Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাউল সম্রাটের তিরোধান দিবস: পুণ্যসেবায় শেষ হলো সাধুসঙ্গ

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বাউল সম্রাটের তিরোধান দিবস: পুণ্যসেবায় শেষ হলো সাধুসঙ্গ

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

কুষ্টিয়া: বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৬ তম তিরোধান দিবসে ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। সব পথ যেন এসে মিশেছে মরা কালীর নদীর তীরে আখড়া বাড়িতে।

কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। কিন্তু এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ১ঘণ্টার বেশি। দাওয়াত নেই, পত্র নেই তবুও সাঁইজির মরমী টানে এই ধামে সাধু-গুরু বাউলেরা ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ই বেশি।

এদিকে রোববার থেকে শুরু হওয়া সাধু সংঘ শেষ হয়েছে সোমবার দুপুরে। বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু সকালের অধিবাসে পায়েশ ও মুড়ির বাল্যসেবা গ্রহণ করেন।
সোমবার দুপুরে তাঁরা মরা কালী গঙ্গায় গোসল সেরে দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবার মধ্যে ছিলো ভাত, মাছ, সবজি, দধি। বাউলরা বিশ্বাস করেন শুদ্ধ আত্মায় মুক্তি। আর মুক্তির আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধু সংঘে ছুটে আসা।

সোমবার ২য় দিন ভোরে গোষ্ঠ গানের মধ্য দিয়ে বাউলদের দিনের আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। লালন একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ভোরে গোষ্ঠ গানের মধ্য দিয়ে তিরোধান দিবসের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়। দিনকে স্বাগত জানানোই গোষ্ঠ গানের মূল উদ্দেশ্য।

এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় তাদের কার্যকরণ। গুরু-শিষ্যের ভাব আদান প্রদান, লালন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা আর সেই সঙ্গে চলে নিজস্ব ঘরনায় বসে লালনের গান পরিবেশন। ‘তুমি গোষ্ঠে চলো হরি মুরারি, আর আমারে মারিসনে মা’ এসব গান পরিবেশন করা হয়। এরপর ‘বাল্যসেবা’। পর্বে সকালে ‘ভোগগ্রহণ’ করেন অনেকে। তারপর পায়েস-মুড়ি খেতে দেয়া হয়।

ভোগ গ্রহণের পালা শেষে গান-বাজনা, তত্ত্ব¡-আলোচনা চলতে থাকে। সোমবার দুপুরে হয় ‘পূর্ণসেবা’। একাডেমি কর্তৃপক্ষই এসবের আয়োজন করেছেন। প্রায় ৪ হাজার বাউল ভক্ত দর্শনার্থীরা একসঙ্গে বসে পঞ্চব্যাঞ্জন দিয়ে আল্লা আলেক এর নাম করে পূণ্যসেবা গ্রহণ করেন।

পূণ্যসেবায় ভাত, সবজি, মাছ, ডাল ও মিষ্টান্ন খেতে দেয়া হয় বাউলদের। এই সেবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাউলদের অষ্ট প্রহরের সাধু সংঘ। এদিকে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় লালন সাঁই ও অন্য সাধু-গুরুদের গানের বিশ্লেষণপর্ব। গাওয়া হয় ‘কোথায় হে দয়াল কা-ারি, এসো হে ওপারের কা-ারি, রাখিলেন সাঁই কুপজল করে আন্ধেলা পুকুরে’।

এদিকে বাউল সম্রাটের জীবন ও কর্মের উপর নিয়মিত আলোচনা চলবে আজও। সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কালিগঙ্গা পাড়ে লালন মঞ্চে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফকির হৃদয় শাহ জানান, আয়োজনে যোগ দেয়ার জন্য বাউলদের কোনো চিঠি দেয়া হয় না, জানানো হয় না নিমন্ত্রণ। তারপরও এক অদৃশ্য সুতোর টানে এরা দলে দলে ছুটে আসেন এ বাউল ধামে।

প্রাপ্তি যাই হোক না কেন নিজেকে শুধরিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন করায় তাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে অনেকে আবার লালনের মূল আদর্শের তত্ব মেনে বাউল ভক্তদের আনুষ্ঠানিকতা পালনের আহ্বান জানান।

এদিকে সোমবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৬তম তিরোধান দিবস (মৃত্যুবার্ষিকী) উপলক্ষ্যে ৩ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার ২য় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজবি উল ফেরদৌসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কুষ্টিয়ার কমান্ডার নাসিম উদ্দিন আহমেদ, বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ডা: আমিনুল হক রতন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, লেখক ও কলামিষ্ট গবেষক শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু ও বিশিষ্ট লালন গবেষক গাজী মঞ্জুরুল ইসলাম।

আলোচনা সভা শেষে দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরাসহ বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন মঞ্চে লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer