Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রসঙ্গ : ডেঙ্গু জ্বর ও করণীয়

ডাঃ মোঃ কফিল উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ০২:৫৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ০৩:১৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

প্রিন্ট:

প্রসঙ্গ : ডেঙ্গু জ্বর ও করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর হল ডেঙ্গু নামক এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা মানব দেহে সৃষ্ট জ্বর রোগ। সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রকরণ রয়েছে। সাধারণতঃ প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমাদের দেশে এই রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। আমাদের দেশে প্রধানত এডিস এজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশকীই এই রোগের প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে। উপরোক্ত প্রজাতির মশকীর দংশনের দ্বারাই এই ভাইরাস কোন অসুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে।

সেই সাথে মানব সমাজে এই রোগের প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায় প্রতি বছর পৃথিবীতে গড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আর এই রোগে বাৎসরিক মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার। নিরক্ষীয় ও উপনিরক্ষীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এই রোগ স্থানিক রোগ হিসেবে স্বীকৃত। উপরোক্ত অঞ্চলদ্বয়ের প্রায় ১.৭ বিলিয়ন মানুষ এই রোগের আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকে।

আমাদের দেশে সর্ব প্রথম ১৯৬৪ সালে ডেঙ্গু জ্বরের কেইস রিপোর্ট হয়। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল ডেঙ্গু আমাদের দেশে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করা সংক্রামক রোগ হলেও এখনও সারা দেশব্যাপী এর প্রকোপ নিরূপনে বিশদ কোন জরিপ পরিচালিত হয়নি। স্বল্প পরিসরে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড়-বড় শহর, হাসপাতাল-ক্লিনিকে কিছু খন্ডকালীন জরিপ পরিচালিত হয়েছে মাত্র। তেমনি ২০১৭ সালে রাজধানী শহরের হাসপাতাল কেন্দ্রীক এক জরিপে দেখা যায় উক্ত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৮৮ জন। আর এই রোগে মৃতের সংখ্যা ৫ জন। কিন্তু প্রকৃত হিসাবে সারা দেশব্যাপী এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হবে।

রোগের রোগতত্ত্ব
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু যখন মানব দেহের রক্তে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্বে মানব দেহে উৎপন্ন হয় এন্টিবডি নামক এক প্রকার প্রোটিন। অতঃপর উক্ত প্রোটিনের সাথে রোগের নিয়ন্ত্রণকল্পে জীবাণুর এক শক্ত বন্ধন তৈরি হয়। সবশেষে এই প্রোটিন-জীবাণুর মিশ্রন জমা হতে থাকে রক্তনালীর প্রাচীর ও রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক প্লেটিলেট তথা অনুচক্রিকার গায়ে। সেই সাথে মানবরক্তে রোগ প্রতিরোধে সহায়ক টি-লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকা উদ্দীপিত হয়ে মানবরক্তে নিঃসৃত করে নানা প্রকার জৈবরাসায়নিক পদার্থ।

পরিশেষে বেড়ে যায় মানব রক্তসংবহন তন্ত্রের ক্যাপিলারী তথা রক্ত জালকে অভিগম্যতা। অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তরস তথা প্লাজমা রক্তনালী থেকে বের হয়ে মানব কোষ কলায় আশ্রয় নেয়। পানি জমতে শুরু করে রোগীর বুকে ও পেটে। বেড়ে যায় রক্তের ঘনত্ব তথা হেমাটোক্রিটের মাত্রা। কমতে শুরু করে রক্তে প্রোটিন ও সোডিয়ামের পরিমাণ। সেই সাথে কমতে শুরু করে রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ ও কর্মক্ষমতা। দেখা দেয় মানব দেহের নানা জায়গা থেকে মামুলী থেকে তীব্র রক্ত ক্ষরণের প্রবণতা।

রোগের লক্ষণঃ
লক্ষণ ও রোগতত্ত্বের ভিত্তিতে মানব ডেঙ্গু জ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ও
২. রক্তপাত সহ ডেঙ্গু জ্বর।

১. সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরঃ
ক্স হঠাৎ তীব্র জ্বর, যা সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়,
ক্স জ্বরের সময় সমস্ত গায়ে কিংবা গায়ের অংশ বিশেষে লাল-লাল ফুসকুড়ি,
তীব্র মাথা ব্যথা,
-চোখের পিছনে ব্যথা,
-মাংসপেশী, অস্থিসন্ধি কিংবা কোমরে ব্যথা,
-বিরল ক্ষেত্রে জ্বরের পর্যায়ে রোগীর দেহের নানা জায়গায় রক্তক্ষরণ।
প্রভৃতি এক বা একাধিক লক্ষণ নিয়ে মানব দেহে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

২. রক্তপাত সহ ডেঙ্গু জ্বর

এক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের মতই। তবে জ্বর শেষে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে

-রোগীর দেহের চামড়ার নিচ, নাক, চোখ, মুখ, যোনী পথ, বমি, প্রস্রাব-পায়খানা বা কাশির সাথে স্বল্প থেকে তীব্র রক্তক্ষরণ হতে পারে।

-রোগীর রক্তনালী থেকে প্লাজমা লিকেজের কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে,
-অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকেচলে যেতে পারে।

সাধারণতঃ জ্বর শেষ হবার পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আক্রান্ত রোগীদের এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয় বলে উক্ত সময়কালকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ওই রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্রাইসিস পিরিয়ড তথা সংকট কাল বলা হয়। এছাড়া সাধারণ কিংবা রক্তপাত সহ ডেঙ্গু জ্বরে রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীর দেহের এক বা একাধিক অঙ্গ যেমন- লিভার, কিডনী, স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস প্রভৃতির অঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি আক্রান্ত অঙ্গের কর্মক্ষমতা হঠাৎ করে লুপ্ত হতে পারে।

কাদের ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি?
-নবজাতক
- প্রৌড় ব্যক্তি
-স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী
-গর্ভবতী নারী
-ঋতুবতী নারী
-পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তি
-থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য রক্তরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি-হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি
-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগী, দীর্ঘমেয়াদে যকৃত ও কিডনী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
-এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি
-দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ও ব্যথা নাশক ঔষধ ব্যবহারকারী।
এই রোগের নানা জটিলতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

রোগ নির্ণয়
জ্বরের কারণ তথা ভাইরাসের উপস্থিতি নিরূপনকল্পে পরীক্ষাসমূহঃ
-মানব রক্তে ভাইরাসের দেহস্থ ঘঝ১ এন্টিজেন নামক দেহানুর উপস্থিতি
-উক্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানব রক্তে উৎপন্ন এন্টিবডির উপস্থিতি
-আক্রান্ত মানব কোষ-কলা কিংবা রক্তে উক্ত জীবাণু কিংবা উহার দেহাংশ তথা এন্টিজেনের উপস্থিতি
-কিংবা চঈজ পরীক্ষার মাধ্যমে উক্ত জীবাণুর নিউক্লিক এসিডের বিন্যাস নির্ণয়
প্রভৃতি এক বা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে মানব দেহে এই রোগের জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক রোগ নির্ণয়ে সহায়ক এবং রোগের জটিলতা নিরুপনকল্পে নানা ল্যাবরেটরী পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, টনসিলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ল্যাপ্টোস্পাইরোসিস, মেনিনজাইটিস, চিকুন গুনিয়া জ্বর, টাইফাস বা সান্নিপাতিক জ্বর প্রভৃতি রোগ একই উপসর্গ নিয়ে মানব দেহে দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনে একইরূপে ভিন্ন ব্যাধিসমূহের সম্ভাবনা দূরীকরণকল্পে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নানা ল্যাবরেটরী পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা
এই রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। কারণ এই রোগের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখেই এই রোগের নিন্মলিখিত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।

-এই রোগের চিকিৎসায় পান করতে হবে পানিসহ প্রচুর তরল খাবার। তরল খাবার হিসেবে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ প্রভৃতি দেয়া যেতে পারে। অন্ততপক্ষে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার তরল খাবার খেতে হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় তরল খাবার হিসেবে কোল্ড ড্রিংকসসমূহ পরিহার করাই উত্তম।
-সেই সাথে নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত শারীরিক বিশ্রাম।
-জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।
-সেই সাথে প্রয়োজন জ্বরের সময় দ্রুত দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আনার লক্ষ্যে রোগীর মাথায় ঠা-া জলপট্টি কিংবা সারা দেহ ঠা-া পানি দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে।
-বমির জন্য প্রয়োজন হতে পারে বমি নাশক ঔষধ।
-প্রয়োজনে রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থায় প্রধানত রোগীকে শীরা পথে প্রয়োজনীয় স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। সেই সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

-অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের সময় প্রয়োজনে রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তীব্র রক্ত ক্ষরণের সময় রোগীর রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা যখন প্রতি কিউবিক মি.লি. এ দশ হাজারের কম কিংবা রক্ত পাত হলে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে প্রতি কিউবিক মি.লি. এ পঞ্চাশ হাজার বা তার কম হলেও রোগীর শীরাপথে অনুচক্রিকা তথা প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হতে পারে।

- রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীর এক বা একাধিক অঙ্গ যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন এসব রোগীকে আইসিসিইউতে রেখে নিবিড় চিকিৎসা দেয়া হয়।

কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে
-বাড়িতে যথাযথ চিকিৎসা সত্বেও রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি,
-রোগী মুখে খাদ্য ও পানীয় খেতে না পারলে,
-তীব্র পেট ব্যথা, তীব্র বমি,
-হাত-পা ক্রমাগতভাবে ঠান্ডা ও নিস্তেজ হয়ে আসা,
-তীব্র অবসাদ কিংবা রোগীর আচরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন,
-রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ,
-ঋতুবতী মহিলার মাসিকের সময় অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,
-বিগত ৬ ঘন্টা যাবৎ আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাব না হওয়া,
-রোগীর হাত-পা নীল হয়ে আসা,
-রোগীর রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে গিয়ে শকে চলে যাওয়া,
-শরীরের গতি অতি দ্রুত ও ক্ষীণ হয়ে আসা,
-ক্যাপিলারী রিফিল টাইম ৩ সেকে-ের বেশি হওয়া,
-রোগীর রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা প্রতি কিউবিক মি.লি-এ এক লক্ষের কম হওয়া,
-রোগীর রক্তের ঘনত্ব তথা হেমাটোক্রিটের মাত্রা চল্লিশের বেশি হওয়া,
-রোগীর বুকে ও পেটে পানি জমা,
- রোগীর যকৃতের আকার ২ সে.মি. এর বেশি বৃদ্ধি পাওয়া।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যা করবেন না

কখনও ডেঙ্গু জ্বরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এসপিরিন বা ব্যথানাশক ঔষধ সেবন,
-রক্ত ক্ষরণের প্রবণতা দেখা না যাওয়া পর্যন্ত শীরা পথে স্যালাইন দেয়া,
-রক্তক্ষরণ তীব্র না হলে কিংবা রক্তের হেমাটোক্রিট অতিরিক্ত মাত্রায় কমে না গেলে রোগীকে রক্ত দেয়া,
-রোগের চিকিৎসায় অযাচিত ভাবে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধের ব্যবহার,
-রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার,
-শরীরের শীরা পথে স্যালাইন প্রবাহের গতি অপ্রয়োজনে অতি দ্রুত বাড়ানো বা কমানো,
- রোগীর দেহে অদৃশ্যমান রক্তপাত সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য রোগীর পাকস্থলীতে নল ঢুকানো।নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয়ঃ
প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তমপন্থা। তাই এই রোগের প্রতিরোধে নিন্মলিখিত পন্থাসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে।

ক) ব্যক্তিগত পর্যায়ে

-ঘুমানোর সময় বিশেষত বিকেল ও রাতে মশারি খাটিয়ে ঘুমানো,

-মশকীর দংশন প্রতিরোধকল্পে গায়ে ও পরার কাপড়ে মশক নিবারক ক্রীমের ব্যবহার কিংবা প্রয়োজনে লম্বা হাত ওয়ালা শার্ট ও ফুলপ্যান্টসহ মুজা পরিধান,

- প্রয়োজনে বাড়িতে মশার প্রবেশ নিয়ন্ত্রণকল্পে বাড়ির সকল জানালা, ভেন্টিলেটর মশা অনঅভিগম্য জালক বা স্ক্রিনের ব্যবহার।

খ) কমিউনিটি পর্যায়ে করণীয়ঃ

-স্থির পানিই যেহেতু এডিস মশার বংশ বিস্তারের প্রধান মাধ্যম। তাই গৃহস্থলীর আশপাশে পড়ে থাকা পানি জমার বিভিন্ন আধার যেমন- টিনের ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার, অব্যবহৃত পানির পাত্র, সেফটি ট্যাংক, এয়ার কুলার প্রভৃতিতে যাতে পানি জমতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে। প্রয়োজনে উপরোক্ত আবর্জনাসমূহ অপসারণের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

-প্রয়োজনে পানির ট্যাংক, হাউজ কিংবা ম্যানহোলের গর্তসমূহ উপযুক্ত মশক অনঅভিগম্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে পানির আধারের পানিসমূহ এডিস মশার বংশ বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে।

-ফুলের টব বা ফুলদনিতে জমে থাকা পানি প্রতি তিন দিন অন্তর ফেলে দিতে হবে।

-বাড়ির আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

গ) রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করণীয়

-মশার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মশার দমনে নিয়মিতভাবে ব্যাপক হারে মশক নাশক বিভিন্ন কীট নাশক যেমন- ডিডিটি, পারমেথ্রিন প্রভৃতি দেয়া যেতে পারে।

-মশার লাভা দমনে বাড়ির আশ-পাশের মজা পুকুর -ডোবায় বিভিন্ন কীটনাশক যেমন- কেরসিন, পেরিসগ্রীণ প্রভৃতি দেখা যেতে পারে। উপরোক্ত পুকুরে মশার লাভা সেবনকারী বিভিন্ন মাছ যেমন- তেলাপিয়া, নাইলোটিকা কিংবা গাপ্পি মাছের চাষ পরিবেশ বান্ধব বিকল্প পন্থা হতে পারে।

-সেই সাথে রাষ্ট্রীয় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ডেঙ্গু ও এর নিয়ন্ত্রণে যথাযথ স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রাদানের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ইলেকট্রোনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসমূহ এই জনসচেতনতা রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আছে কি কোন টীকা?
সম্প্রতি বাংলাদেশে সানোফি-এভেন্টিস নামক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী কর্তৃক উদ্ভাবিত ডেঙ্গুর প্রতিরোধে ডেঙ্গাভেক্সিয়া নামক টীকা বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটিকর্পোরেশনগুলোতে এর কার্যকারীতা নিরীক্ষার জন্য স্বল্পপরিসরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেয়া হচ্ছে। তথাপি সর্ব-সাধারণের ব্যবহারের জন্য এর সবুজ টিকেট পেতে হলে আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন), পিজিটি (মানসিক রোগ)
মেডিসিন ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, E-mail: [email protected]

৩৫০/১ সি, আফনান ভিলা, ফ্ল্যাট নং- ই-২, আহম্মেদ নগর,, পাইকপাড়া, নৌ পুলিশের কার্যালয়ের গলি-মিরপুর- ১, ঢাকা- ১২০৬
মোবাইল- ০১৫৫৭৪৪০২৮৭

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer