ছবি: বহুমাত্রিক.কম
বগুড়া : বগুড়া শাজাহানপুরের আড়িয়া বাজারে আগের মত এখন আর বাঁশের বাজার বসে না। নেই আগের মত বাঁশের আমদানি। নেই কৃষক, বাঁশ ব্যবসায়ী পাইকাড়দের আনাগোনা ও জনসমাগম। নেই চাহিদা মত বাঁশ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্রেতা বিক্রেতাও। ফলে প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাজার এখন বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে এই বাঁশের বাজারটি শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, সারাদেশের বাঁশের চাহিদা পুরণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছে। এখানে সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহঃবার সকালে বাঁশের বাজার বসে। ঐদিন স্থানীয় কৃষক তাদের বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ বাজারে নিয়ে বিক্রি করে।
বিশাল এই বাঁশের বাজারে বগুড়া জেলা ও আশেপাশের বাঁশ শিল্পের লোকজন এখানে এসে বাঁশ ক্রয় করতো। আবার গ্রামের সাধারন মানুষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাঁশ ক্রয় করে ঘড়বাড়ী নির্মান ও মেরামত করতো। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের কাচা বাড়ীঘড় হওয়ায় এবং কৃষি কাজ ও ফসল উৎপাদনে বাঁশের প্রচুর চাহিদা থাকায় এই বাঁশের বাজারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
শুধু তাই নয়, সারাদেশে বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশনে নির্মান উপকরণ হিসেবে বাঁশের প্রচুর চাহিদা থাকায় এখানে রাজধানী ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদী, টাংগাইল ও গাজীপুর সহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাড়রা এখানে বাঁশ ক্রয় করতে আসতো। সপ্তাহে প্রায় অর্ধশত ট্রাকে বাঁশ নিয়ে যেত ঐসব এলাকায়। আর দীর্ঘদিনের এই বাঁশের বাজার হওয়ায় এর প্রয়োজনীয়তা ও ঐতিহ্য লাভ করে অনেক আগে থেকেই। এছাড়া এই বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠে বন্দর, বিভিন্ন দোকান-পাট, হোটেল। সৃষ্টি হয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও বিভিন্ন আয় রোজগারের পথ।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩ মাস পুর্বে শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী (ভুমি) কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বাজারের সকল বাঁশ আটক করে নিয়ে যায় এবং পরবতীতে বাঁশ ক্রয় বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। ফলে সেখানে আর আগের মত বাঁশের বাজার বসছেনা।
উপজেলার বেতগাড়ী গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের পুত্র বাঁশ ব্যবসায়ী আনোয়ার হাসেন (৫২), নুর হোসেনরে পুত্র খলিলুর রহমান(৫০) জানান, তারা ৩৫০০ টাকা কর্জ করে এবং তা দিয়ে বাঁশ ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করতে এসে ছিলেন। কিন্তু সব বাঁশ আটক করে নিয়ে যাওয়ায় তাদের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মানিকদীপা গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে বৃদ্ধ জিলহক (৫৫) জানান, তার ৮০ টি বাঁশ নিয়ে গেছে। যার মুল্য প্রায় ১০ হাজার টাকা।
বগুড়া ফুলবাড়ী এলাকার আয়াত উল্লাহর ছেলে বাঁশ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৪৫) জানান, তার ৭৭ টি বাঁশ আটক করা হয়েছে। যার মুল্য প্রায় ১১ হাজার টাকা। এমনই নানা অভিযোগ বাঁশ ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। তারা জানিয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাশ বাজার থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এলাকার কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা বাজারে বাঁশ সরবরাহ ও ক্রয় বিক্রয় করতে ভয় পাচ্ছে।
এদিকে বাঁশের বাজারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা সহকারি (ভুমি) কমিশনার এসএম জাকির হোসেন বলেন, হাট-বাজার নীতিমালা ১৯৫৯ এর বিধান অনুযায়ী ভুমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতীত হাট-বাজার সৃষ্টি করা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া এই বাজারের জেলা কালেক্টরেট অফিসের কোন অনুমোদন নেই। বিধায় তা বন্ধ করা হয়েছে।
তবে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ও জনদুর্ভোগ লাঘবে বাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি স্থানীয়দের।
বহুমাত্রিক.কম