ঢাকা : নারী কর্মীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং তাদের বেতন বৈষম্য দূর করার ফলে জিডিপিসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান বেড়েছে।
‘শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে নারী কর্মীদের বেতন-ভাতার বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান করা হয়েছে গত এদ দশকে।’ এর ফলে জিডিপিতে তাদের অবদানও বেড়েছে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি বাসসকে বলেন, ‘শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে পোশাক শিল্পে কর্মরত সকল নারী কর্মীদের বেতন-ভাতার বৈষম্য দূর করা হয়েছে। এছাড়া সরকার নারীদের অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণসহ নারীদের জন্য আলাদা বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলার নারী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে দুটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা গত বছর থেকে প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে দু’হাজার নারী কর্মীর জন্য দুটি ডরমেটরি করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিকালে পোশাক কর্মীদের জন্য ২৫ হাজার টাকার একটি বিশেষ ভাতাও চালু করা হয়েছে। এছাড়া রপ্তানীমুখি পোশাক কর্মী এবং গৃহকর্মীদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বিশেষ আর্থিক সহায়তার দেয়া হয়ে থাকে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
বাসস
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিলসের কর্মসূচি কর্মকর্তা কোহিনূর মাহমুদ বাসসকে বলেন, ২০১৩ সালের বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী দেশে ৫ কোটি ৮১ লাখ কর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে এক কোট ৬৮ লাখ নারী কর্মী। এরমধ্যে পোশাক শিল্পেই কর্মরত আছেন প্রায় ৫০ লাখ নারী কর্মী ।
লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১০-এর তথ্যমতে, ‘দেশে মোট ৫ কোটি ৪১ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ। সরকারিভাবে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশের বেশি। নারীরা যে গৃহস্থালি কর্মকান্ড করেন, তার অর্থমূল্য আনুমানিক আড়াই লাখ কোটি টাকা। সে হিসাবে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশ।’
অর্থনীতিতে নারীদের গুরুত্ব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে কোহিনুর আরো বলেন, দেশে বর্তমানে বিশ লাখ গৃহকর্মী রয়েছেন। এদের অধিকাংশই নারী যাদের জন্য এখনো বেতন-ভাতা নিয়ম চালু হয়নি। অধিকাংশ গৃহকর্মীই চুক্তি ভিক্তিক কাজে নিয়োজিত থাকে। যদিও গৃহকর্মীদের জন্য একটি আলাদা নীতিমালা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নীতিমালা অনুসরণ করা এবং তাদেরকে শ্রম আইনের আওতায় আনার জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি নারী কর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। এই সংখ্যা ৬২ হাজার ৯শ’১৬। এ ছাড়া ২০ হাজার ৭৬৩ জন জর্ডানে, ওমান ১১ হাজার ৮৭৫, কাতার ৫ হাজার ৭৩, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪ হাজার ৭৪৫ এবং লেবাননে ২ হাজার ৩১৬ জন নারী কর্মী গেছেন। এখন আর নারী কর্মীদের বিদেশে যেতে কোনো খরচ নেই। বিদেশের নিয়োগকর্তারাই তাঁদের খরচ দিয়ে দেন।
১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান শুরু। ১৯৯১ সালে মাত্র ২ হাজার ১৮৯ জন নারী বিদেশে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার নারী কর্মী বিদেশ যায়। আর ২০১৫ সালে গেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জন নারী কর্মী।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭শ’৫৬ জন নারী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। মূলত সৌদি আরব, আরব আমিরাত, লেবানন ও জর্ডানেই গেছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশে নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি প্রসার হচ্ছে।
এদেশের বিশাল নারী জনগোষ্ঠীকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। তাই অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারীদের বিদেশে চাকরি সহজ করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে ১৬০ দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
এর মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২১৩ জন নারী কর্মী। পুরুষদের তুলনায় বর্তমানে নারীদের বিদেশে চাকুরির হার অনেক বেড়েছে।