদ্ধ করার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও এর প্রতি সহমর্মিতারও প্রতীক। অশুভ শক্তিতে তাড়িয়ে প্রগতিশীলতাকে বিকাশের সুযোগ দেওয়াই এ শোভাযাত্রার লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউনেস্কো।

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সফল প্রয়াসের জন্য বর্ততমান সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ কাজটি মোটেও সহজ কোন বিষয় ছিল না।

দেড়বছর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিজে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে এ প্রস্তাবটি করেছিলেন। পরে সেখানকার বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শহীদুল ইসলাম তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রসেস করেন।

তার আগে এ বিষয়ে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, বাংলা একাডেমি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। চারুকলার চিত্রশিল্পী বিপুল শাহ ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন।

রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউমিনিটিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য আদ্দিস আবাবার এ সম্মেলনে দেন দরবার ও বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদীয় ডিন অধ্যাপক নেসার হোসেন। এর আগে এ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বধীন সরকারের আমলেই বিশ্ব ঐতিহ্যের সবগুলো বিষয় স্থান পেয়েছিল।

তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯৯৯ সালে আমাদের গৌরবের ভাষা ও শহীদ দিবসকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এর ফলে কূটনৈতিক সফলতার আরো একটি পালক সংযোজিত হলো। ইউনেস্কোর দেওয়া এ স্বীকৃতিকে বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় সাংস্কৃতিক কূটনীতির ফসল বলা যায়।

এতে ধর্ম নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো জোরালো হবে। ১৯৮৯ সালে উন্নততর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বাংলা বছরের প্রথমাদিন মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষগণ। আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি অন্যায় ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হওয়ার নতুন এক অনুপ্রেরণা।

এর আগে ২০০৮ সালে বাউল সঙ্গীত ও ২০১৩ সালে জামদানির কারুশিল্পে ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটিজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন,প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার ও বাগেরহাটের ষাটগম্ভুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে শুরু হলেও এটি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালির ঈদ কিংবা পূজা-পার্বণের মতোই গুরুত্ব পেয়েছে এ মঙ্গল শোভাযাত্র।

এটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় আবহমান বাংলার রূপবৈচিত্র ও চিরায়ত বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেজন্য দিবসের গুরুত্ব বিচেনায় ঈদ ও পূজার মতোই এ উৎসবকে সরকারি স্বীকৃতি হিসেবে উৎসব বোনাস চালু করা হয়েছে। এখন জাতিসংঘের ইউনেস্কো দিল একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সেই ঐতিহ্যের পথ ধরেই এবার প্রথমবারের মত পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ ১৪২৪ এর মঙ্গল শোভাযাত্রা। 


লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer