Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রগতির বার্তা নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে শহিদুল আলমের চিত্র প্রদর্শনী

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৮ মে ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

প্রগতির বার্তা নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে শহিদুল আলমের চিত্র প্রদর্শনী

ছবি : দৃক পিকচার লাইব্রেরি

ঢাকা : প্রতিথযশা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের তোলা ছবি নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন মসজিদ প্রাঙ্গণের বাইরের খোলা মাঠে হচ্ছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সমাজ-সভ্যতার চিরচেনা দৃশ্যপট, মানুষের যাপিত জীবন, সর্বোপরি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সঙ্গে ধর্ম বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়; এই প্রদর্শনী সেই প্রগতির বার্তা বহন করছে।

দেশের আলোকচিত্র শিল্পে নতুন যুগ নিয়ে আসা বরেণ্য আলোকচিত্রী শহিদুল আলম অতীতের সঙ্গে বর্তমানের নিবিড় মেলবন্ধন তুলে ধরা হচ্ছে ভিন্নমাত্রার এই প্রদর্শনীতে।‘অন্যকে আলিঙ্গন’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজক দৃক পিকচার লাইব্রেরি।

স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নকশায় নির্মিত ২০১৬ সালে ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরস্কারে ভূষিত ঢাকায় অবস্থিত বাইতুর রউফ মসজিদের তোলা আলোকচিত্র নিয়ে সেই মসজিদ প্রাঙ্গণেই হচ্ছে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ইসলাম ধর্ম যে আতঙ্ক নয় বরং উদারতা ও হৃদ্যতার প্রতীক সেই বার্তা সকলের মাঝে তুলে ধরা।

সোমবার সকালে বাইতুর রউফ মসজিদ প্রাঙ্গণে শুরু হয় দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী। এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল ‘অন্যকে আলিঙ্গন’ শিরোনামে এই প্রদর্শনী। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই প্রদর্শনী বিশ্বের বিভিন্ন গ্যালারিতেও প্রদর্শিত হবে।

‘অন্যকে আলিঙ্গন’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইব্রাহিম, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ‘অন্যকে আলিঙ্গন’ প্রদর্শনীর আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এবং বাইতুর রউফ মসজিদের ইমাম দ্বীন ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

দ্বীন ইসলাম তার বক্তব্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজকদের ধন্যবাদ জানায়। এরপর শহিদুল আলম তার বক্তব্যে ইসলাম ধর্মকে একটি স্বাধীন ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করেন এবং সমকালীন সময়ে এই ধর্মকে ভুল বোঝা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করেন।

ড. মোহাম্মদ ইব্রাহিম এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর প্রসঙ্গ ধরে বলেন, ‘ইসলাম সবসময় সৌন্দর্য্যের পক্ষে এবং আর্ট একটি সৌন্দর্য্য।’ ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উল্লেখ আছে বলে তিনি বলেন।

তিনি বলেন, হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর আমলে তিনি মদিনায় শহুরে আবহ তৈরি করতে এবং সামাজিক সৌজন্য আদান প্রদানে যেই প্রথম স্থাপনাটি গড়ে তুলেছিলেন সেটি ছিল মসজিদ। সে সময়ে মসজিদ ছিল সকলের মধ্যে সম্প্রদায় ও সম্প্রীতি বর্ধিতকরণে সামাজিকতা রক্ষার একটি পবিত্র স্থান। মসজিদ ব্যবহার করা হত ধর্মীয় কর্মকান্ডের জন্য, শিক্ষা প্রদানে, নবীজীর সরকার নিয়ন্ত্রণে দাপ্তরিক কর্মকান্ডের জন্য, সামাজিক কল্যাণের কাজে, নিরাময় কেন্দ্র হিসাবে, শারীরিক চিকিৎসা এবং সেবা শুশ্রূষার স্থান, এমনকি অবকাশ যাপনের জায়গা হিসাবেও। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, নবীজী মসজিদে নারীদের বিশ্রাম নেওয়ার এবং ঘুমানোর সু্যোগ দিতেন এবং অমুসলিমদেরও প্রার্থনা করার স্থান দিতেন।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং আজকের দিনের মসজিদ প্রাঙ্গণগুলোতে এই উদারতা এবং মানুষের কাছে পৌঁছানোর এমন মানুষ এবং মানসিকতার বড় অভাব বলে আমার মনে হয়। আমার এই প্রদর্শনী নারী-পুরুষ, অমুসলিম, তথা আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের জন্য উন্মুক্ত। এ শর্তেই আমি এই মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বাংলাদেশে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের আবাসিক কূটনীতিক প্রতিনিধি মুনির এম মুরালি, মাসিক অনন্যা ম্যাগাজিনের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নারী অধিকার নেত্রী শিরীন হক এবং আর অনেক দেশী এবং দিনভর উপস্থিত ছিলেন বিদেশী অতিথি ও আলোকচিত্রপ্রেমীরা।

বাইতুর রউফ মসজিদের নান্দনিক শিল্পকর্ম যে কাউকে মোহিত করবে। নবীজীর সময়কার মসজিদের ধারণার সঙ্গে এর মিল দৃশ্যমান। মসজিদের স্কয়ার এবং সিলিন্ডার আকারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রার্থনা কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত আদি জ্যামিতিক ধারাকে বজায় রাখা হয়েছে; পরিবেশের প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে প্রাকৃতিক আলোর যথাযথ ব্যবহার এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি না রেখে; কোন আসবাবপত্রের ব্যবহার হয়নি মসজিদে, যেন ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বের উদাহরণস্বরূপই; উৎকর্ষে শ্রেষ্ঠতার প্রমাণ মিলেছে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার লাভের মাধ্যমে; এ মসজিদের ইমামের জন্য কোন বিশেষ সুবিধাজনক পদমর্যাদার ব্যবস্থা নেই, যার ফলে তাঁর সঙ্গে যে কেউ সৌজন্য বিনিময় করতে পারে সাধারণভাবেই; পুরো স্থাপনা জুড়ে প্লাস্টার ছাড়া দেশি লাল ইটের ব্যবহার পশ্চিমা প্রভাবের সামনে স্বদেশী মনোভাব বজায় রাখে- সর্বোপরি এসবকিছুই এ মসজিদের অকৃত্রিমতা এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি সঠিক আনুগত্য প্রমাণ করে।

শহিদুল আলম সম্পর্কে

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া শিল্প ও সংস্কৃতি মাধ্যমে সর্বোচ্চ পুরষ্কার শিল্পকলা পদকে ভূষিত আলোকচিত্রী, লেখক, কিউরেটর এবং সামাজিককর্মী শহিদুল আলম বিগত ৩০ বছর ধরে এদেশ ও মানুষের সংগ্রামের কথা তাঁর ক্যামেরার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বারবার।

দ্য মিউজিয়াম অফ মডার্ণ আর্ট (MoMA), সেন্টার জর্জ পম্পিড্যু এবং টেট মডার্ণের আসরে তাঁর কাজের প্রদর্শনী হয়েছে; হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, ইউসিএলএ, অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তা শহিদুল আলম রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির একজন সন্মানিত ফেলো এবং সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক। লাইফ ম্যাগাজিনের সাবেক আলোকচিত্র সম্পাদক জন মরিস শহিদুল আলমের ‘মাই জার্নি অ্যাজ আ উইটনেস’ বইটিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘একজন আলোকচিত্রশিল্পীর লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বই’ হিসাবে।

দৃক পিকচার লাইব্রেরি সম্প্রতি পান্থপথে স্থানান্তরিত হয়েছে। দৃকের এই নতুন ঠিকানায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি গ্যালারিও। পান্থপথের দৃক গ্যালারিতে চলছে শহিদুল আলমেরই আর একটি প্রদর্শনী ‘দ্য বেস্ট ইয়ার্স অফ মাই লাইফঃ বাংলাদেশি মাইগ্র্যান্টস ইন মালায়শিয়া’, কিউরেট করেছেন এ এস এম রেজাউর রহমান।

দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড একটি পুরষ্কারপ্রাপ্ত উদ্ভাবনী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান যা এর অভাবনীয় দক্ষতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য সর্বজন স্বীকৃত। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দৃকের নানাবিধ কর্মকান্ডগুলোর মধ্যে সামাজিক সচেতনতা মূলক প্রচারণা, যোগাযোগ উপাদান তৈরি, গবেষণা, এবং সর্বাধুনিক মাল্টিমিডিয়া ও প্রশিক্ষণ সেবাদান অন্যতম। দৃশ্যমান মাধ্যমের শক্তি এবং দেশি এবং বিদেশি যোগাযোগের সাহায্যে দৃক সহজেই এর সাতটি বিভাগ দৃক ইমেজেস, আলোকচিত্র, প্রকাশনা, অডিও ভিজ্যুয়াল, গ্যালারি ও ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা, দৃক নিউজ এবং গবেষণা ও পাবলিক ক্যাম্পেইন -এর মাধ্যমে কম খরচে ওয়ান-স্টপ সেবা প্রদানে সক্ষম।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer