Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ-শ্রীপুর এখন ‘দূর্ভোগের জনপদ’

এমএ মালেক, শ্রীপুর

প্রকাশিত: ০৩:০১, ২০ জুলাই ২০১৭

আপডেট: ০৩:৪২, ২০ জুলাই ২০১৭

প্রিন্ট:

বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ-শ্রীপুর এখন ‘দূর্ভোগের জনপদ’

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর : সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল, নিয়মিত সংস্কার না হওয়া, নির্মাণ কাজে নিন্মমানের কাঁচামাল ব্যবহার ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে ভেঙ্গে পড়ছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

দূরাবস্থার মধ্যে এসব সড়কে যাতায়াত করতে এলাকার জনসাধারণকে দূর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্তমানে সড়কগুলো চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কগুলোতে যানবাহনে চলাচল তো দূরে থাক, পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রতিটি সড়কই এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

এদিকে সড়কগুলোতে বিভিন্ন সময় যানবাহন আটকে পড়া ও ভারী যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে শিল্প কারখানার মালিকরা। এতে কারখানার উৎপাদন বিঘ্নের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ও শ্রীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলায় ৫৭ কিলোমিটার রাস্তা সড়ক ও জনপথ বিভাগ দেখাশোনা করেন। এই ৫৭ কিলোমিটার সড়ক ভাঙ্গা-চোরা খানাখন্দে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে শ্রীপুর পৌরসভার অধীনে ২২কিলোমিটার কার্পেটিং, ৯০কিলোমিটার এইচ.বি.বি সলিং সড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীন ৩৬৯ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা ও ১ হাজার ৭৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাও অধিকাংশই ভেঙ্গেচুরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা সদরের সাথে ৮টি ইউনিয়নের যোগাযোগ স্থাপনকারী প্রধান প্রধান সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। উপজেলার অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ শ্রীপুর-বরমী সড়ক। শ্রীপুর থানাসহ পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের পাগলা ও গফরগাঁও উপজেলাসহ হাজার হাজার জনসাধারণ সড়কটি দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর যাবৎ নানা ধরনের জটিলতায় এসড়কটির প্রায় ৭কিলোমিটার অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে ওই সড়কটিতে কয়েক মাস যাবৎ যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

বরমী ইউনিয়নের সাথে বিকল্প যোগাযোগ স্থাপনকারী অন্যান্য সড়কও বেহাল থাকায় চলাচলকারী যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। সড়কগুলোতে বড় বড় যানবাহন চলাচল না করায় এবং রাস্তা খারাপের অজুহাতে সিএনজি অটোরিক্সায় যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়ায় চলাচল করতে হচ্ছে। এদিকে, এই সড়কের উন্নয়নে ৭১কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ দরপত্র আহ্বান করেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ, যা আগামী ডিসেম্বর মাস নাগাদ কাজ শুরু হবে।

শ্রীপুর পৌর এলাকার মাষ্টারবাড়ী-শ্রীপুর সড়কের ছয় কিলোমিটার অংশ গত প্রায় পাঁচ বছর যাবত উন্নয়ন না হওয়ায় খানা খন্দসহ বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসড়কটির উন্নয়নের জন্য গত ১৫ই জুন পৌরবাসীরা উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করে।

এ ছাড়াও শ্রীপুর পৌরসভার অধীন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক হতে আনসার রোড-বেলতলী সড়ক, আনসার রোড-শ্রীপুর সড়ক, শ্রীপুর সদর থেকে লোহাগাছ ফালু মার্কেট সড়ক, মাওনা চৌরাস্তা-বারতোপা সড়ক, পিয়ার আলী কলেজ-কড়ইতলা, আসপাডা মোড়-শ্রীপুর সড়ক, আনসার রোড-ফখরুউদ্দিন টেক্সটাইল সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী শ্রীপুর ঘুন্টিঘর-সাতখামাইর-কাওরাইদ সড়ক, মাওনা পল্লীবিদ্যুৎ মোড়-বরমী সড়ক, নয়নপুর-বরমী সড়ক, মাওনা-ফুলবাড়ীয়া সড়ক, সলিংমোড়-গাজীপুর বাজার, নয়নপুর-চকপাড়া মেডিকেল মোড়, জৈনা বাজার-শৈলাট, শ্রীপুর-রাজাবাড়ী, শ্রীপুর-কাপাসিয়া, বরামা-সিংহশ্রী, বরমী-ত্রিমোহনী, এমসি বাজার-শিশু পল্লীসড়ক সহ প্রায় অর্ধশতাধিক সংযোগ সড়ক বেহাল দশায় পড়েছে।

খানাখন্দের ফলে উপজেলা সদরের সাথে সংযোগ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ভারী ও মাঝারী যানবাহন গ্রামীণ সড়কে চলাচল করায় ওই সড়কগুলোও ক্ষতি হচ্ছে। ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সড়কের খানাখন্দ ভরাটের নামে বিভিন্ন সময় সরকারী অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। যার সুফল সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না।

বরমী বাজারের ব্যবসায়ী গণেশ ভান্ডারের মালিক রিপন শাহা বলেন, দুই বছর যাবত নানা অজুহাতে বরমীর সড়কটি অকেজো থাকায় আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। পণ্য আনা নেয়ায় অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করতে পারছি না।

সাতখামাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিব হোসেন বলেন, আমি সোনাকর থেকে প্রতিদিন বাস যোগে ঘুন্টিঘর পর্যন্ত আসতাম। এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। এতে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারি না।

ত্রিমোহনী এলাকার শফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, বড় ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হত দুই বছর যাবৎ বরমী এলাকায় সিএনজিতে যাতায়াত করতে হয়। ৮ কিলোমিটার রাস্তায় ৮০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে।

বরমী বাজারের খলিল এন্টারপ্রাইজের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আমার ১০টি ড্রাম্প ট্রাকের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু সরবরাহ করতাম। রাস্তার দুরবস্থার জন্য এখন ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কিস্তিতে কেনা ১০ট্রাকের কিস্তি দিতে পারছি না।

বৈরাগীর চালা গ্রামের আনোয়ার হোসে বলেন, মাষ্টারবাড়ী-শ্রীপুর সড়কটির আশপাশে কয়েকটি বড় বড় শিল্প কারখানার ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় আমরা কিছুদিন আগে মানববন্ধন করে রাস্তাটির সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।

গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, শ্রীপুরের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় একমাত্র সিএনজি অটোরিক্সায় চলাচলে জীবন দুর্বিষহ মনে হচ্ছে। সময়মতো কোন কাজই যাচ্ছে না।

মাওনা চৌরাস্তা ওষুধ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাওনা চৌরাস্তা-মাওনা বাজার সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় জলাবদ্ধতায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম দুরাবস্থায় পড়েছে চলাচলকারী লোকজন। আশপাশের ব্যবসায়ীসহ কয়েকটি হাসপাতালের রোগী আনা নেয়ার কাজে বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

তামিশনা সোয়েটার কারখানার উৎপাদন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তার খারাপ থাকায় কারখানার পরিবহন চলাচলে বিঘ্নের সৃষ্টি হওয়ায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।

শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মোল্ল্যা বলেন, নতুন অর্থবছরে বেহাল সড়কগুলো সংস্কারের জন্য তালিকা তৈরীর কাজ চলছে, দ্রুত সময়ে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, বিভিন্ন চলাচল অনুপযোগী সড়ক সংস্কারের জন্য ৪০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এ সাদ্দাম হোসেন সড়কগুলো অবস্থা বেহাল থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, যেহেতু শ্রীপুর উপজেলা শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ। সড়কগুলোতে ভারী যানবাহন চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক ও জনপথের অধীনগুলো সংস্কারের জন্য ২০৭কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়েছে শিগগির কাজ শুরু হবে।

প্রতিবেদক এম এ মালেক

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer