Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বগুড়ায় অবহেলিত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন

আবদুল ওহাব, বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:১৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

বগুড়ায় অবহেলিত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

বগুড়া : স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে বগুড়ায় বিলীন হতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমুহ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বগুড়া শাজাহানপুরের আড়িয়া বাজারে ছিল পাকিস্তানী সেনাক্যাম্প। এখান থেকে পাকিস্তানী সেনারা বাংলার নিরীহ জনগণের সাথে যুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধ চলাকালীন এখানকার স্থানীয় স্বাধীনতাকামী কিছু যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালায় এ সেনা ছাউনিতে।

এরপর তারা পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করে ছাউনিটি দখল ও তাদের অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে দৃঢ প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ক্যাম্পটি পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। তবে পাকিস্তানী এ সেনা ক্যাম্পিিট দখল করতে এ অপারেশনে নেতৃত্ব দানকারী বগুড়ার কৃতি সন্তান টিএইচ খানের ছেলে মাসুদ সহ এখানে শহীদ হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

যাদের স্মরনে সেসময়ে এখানে নির্মিত হয় স্মৃতি স্তম্ভ এবং তখনই স্থানীয় জনতা স্থানটির নামকরণ করেন ‘মাসুদ নগর’ হিসেবে। নাম ফলক ‘মাসুদ নগর’, স্মৃতি স্তম্ভ, সেনা ক্যাম্প ও ট্রেনিং গ্রাউন্ড আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখলেই স্মরণ করিয়ে দেয় ৭১ এর ভয়াবহ দিনগুলোর কথা। ফলে আজও স্থানটি ঐতিহাসিক আড়িয়া বাজার তথা মাসুদ নগর হিসেবে পরিচিত।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানটি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। অবহেলা আর অনাদরে বিলুপ্তির পথে স্থানটির ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবেনা এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান।

খসে ও ধসে পড়ছে ঘড়ের দেয়াল, ছাদ ও দরজা-জানালা। মাঠের চারপাশে গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ী ও ট্রাক ষ্ট্যান্ড। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও শহীদ মিনারের পাশে বসানো হয়েছে টিউবয়েল। যেখানে ট্রাক চালক, সিএনজি চালক ও রাতের আধারে অনেকেই সেখানে গিয়ে প্রসাব পায়খানা করছে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আবদুল মান্নানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানটি ঐতিহাসিক হলেও সংরক্ষণের জন্য লিখিত কোন আবেদন আজও করা হয়নি। এভাবে অবহেলায় বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের এই নিদর্শন।

তবে স্থানটি সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় জনতা প্রশাসনের কাছে বারবার দাবী জানালেও তা বরাবরই হয়েছে উপেক্ষিত। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি দেখেও গুরুত্ব দেয়নি কখনই। আবার রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতাও কম নয়। যুগের পর যুগ আর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তারা কখনই নেয়নি সংস্কার ও সংরক্ষনের কোন পদক্ষেপ। বগুড়ায় অনেক নেতা আসে আবার অনেক নেতার আবির্ভাব হয়। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে যাদের অবদান তাদের প্রতি সম্মান ও পরিচয় সংরক্ষনের মন মানসিকতা তৈরী হয়নি আজও।

এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম হারিয়ে ফেলবে এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি আর নিদর্শন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা সকলের।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer