Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্যপ্রাণিহীন হচ্ছে লাউয়াছড়া ! সড়ক ও রেলপথে মরছে অহরহ

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ১ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বন্যপ্রাণিহীন হচ্ছে লাউয়াছড়া ! সড়ক ও রেলপথে মরছে অহরহ

এভাবেই মারা যাচ্ছে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণিরা। ছবি: বহুমাত্রিক.কম

 

মৌলভীবাজার : জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে রেললাইন ও সড়কপথে কাটা পড়ে আর প্রধান বিদ্যুৎ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে বছরে প্রায় অর্ধসহস্রাধিক বন্যপ্রাণি মারা যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও বছরে কয়েক শত প্রাণির মৃত্যু ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ফলে দেশে-বিদেশে এই উদ্যানটি একসময় বন্যপ্রাণিহীন হয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সবুজ চিরহরিৎ বনে আচ্ছাদিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কপথ। প্রতিদিন সড়কপথে কয়েক শত যানবাহন এবং রেলপথে আঠারো থেকে ২০টি ট্রেন আসা যাওয়া করছে। এই উদ্যানের ভেতর দিয়েই শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। রেললাইন ও সড়কের উভয় পাশেই বিস্তৃত উদ্যানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

বনের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া আর লাফালাফির সময় প্রায়ই সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী গাড়ির চাকায় ও ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে কিংবা আঘাত পেয়ে মারা যাচ্ছে। একইভাবে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনে পিষ্টও বিভিন্ন সময়ে সাপসহ অন্যান্য প্রাণিরাও মারা যাচ্ছে। তবে রাতের বেলা চলাচল করে বলে বন্যপ্রাণীরা রাতেই বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া এসব প্রাণীর অনেকগুলোরই হিসাব নেই। তাৎক্ষণিকভাবে দিনের বেলা সড়কপথে মারা যাওয়া প্রাণীর যেগুলো চোখে পড়ে, কিংবা লোক মাধ্যমে খবর পেলে বন্যপ্রণি বিভাগ সেগুলোরই কিছু হিসাব রাখে। আর রেলপথে মানুষের চলাচল কম বলে সেখানে কাটা পড়ে কি পরিমাণ প্রাণী মারা যাচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ লাউয়াছড়া বনবিট অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ একটি গ্রিনফ্যান থ্রোপ্যাড লেজার্ড, ২১ মার্চ একটি চশমাপরা হনুমান, ৩১ মার্চ একটি হলুদ ফোঁটা ঘর গিন্নি সাপ, ১০ মে একটি হলুদ ফণীমনসা, ২৩ জুলাই একটি কিং কোবরা ও একটি সোনালি শিয়াল, ১৭ আগস্ট একটি চশমা পরা হনুমান, ২৪ আগস্ট একটি সাপ এবং ৮ সেপ্টে¤॥^র একটি সাপ মারা গেছে। ওই বিভাগ গত মার্চ মাস থেকে শুধু সড়কপথে মারা যাওয়া নয়টি প্রাণীর হিসাব সংরক্ষণ করেছে। তবে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন দুর্বলতার কারনে নিয়মিত তালিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মারা যাওয়া প্রাণী সমুহের সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ পাইথন প্রকল্পের উদ্যোগে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যানবাহনের চাকায় পিষ্ট ও আঘাতে কী পরিমাণ বন্য প্রাণী মারা যায়, তার ওপর একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, এই সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের হিড বাংলাদেশের কার্যালয় এলাকা থেকে জানকী ছড়া মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০০ মৃত সাপ পাওয়া গেছে।

এগুলো কোনো না কোনোভাবে যানবাহনের আঘাতে মারা গেছে। এর মধ্যে কোবরা, কিং কোবরা, অজগরসহ অনেক বিপন্ন প্রজাতির সাপ ছিল। জুলাই মাসের দিকে অজগরের বাচ্চা হয়। তখন বাচ্চাগুলো ছোটাছুটি করে। সেই সময়ে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে বাচ্চাগুলোই বেশি মারা পড়ে। এর বাইরে চিতা বিড়াল, প্যাঁচা, বানর, ব্যাঙ ইত্যাদিও মৃত পাওয়া গেছে। বৃষ্টির সময় ব্যাঙ বেশি ছোটাছুটি করে।

বাংলাদেশ পাইথন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সাপ ও কচ্ছপ গবেষক এবং ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের একটি সূত্র জানায়, পাখিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর জন্য লাউয়াছড়া দেশে-বিদেশে বিখ্যাত। প্রাণিই যদি না থাকে, তাহলে এই উদ্যানের আকর্ষণই থাকবে না। সংস্থার পক্ষ থেকে সার্ভের সময় প্রায় প্রতিদিনই মৃত সাপ পাওয়া গেছে। কোনোভাবে রাস্তা বন্ধ করলে লাউয়াছড়ার প্রকৃতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বহুমাত্রিক.কমকে বলেন, মৃত বন্যপ্রাণির হিসাব পুরোপুরি সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। প্রায় ৮কি. মি. রেলপথে চলাচল সম্ভব হয় না। অথচ রেলপথেও নিয়মিত প্রাণি মারা যাচ্ছে। সড়কপথেও নিয়মিত চলাচল সম্ভব হয় না, নিজেদের নজরে আসলে কিংবা কেউ জানালে সে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।

পাইথন প্রকল্পের ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স গবেষকদের তথ্যের বরাত দিয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা গত কয়েক বছর ধরে পাইথন ও কচ্ছপ নিয়ে গবেষণা করে একটি হিসেব প্রদান করেছে তাতে বছরে ৪০ থেকে ৪৫টি বন্যপ্রাণি মারা যাচ্ছে। সেখানে সাপসহ বিরল প্রজাতির কথাও রয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত সাপ, বিজি, ব্যঙসহ বিভিন্ন প্রাণি অহরহ মারা যাচ্ছে। তবে জনবল সংকটের কারণে এসব বিষয়ে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer