‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন বারোয়ারি বেশ্যা’ এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এমনটিই মন্তব্য করেছেন ব্লগার ও ‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবনযুদ্ধ’ গ্রন্থের লেখক নাজমুল হাসান।
নাজমুল হাসান পেশায় একজন চিকিৎসক। সম্প্রতি একুশের বই মেলায় যুক্ত হয়েছে অন্বেষা প্রকাশনের ‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবনযুদ্ধ’ শীর্ষক তাঁর একটি গ্রন্থটি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে লেখক নাজমুল হাসান তাঁর বাবাকে হারান। তাঁর বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল মজিদ ১৯৭১ সালের ১৪ই অগাস্ট নয় নম্বর সেক্টরে নিখোঁজ হন। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন কবির তাঁরই সহোদর।
নাজমুল হাসান প্রজ্ঞা, মেধা ও অনুপম সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর নিজস্ব জীবনবোধ ও সংস্কৃতি।অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা নাজমুল হাসানের ‘মনোদৈহিক’ উপন্যাসটিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনেক আগেই।
মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে যে ধান্ধাবাজি ও লজ্জাজনক ব্যবসা চলছে তাঁরই প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই ঘৃণ্য কাজের প্রতি চরম ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এই লেখক।
লেখক নাজমুল হাসান তাঁর ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনারে বারোয়ারি বেশ্যা বানায় উপর্যুপুরি ধর্ষণ করার জন্য তোদের গুলি করে মারা উচিৎ। রাজাকারের দড়িরসাথে তোদেরও ঝুলানো উচিৎ। তোরা বিভীষণ, তোদের শাস্তি হওয়া উচিৎ মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর।’
তিনি আক্ষেপ করে লিখেছেন- `মুক্তিযুদ্ধ করে বাপ মরছে ১৪ই আগষ্ট ১৯৭১ সালে। গায়ের রক্ত পানি করে কুলি-মজুরগিরি করে, মানুষের লাথি-চড় খেয়ে বড় হইছি। বাপের একখান সার্টিফিকেটের জন্য আমার ভাই এখনও দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছেন। আমি ক্লান্ত হয়ে বহু আগেই ছাড়ান দিছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতারা ভাইয়ের কাছে বিশ হাজার টাকা চেয়েছে। তাদের ক্লিয়ার কথা, টাকা না দিলে কাজ হবে না।’
তিনি আরো লিখেছেন- ‘আমার বাপরে নিয়ে আমি বহু লেখালিখি করছি।সার্টিফিকেটের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে বহুবার বহু কাগজপত্র জমা দিছি। প্রতিবারই তারা টাকা চাইছে, আমি কোনবারই কোন টাকা দেইনি। সে কারণে আজ পর্যন্ত কোন কাজও হয়নি। এখন অফিস থেকে সে কাগজ-পত্রও গায়েব হয়ে গেছে। অথচ মূলকপি জমা দিতে বলায় তাইই জমা দিয়েছিলাম। ফলে ওগুলিই ছিল মূল কপি। কোন রিসিপ্টও দেয়নি, বলেছিল রিসিপ্ট লাগবে না।’
তিনি লিখেছেন ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের নামে এক সময়ে মানুষ থু থু দেবে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটা শ্রদ্ধার না হয়ে হবে গালি। অনেক ভাল শব্দ ‘বাকশাল’ যেমন গালি হইছে ঠিক তেমনভাবে হবে গালি। বাকশালরে যারা গালি বানাইছে তারা থেমে নাই।’
সাধারণ মানুষের চিকিৎসক হয়েও, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সদা যার কলম চলে, একটি শহীদ পরিবারের সন্তান হয়ে যিনি ঘুষ-দুর্নীতি, ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার তাঁকেও কেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আমলে কিছু চিহ্নিত কুচক্রী মহলের কাছে হার মেনে চলতে হয় (?) এই প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরও একটি কুচক্রী মহল থেমে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ এর সময়ে দেশের মানুষ সেটা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করে না। অথচ এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোই ঘটছে। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিনা, সেটাই অনেককে নতুন করে ভাবার অবকাশ করে দিচ্ছে।
শওকত আলী বেনু : সম্পাদক, বহুমাত্রিক.কম
বহুমাত্রিক.কম