ছবি: বহুমাত্রিক.কম
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের রাজীবপুর সীমান্তে বালিয়ামারী বর্ডার (সীমান্ত হাট) বিক্রয়ের জন্য শুকনা সুপারির বস্তা প্রতি (৮০ কেজি) ৪০০ টাকা হারে ‘চা খরচ’ বাবদ আদায় করা হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী ওই সুপারি হাটে তুলবেন তাদের কাছ থেকে আগেই বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা করে উঠানো হয়। এতে প্রতি হাটে দেড় হাজার বস্তা সুপারি বিক্রি করা হয়।
এ জন্য প্রতি হাটেই চা খরচের ওই ৬ লাখ টাকা হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক, কাস্টমস কর্মকর্তা, সরকারি দলের উপজেলার নেতাকর্মী এবং হাটে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যদের ঘুষ দেওয়া হয়।
সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, সীমান্ত হাটের সিন্ডিকেটের প্রধান বাবু মিয়া ও জহুরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি চা খরচের ওই টাকা উঠান। এভাবে গত তিন সাপ্তাহ ধরে চা খরচের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। ওই টাকা না দিলে হাটে সুপারি ঢুকতে দেওয়া হয় না। আজ বুধবার হাটের দিনে সরেজমিনে ক্রেতা, বিক্রেতা ও হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে চা খরচের ওই টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বিজিবি জওয়ানরা।
অভিযোগ রয়েছে, হাটকে ঘিরে ১০ জনের শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই মূলত হাটের ক্রেতা, বিক্রেতা। সাধারণ কোনও ক্রেতা সীমান্ত হাট থেকে কোনও পণ্য সামগ্রী কিনতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাটের এক বিক্রেতা জানান, সিন্ডিকেটের সদস্য বাবু মিয়া ও জহুরুল ইসলামই হাটের সব দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশে রাজি নয় এমন এক সুপারি বিক্রেতা বলেন, ‘চা খরচের ওই টাকা না দিলে সুপারির বস্তা তো হাটে তুলতে দেয় না। তাছাড়া ওই সুপারিতে প্রচুর লাভ। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যায়। এক হাটে যদি ১০ হাজার বস্তাও নেওয়া যায় তাও বিক্রি হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে হাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে শুকনা সুপারি আমদানি করা হয়ে থাকে। আমদানি করা ওইসব সুপারি শুল্ক কর ও ভ্যাট ছাড়া সীমান্ত হাটে বিক্রি করার কোনও নিয়ম নেই। মূলত স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীই কেবল সীমান্ত হাটে আদান প্রদান করার কথা। কিন্তু হাটে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাজীবপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া জানান, হাট কমিটির সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল ও ইউএনও নাসির উদ্দিন মাহমুদ ব্যবসা শুরু করেছে। এক হাটেই তারা দু’জন লাখ টাকার মতো অবৈধ ভাবে আয় করছে। যেসব পণ্য বিক্রির অনুমতি নেই সে গুলোই বিক্রি করছে।
এদিকে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়কের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘পণ্য সামগ্রী প্রবেশে অর্থ গ্রহণের কথা সত্য নয়। নিয়ম অনুসারেই সব কার্যক্রম পালন করা হয়।’
সীমান্ত হাটে দায়িত্বে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানও চা খরচ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘শুকনা সুপারি গুলো আমদানি করা হলেও যেগুলো সীমান্ত নেওয়া হয় তা পচা, খাওয়ার অযোগ্য। এটা যদি ভারতে বিক্রি করা যায় তাহলে তো দোষের কিছু নেই।’
অপরদিকে হাটে আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত বালিয়ামারী বিজিজি ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার হাসনাইদ খান বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারলাম আমাদের নামে টাকা উঠানো হয়েছে তখন হাট থেকে ১৪০ বস্তা সুপারি আটক করি। আসলে আমরা হাটের আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখি। অবৈধ কোনও পণ্য সামগ্রী আমরা হাটের ভিতরে ঢুকতে এবং বের হতে দেই না।’
এ ব্যাপারে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক কুড়িগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল লতিফ খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এর আগে হাটে শুকনা সুপারি বিক্রি নিষেধ করে দিয়েছি। এ হাটে সুপারি উঠানো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আর চা খরচের যে টাকার কথা বলছেন, তা তারা কাকে দেয় তা ভালো করে জানেন।
বহুমাত্রিক.কম