Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশ ও গৌরবময় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ১০ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশ ও গৌরবময় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ

এ প্রবন্ধের শিরোনামে প্রদত্ত শব্দগুলো ধারাবাহিকভাবে একটি আরেকটির সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সম্পর্কিত। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম বা উপাধি নয়-এর সাথে রয়েছে তখনকার সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আত্মার আত্মীয়। বাংলার মানুষই তখন ভালোবেসে তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ম্যাগনাকার্টা। কারণ বাঙালির হাজারো বছরের ইতিহাস বিধৃত করা হয়েছে ঐতিহাসিক এ ভাষণে।

যখনই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়াামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার থাকে তখনই বাংলাদেশ কিছু না কিছু পায়। এটি সেরকমই একটি প্রাপ্তি যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঢাকার রেসকোর্সের সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি এখন শুধু বাঙালির ইতিহাসের নয় বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হয়েছে। এটি এখন গৌরবোজ্জ্বল ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিাবষয়ক একটি বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক। সেখানকার ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এটিকে। 


এ স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার পর সারাদেশে আওয়ামীগ তো বটেই তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং সরকারে থাকা অন্যান্য শরিকসহ সকল পর্যায়ের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তি একাত্ব হয়ে তা বিভিন্ন আনন্দঘন কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয় উল্লাস প্রকাশ করে যাচ্ছে। মনে হয় যেন সেই একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোকে যে ভাষণ বাঙালিকে দেশের স্বাধীনতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে সহায়তা করেছিল সে দিনটি আবার ফিরে এসেছে! যেন বঙ্গবন্ধু সেই বজ্রকণ্ঠে এখনও সেই ভাষণ দিয়ে চলেছে যা কানে বাজছে। ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ..., তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই প্রস্তত থাকে, তা দিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন আর দাবায়ে রাখতে পারবানা, ইত্যাদি জ্বালাময়ী উচ্চারণের পরেই মূলত মুষ্ঠিমেয় কতক স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া পুরো বাঙালি জাতি একত্রে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

‘৭ মার্চের ঘোষণা, স্বাধীনতার সূচনা’ শীর্ষক স্লোগানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ সারাদেশে তার স্বীকৃতিকে উপলক্ষ করে আনন্দ উদযাপন করা হয়েছে। সকল ধর্মের রীতি অনুযায়ী মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আদায় করা হয়েছে শুকরিয়া, পড়া হয়েছে দোয়া, মিলাদ, মন্ত্র, প্রার্থনা ইত্যাদি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের মাধ্যমে সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল যাতে স্বতস্ফূর্তভাবে সকলে অংশ নিয়ে তাকে সাফল্যম-িত করতে দেখা গেছে। আমি নিজেও এগুলোর দুয়েকটি উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এ কারেেণ যে আমাদের দেশের জাতির জনকের ভাষণটি বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে।

ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে তার ঐতিহ্যের রেজিস্টারে এর আগে সারাবিশ্বের মোট ৪২৭টি ডকুমেন্ট স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, বাঙালি জাতিকে আরেকটি নতুন উচ্চতায় স্থান করে দিলেন। এর আগে বাংলাদেশের মাতৃভাষা আন্দোলন, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা, নকশী কাঁথা, ইলিশ মাছ, সুন্দরবন ইত্যাদি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করেছে।

আমরা জানি ‘গিনেজ বুক অব রেকর্ডস’-এ কোন কিছু অন্তর্ভূক্ত হতে হলে কিছু নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়। ঠিক তেমনি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রেজিস্টারেও কোন ডকুমেন্ট স্থান পেতে হলে কর্তৃপক্ষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে থাকে। তার মধ্যে উক্ত ডকুমেন্টের ঐতিহাসিক তাৎপর্য, জনকল্যাণ, গ্রহণযোগ্যতা, অবদান ইত্যাদিই প্রধান। তবে সকল বিচারেই এ ভাষণটি সংস্থাটির স্বীকৃতি আদায় করলো। আর এর কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবেই বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের। কারণ তারাই সবসময় এসব বিষয়ের উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন। এবারো এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উৎসাহে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিতভাবে এ গৌরবময় কাজটি করতে সমর্থ হয়েছেন।

এতেই প্রমাণিত হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বর্তমান বাংলাদেশ আজ শুধু যে অর্থনৈতকভাইে এগিয়ে চলেছে তাই নয়। মর্যাদা নিয়েও এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে কাজ করার জন্য আন্তর্জাকিভাবে তিনি যার পর নাই প্রশংসিত হচ্ছেন। তিনি এখন নোবেল বিজয়ী অং সান সূচিকে ডিঙ্গিয়ে শান্তির নেত্রী হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তি ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার তালিকা প্রকাশ পেয়েছে। আর সেই মুক্তি সংগ্রামের সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হিসেবে পরিচিত এ ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় পুরো জাতি আজ গর্বিত, আনন্দিত ও উদ্বেলিত। আগামী দিনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবেই এগিয়ে যাক সে প্রত্যাশাই আমাদের।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer