ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম, এ, মান্নান এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একুশ শতকের জন্য উপযুক্ত রাষ্ট্র তৈরী করতে চাই জ্ঞান, মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকরণে আমরা সাম্প্রতিককাল অতিক্রম করেছি। দৃশ্যমান কিছু অর্জন করলেও আমাদের মূললক্ষ্য বাঙালিরা আত্মপরিচয়ে পাগল হয়ে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাঙালী জাতিকে প্রকৃত ঠিকানায় ফিরিয়ে আনতে চাই।
তিনি বলেন, সকলের বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব, পারিবারিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না, এ ধরণের একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এখন অনেক দুর এগিয়ে গেছে, তবে সামনে আরও অনেক পথ বাকী আছে।
বৃহষ্পতিবার রাত ৮টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও মণিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্স্র প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী ইন্দো-বাংলা মণিপুরী সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৮ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এম এ মান্নান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মণিপুরী নৃত্যের খ্যাতি ও পরিচিতি আজ সর্বজনীন তার পাশাপাশি মণিপুরী ভাষা সাহিত্যে রয়েছে প্রাচীনতা ও উৎকর্ষের এক গৌরবাজ্জ¦ল ঐতিহ্য। ভারতেও মণিপুরী সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত একটি রাজ্য আছে, মণিপুর তাদের সাথে আমাদের দেশের একটি অংশ নানাভাবে মণিপুরী সংস্কৃতি আদান প্রদান করা হয়।
তিনি বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে মণিপুরীদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যর কথা তুলে ধরে বলেন, এ উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত এবং বহির্বিশ্বে অবস্থানকারী বৃহত্তর মনিপুরী অধিবাসীদের এক বিশাল মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে। এই উৎসবের ফলে দুদেশের মণিপুরী জনগণের মধ্যে পারস্পরিক স¤প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়বে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা আর বর্ণাঢ্য আয়োজনে মণিপুরী কমপ্লেক্সে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও ভারতের মণিপুর থেকে আগত অতিথি ও শিল্পীদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত একটি সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি।
উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জয়ন্ত কুমার সিনহার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রবি কিরণ সিনহার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শশী কুমার সিনহা, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বিপিএম, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, ভারতের মণিপুর রাজ্যের জেনিথ একাডেমীর পরিচালক ও দেশপ্রেমী লেখক ফোরামের সদস্য ড: এস মানাঙথন সিংহ, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তফাদার রিজুয়ানা ইয়াসমীন সুমী, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন ও প্রাণ আরএফএল কোম্পানীর ব্র্যান্ড ম্যানেজার সামিউল হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স এর সদস্য নীলচাঁদ সিংহ। রাত সাড়ে ৮টায় দুই দেশের মণিপুরী শিল্পীদের অংশ গ্রহনে পরিবেশিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয় দিন শুক্রবার মণিপুরী কালচারাল একাডেমীতে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে ইন্দো-বাংলার মনিপুরীদের সোসিও ইকোনমিক-সংস্কৃতি সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ বিষয়ক সেমিনার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ভারতের মণিপুর রাজ্যেও পিএডব্লিউএফ-এর সহ সভাপতি মাইসনাম করউহাঙবা লুয়াঙ। বিকাল সোয়া ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশের মণিপুরী কবিদের অংশ গ্রহনে কবিতা পাঠের আসর। সন্ধ্যা ৬টায় পরিবেশিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সমাপনী দিন শনিবার সকাল ১০টায় আদমপুরের নয়াপত্তন গ্রামের কাঙসাঙ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী খেলা কাঙ। বেলা ২টায় মনিপুরী কালচারাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে লিকন শনাবা(কড়ি খেলা)। বিকাল ৪টায় তিনদিনব্যাপী উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সচিব মো: নাসির উদ্দীন আহমদ,রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শশী কমুার সিনহা,অতিরিক্ত সচিব বিএসইসি কঙখাম নীলমনি সিনহা, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড: মোছাম্মত নাজমন আরা খানম, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলাম ও ভারতের মণিপুর রাজ্যের দেশপ্রেমী লেখন ফোরামানের সাধারণ সম্পাদক রাখেশ নাঙরেম। সন্ধ্যা ৬টায় পরিবেশিত হবে সমাপনী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উৎসব চলাকালে দুদেশের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে চলবে পারস্পরিক মতবিনিময়। এছাড়াও রয়েছে মেলা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ইতিহাস-ঐতিহ্য, খেলাধুলা শিক্ষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতি গোটা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভারত ও বাংলাদেশে আবস্থানকারী মণিপুরী প্রতিনিধিত্বশীল শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন।
বহুমাত্রিক.কম