Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্যার ক্ষতি : মৌলভীবাজারে নিন্ম মধ্যবিত্তের ঈদ আনন্দ ম্লান

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৯, ১৮ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বন্যার ক্ষতি : মৌলভীবাজারে নিন্ম মধ্যবিত্তের ঈদ আনন্দ ম্লান

ফাইল ছবি

মৌলভীবাজার : গত ঈদুল ফিতরের সময়ে মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। বন্যার কারণে দুর্গত এলাকার লোকজনের ঈদুল ফিতরের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়ে।

বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনও অনেকেই। ফলে এসব এলাকার অনেক লোকজন এবছর কুরবানি থেকেও বিরত থাকছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সমুহের নিন্ম মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত পরিবার সদস্যদের মধ্যে আসন্ন কুরবানির ঈদের আনন্দটাই যেন ম্লান হতে চলেছে। নিন্মবিত্ত পরিবার সদস্য, দিনমজুর, কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সদস্যদের মধ্যে অনেকেই এখনও বাড়িঘর, আউশ ক্ষেত, শাক-সবজি সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে কুরবানি দেওয়া থেকেও বিরত থাকছেন। মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের প্রবাসি সদস্যরা বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার একটি বড় অংশ বাড়িঘর মেরামত ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে।

আউশ ক্ষেত ও শাক-সবজি বিনষ্ট হওয়ায় এবং জীবন যাত্রার ব্যয়ভার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সংকট সহসাই কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে কুরবানির ঈদের যে আনন্দ সেটি অন্যান্য বছরের ন্যায় নিন্মবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে। কুরবানি ও হাটবাজারে মানুষের উপস্থিতিও হ্রাস পেয়েছে।

কমলগঞ্জের পতনঊষার ইউনিয়নের গৃহিনী সায়রা বেগম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নিয়মিত কুরবানি দিচ্ছি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারনে অভাব অনটন ও আয় রোজগার কমে যাওয়ায় এবছর আর কুরবানি দিতে পারছি না।’ সায়রা বেগমের মতো আরও অনেকেই এই ঈদে কুরবানি দিতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, বেকারত্ব, দারিদ্রতা, কাজকর্ম কমে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক ছাটাই, আয়ের তুলনায় ব্যয়ভার বৃদ্ধি এসব নানা কারনে অভাব অনটন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ঈদে এর প্রভাব পড়ছে।

আবুল ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাউর রহমান চৌধুরী বলেন, বন্যার কারনে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, পতনঊষার এলাকায় অধিকাংশ প্রবাসিদের পাঠানো টাকা চিকিৎসা ও ঘর বাড়ি মেরামতে ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া কৃষিক্ষেত, শাক-সবজি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ায় ও কিনে খাওয়ায় মানুষের ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কারনে এবছর অনেক মানুষ অর্থাভাবে কুরবানি দিতে পারছেন না। গত বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা এখনও কাটিয়ে উঠা যায়নি।

দিনমজুর মানিক মিয়া বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় কাজকর্ম কমে গেছে। ফলে আগের মতো রোজগার না থাকায় আমার মতো পরিবারের মধ্যে ঈদের আনন্দটা নাই। কৃষক আক্তার মিয়া বলেন, বন্যায় কৃষিক্ষেত, শাক-সবজি নষ্ট হওয়ায় অভাব বেড়ে গেছে। তা এখনও কাটিয়ে উঠা যায়নি। তাছাড়া বর্তমানে খরায় ও চাহিদা মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন জমিও রোপন করা যাচ্ছে না।

মোদি দোকান ব্যবসায়ী ফটিকুল ইসলাম, কাপড় ব্যবসায়ী প্রেমানন্দ নাথ বলেন, এবার সার্বিকভাবে মানুষের মধ্যে অভাব অনটন কাজ করছে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি ও কেনাকাটা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী তোয়াবুর রহমান, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, বন্যার প্রভাব ও সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারা, বেকারত্ব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক যেতে না পারা, জীবন যাত্রার ব্যয়ভার বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত, গরিব কৃষক ও দিনমজুর পরিবার সমুহের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer