Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

যা ভাবতে হবে আমাদের

বিপন্ন পরিবেশ বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

ড. আ ন ম আমিনুর রহমান, জ্যেষ্ঠ সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২৬ মে ২০১৪

আপডেট: ১২:৫৪, ২৯ মে ২০১৪

প্রিন্ট:

বিপন্ন পরিবেশ বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

ঢাকা: প্রাণীকুল জীবজগত তথা প্রকৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবনধারনের জন্যই প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। প্রাকৃতিক ভারসাম্য মানুষ তথা সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য। আর এ ভারসাম্য বজায় রাখতে সঠিক সংখ্যায় সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেঁচে থাকাটা অতন্ত জরুরি।

জৈব পরিবেশের পাশাপাশি ভৌত পরিবেশও প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহের বেঁচে থাকার উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। তাই প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তি প্রকৃতিকে পঙ্গু করে দেয়। তবে এই বিলুপ্তি প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে ঘটলে তাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যে তেমন কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এতে যখন মানুষরে হাত পড়ে তখনই তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। Bengal-Tiger

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় জীববৈচিত্র্যের অধিকারী একটি দেশ ছিল। নির্দিষ্ট বনভূমি ছাড়াও এদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ছিল ছোট-বড় বন-জঙ্গল বা ঝোপঝাড়। কিন্তু গত কয়েক দশকে দ্রুত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ জীবনধারণের নানা রকম প্রয়োজন বেড়েছে। আর এসব বর্ধিত প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে গেছে বিপুল জীববৈচিত্র্যের অধিকারী এদেশের গ্রামীণ বন-জঙ্গল। ফলে এসব গ্রামীণ বন-জঙ্গলের প্রাণী ও পাখিরা ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছে তাদের আবাস ও প্রজননস্থল। তাই এদের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও দেশের উপকূল অঞ্চলে গৃহায়ন, চিংড়ি চাষের নামে কৃষিজমির অপব্যবহার, ভূমিক্ষয়, পলিপড়া প্রভৃতি কারণে জলজ পরিবেশের ওপরে যে প্রভাব পড়ছে তাতে জীবকুলের জন্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

Gharialআমরা মানুষরা প্রতিনিয়তই প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রাণীকুলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যা বা ধ্বংস করে চলেছি। এদের আবাসস্থল, খাদ্যের উৎস, বেঁচে থাকার মৌলিক উপাদানগুলো ধ্বংস করে পরোক্ষভাবে এদেরকেই ধ্বংস করছি। আর মাংসের লোভে, শখের বশে, লোকজ ওষুধ তৈরির জন্য, শৌর্যবীর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য শিকারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ধ্বংস করছি প্রাণীকূলকে। শিকার ও অন্যান্য কারণে ইতোমধ্যেই ডোরাকাটা হায়েনা, নেকড়ে, মালয়ান সুরভালুক, গন্ডার, গাউর, বান্টিং, বুনো মোষ, কৃষ্ণসার, নীলগাই, বারসিঙ্গা হরিণ, বামন শুকর, ময়ূর, গোলাপিমাথা হাঁস ও বেঙ্গল ফ্লোরিকান এদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। শকুন, দেওহাঁস, নাফতা হাঁস, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, বনছাগল, ঘুরাল, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণসহ আরও বেশকিছু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তির দোরগোড়ার এসে পৌঁছেছে। চোরা শিকারীদের বিষাক্ত ছোবলে, স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানিতে বহু প্রাণী আজ  IUCN-এর লাল বইয়ে (Red Data Book) নাম লেখানোর অপেক্ষায়।

এদেশে প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। একসময় আমাদের গ্রামীণ বন-জঙ্গলগুলো নানা প্রজাতির বন্যজন্তুতে ছিল সম্মৃদ্ধ। কিন্তু ব্যাপকহারে বন-জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার কারণে সেখানে বসবাসকারী প্রাণী, যেমন- খাটাশ, বনবিড়াল, শেয়াল, খরগোশ, সজারু প্রভৃতির সংখ্যা বর্তমানে মারাতèকভাবে কমে গেছে। কিছুদিন আগেও প্রতিটি গ্রামেই প্রচুর বড় বড় গাছ বা খোড়লসম্পন্ন প্রাচীন বৃক্ষ দেখা যেত। এখন সে রকম উঁচু বা প্রাচীন বৃক্ষ নেই বললেই চলে। এসব বৃক্ষে শকুন, চিল, পেঁচা ইত্যাদি প্রজাতির পাখিরা বাসা বানাত। এখন বৃক্ষ স্বল্পতার জন্য বাসা বানাতে ও প্রজনন করতে না পারার কারণে এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। আগে গ্রামাঞ্চলে বট, পাকুড়, আমড়া, নিম, বাজনা, উড়ি-আম ও আরও অনেক প্রজাতির গাছ দেখা যেত। কিন্তু আজকাল অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হওয়ায় মানুষ এসব গাছপালা আর লাগায় না। অথচ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর জীবনধারনের জন্য এসব গাছ বেশি উপযোগি। একমাত্র বটগাছের ফলই বহু প্রজাতির পাখির প্রধান খাদ্য। এসব গাছপালা কমে যাওয়ায় অনেক প্রজাতির পাখি, যেমন- হরিয়াল, ঘুঘু, কোকিল ইত্যাদির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

একসময় এদেশে প্রচুর পতিত জলাভূমি ছিল যেখানে বা তার আশপাশের ঝোপে নানা প্রজাতির পাখি, যেমন- ডাহুক, কোড়া, জলমুরগি, জলময়ূর, কালিম, কালকুট, ডুবুরি প্রভৃতি পাখি বাসা বানাত। এখন পতিত জলাভূমি নেই বললেই চলে। সবই চাষযোগ্য ভূমি হয়ে গেছে। ফলে এরা মানুষের উপস্থিতি এড়িয়ে বাসা বানানোর মতো জায়গা খুঁজে পায় না। স্বাভাবিকভাবেই এদের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে ও সংখ্যায় কমে যাচ্ছে। কৃষিকাজ ও ফসলের ধরন ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে।Shokun

আগে প্রচুর লম্বাগাছের ধানচাষ হতো যেগুলো পাকলে মাটিতে নুয়ে পড়তো। এখন সেখানে এসেছে খাটো জাতের ইরি ধান। শীতকালে শুকনো মাটিতে রবিশস্যের ব্যাপক চাষাবাদের প্রচলন ছিল। এখন সেখানে সেচ দিয়ে ব্যাপকভাবে ইরি ধানের চাষ করা হয়। এই পরিবর্তিত পরিবেশও অনেক পাখি ও প্রাণীর বংশবৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আগে ধানক্ষেতে প্রচুর সংখ্যায় বিভিন্ন প্রজাতির কোয়েল বা বটের পাখি দেখা যেত। এখন বেশিরভাগ এলাকায় কোয়েল একেবারেই দেখা যায় না। কিছু কিছু এলাকায় কয়েক প্রজাতির কোয়েল থাকলেও আগের মতো আর প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায় না এবং এরা হুমকীর সম্মুখীন।

বর্তমানে ফসলের জমিতে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা অতীতে ছিল না। এসব রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে বহু পাখি ও প্রাণী মারা যাচ্ছে কিংবা তাদের প্রজনন ক্ষমতা মারাতèকভাবে কমে যাচ্ছে। যেমন- চিল ও শকুনজাতীয় পাখি। এছাড়াও এসব কীটনাশকের কারণে অনেক প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যাও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

আগের তুলনায় আমাদের নদীনালা ও খালবিলে এখন অনেক বেশি সংখ্যায় ট্রলার বা যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। একদিকে এতে নদীনালার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে এসব নদীনালায় বা তীরবর্তী এলাকায় যেসব পাখি বা প্রাণী বসবাস করত তারাও আর আগের মতো মুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। ফলে এসব পাখি বা প্রাণীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

পাখি ও প্রাণীদের জন্য নানাভাবে খাদ্যসংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বন-জঙ্গল ও গাছপালা কমে যাওয়া তো আছেই, পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে ক্রমেই এসব প্রাণী ও পাখিদের বেশি করে খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। যেমন- নদী-নালা ও খালবিলে মানুষের মাছ আহরণের পর কি পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ থাকে যাতে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যভুক পাখি ও প্রাণীরা টিকে থাকতে পারে? গাছের ফল বা মাঠের ফসল যাতে বাদুর, কাঠবিড়ালি বা পাখিরা খেতে না পারে সেজন্য কত রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া পাখিরা সাধারণত পাকা ফলই খেয়ে থাকে, কিন্তু এখন গাছে ফল পাকবার সুযোগ কোথায়? আর পাকলেও মানুষের খাওয়ার পর পাখিদের ভাগ্যে কি আদৌ কিছু জোটে?

আবার অনেক প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা হ্রাসের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষের জীবনধারণের সঙ্গে এদের সরাসরি প্রতিযোগিতা। যেমন- খাটাশ, বনবিড়াল, শেয়াল ইত্যাদি গৃহস্থের মুরগি নিয়ে যায় বা আখক্ষেতের ক্ষতি করে। কাজই সুযোগ পেলেই মানুষ এদের মেরে ফেলে। আবার সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকায় খাদ্য না পেয়ে কোন বাঘ যদি লোকালয়ে চলে আসে তাকে নিশ্চয়ই স্থানীয় লোকজন সমাদর করবে না। বরং পিটিয়ে বা গুলি করে মেরে ফেলবে। বাঘের কথা বাদই দিলাম বাঘডাস, বনবিড়াল বা মেছোবাঘের মতো সাধারণ প্রাণীরাও মানুষের হাত থেকে রক্ষা পায় না। কাজেই এদের সংখ্যাও দ্রুত গতিতে কমে যাচ্ছে।

প্রাণী ও পাখি বিলুপ্তির অন্যতম ও শেষ কারণটি হলো শিকার। প্রকৃতপক্ষে শিকার মানুষের একটা সহজাত বৈশিষ্ট্য, অন্তত এদেশের মানুষের ক্ষেত্রে। কাজেই মানুষ শিকার করে। আদিম যুগেও করত; হয়তো ভবিষ্যতেও করবে। তবে আদিম যুগে শিকার করতো মৌলিক প্রয়োজনে, বেঁচে থাকার তাগিদে। মাংসাশী প্রাণীরা যেমন অন্যান্য প্রাণীদের শিকার করে তাদের মাংসে নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করে, আদিম যুগের শিকার ছিল অনেকটা সে রকম। তবে মানুষ যত সভ্য হতে থাকল, শিকারের ওপর নির্ভরশীলতা ততই কমতে লাগল। কিন্তু খাদ্যের জন্য প্রাণী শিকার কমে গেলেও শিকার মোটেও বন্ধ হলো না। বরং তা প্রকৃতির সাথে তারতম্য বজায় রেখেই চলেছিল, যা প্রতিবেশের (Ecosystem) একটি অঙ্গে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু যখন থেকে স্পোর্টস বা বিনোদনের জন্য শিকার শুরু হলো তখনই তা প্রাণীদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিল। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে মানুষ নির্বিবাদে বন্যপ্রাণী হত্যা করায় অচিরেই অনেক প্রাণী পৃথিবীকে বিদায় জানানোর দোড়গোড়ায় এসে পৌঁছুলো।

Goralআমাদের এ উপমহাদেশে মোঘল আমলে শিকার ছিল মোঘল সম্রাট, তাদের সভাষদ ও রাজরাজাদের অভিজাত্যের প্রতীক। তবে শিকার তখন শুধু এ সকল অভিজাত পরিবারের ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের আগমনে, বন্দুকের ঝনঝনানিতে প্রাণীদের প্রকৃত দুর্দশা শুরু হয়। তখন শিকার আর শুধু রাজরাজাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, তা আরো অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। একঘেঁয়ে জীবনযাপন করতে করতে উপমহাদেশের ব্রিটিশরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই এ ধরনের জীবনে বৈচিত্র্য আনতে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্ট ও আর্মি অফিসাররা শিকারকে বেছে নিল এবং এটা তাদের মধ্যে সে সময় বেশ ব্যাপকভাবেই সাড়া জাগাতো। আর এ ব্যাপকতার কারণেই শিকার এক সময় গলফ খেলার মতোই মর্যাদাসম্পন্ন খেলায় পরিণত হয়ে গেল। আর এর বলি হলো বাঘ, চিতাবাঘ, গণ্ডারসহ আরও অনেক প্রাণী।

শুধু পশুপাখির কথাই কেন বলি, এদের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক উদ্ভিদ প্রজাতিও। বট, পাকুড়, কদম, ছাতিম, পিপুল, হিজল, মাদারের মতো গাছপালা একসময় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এসব গাছপালা কেউই এখন আর তার মূল্যবান একখন্ড জমিতে লাগাতে আগ্রহী হয় না। গ্রামীণ বন-জঙ্গলের মতোই এসব গাছপালাও অনেক প্রজাতির পশু-পাখির বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশক। তাদের খাদ্য, আশ্রয় ও বাসা বাঁধার জন্য অপরিহার্য। আগে যেসব জায়গায় এসব গাছপালা ছিল এখন সেখানে হয় আবাদি জমি হয়েছে না হয় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফল বা কাঠের গাছ লাগানো হয়েছে। তাই শুধু আহার ও বাসস্থানের অভাবে অনেক প্রজাতির পশুপাখি হারিয়ে যেতে বসেছে।

আমাদের দেশের প্রাণী ও পাখিগুলো শত-সহস্র বছর ধরে এদেশের বনে-জঙ্গলে বিচরণ করতে করতে তাদের জীবনধারণের একটি নির্দিষ্ট ধরন তৈরি করে ফেলেছে। কোথায় বাসা বানানো যায়, কোন গাছের ফল, কোন গাছের লতাপাতা খাদ্য হিসেবে ভালো সহজাত প্রবৃত্তির গুণেই এগুলো তারা জেনে যায়। হঠাৎ করে এই ধরনের পরিবেশ বদলে দিলে তারা পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে প্রাণীদের অস্তিত্ত্ব হয় বিপন্ন। আর এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে ও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এদের বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা আনেকগুণ বেড়ে যায়।

এ সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য আজই আমাদের দেশের বনজ ও জলজ পরিবেশ সম্পর্কে ব্যাপক জরিপ এবং গবেষণার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি এবং পরিবেশের সঙ্গে তাদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া নিয়েও গবেষণা শুরু করতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এক জটিল খাদ্যশৃঙ্খলে বাঁধা। তাই একের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব অন্য অনেকের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অনেক ক্ষেত্রে এসব উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের খাদ্য-বস্ত্র-ওষুধ প্রভৃতির উপকরণ যোগায়। কখনোও বা নানাভাবে আমাদের পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন।

আজকাল বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের দাবি ও উদ্যোগ প্রবল হয়ে উঠেছে। এদেশেও তার ঢেউ এসে লেগেছে। কিন্তু আমরা কি পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, প্রাণী বিলুপ্তি, পরিবেশের ভারসাম্য কথাগুলোর অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে পারছি? এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে কতটুকু সচেতন? এদেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে এখনই সকল পেশার মানুষকে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সজাগ হতে হবে। আর তা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভার আমাদেরই বহন করতে হবে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সরকার ও বিভিন্ন এনজিও’র পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। 

আলোকচিত্র: লেখক

Aminoorআ ন ম আমিনুর রহমান সম্পর্কে: 

আ ন ম আমিনুর রহমান বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত প্রকৃতি, পাখি, প্রজাপতি ও বন্যপ্রাণীবিষয়ক প্রবন্ধ লিখছেন ও আলোকচিত্র প্রকাশ করছেন।  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন (এমভিএসসি) এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়াতে (পিএইচডি)।

পাখি ও প্রাণী চিকিৎসায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব গুয়েল্প থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার, চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক গ্রাহাম জ্যাকসন মেমোরিয়াল এওয়ার্ড (এএসআই) ও এমএসএপি এওয়ার্ড (মালয়েশিয়া) অর্জন করেছেন। 

অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান বর্তমানে ‘পশুপাখির প্রজননতান্ত্রিক জৈবপ্রযুক্তি ও প্রজনন সংকট’ এবং ‘দুর্লভ ও বিরল পাখির প্রজনন প্রতিবেশ ও সংরক্ষণ’-এর উপর গবেষণা করছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ৩৩টি। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। সম্পাদনাকৃত বইয়ের সংখ্যা ৮টি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশু বিশ্বকোষ ও বিজ্ঞানকোষের সহলেখক। বাংলাপিডিয়াসহ প্রায় ২২টি গ্রন্থে তার আলোকচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অ্যান্ড কনজারভেশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ (১৯৯৬) এবং ‘প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সোসাইটি’ (২০০৯) নামে দু’টি সংগঠন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স অনুষদের গাইনিকোলজি, অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। বর্তমানে এই বিভাগসহ অনুষদাধীন আরও ছয়টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। 

আ ন ম আমিনুর রহমান বহুমাত্রিক.কম-এর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক 

[email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer