Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রকৃতিবন্ধু’ সম্মাননা পেল ৫ পথশিশু

আনোয়ার হোসেন সোহেল, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

‘প্রকৃতিবন্ধু’ সম্মাননা পেল ৫ পথশিশু

ছবি: প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন

ঢাকা : দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে এ আহবান জানান তারা। ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন, সবাই এগিয়ে আসলে পরিবেশ রক্ষায় আরো এগিয়ে যাবে দেশ।

শনিবার দুপুরে চ্যানেল আইয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘প্রকৃতিবন্ধু’ সম্মাননা জানানো হয় পাঁচ পথশিশুকে। এরা হলো-নাসিমা, ময়না, অনিক, সাগর ও শাকিল। বয়স ৬-৭। এ সময় পরিবারের ছায়ায় আদরে বেড়ে উঠার কথা। স্কুলে পড়াশোনা করার কথা। বিকেল হলেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা।

সুবিধাভোগী আর দশটা ছেলে-মেয়েদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শহর, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, নদী, ডাস্টবিন ইত্যাদি থেকে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, বিভিন্ন ময়লা কুড়িয়ে পেটের ভাত জোগাড় করতে গিয়ে অজান্তেই পরিবেশ পরিছন্ন রাখছে এসব শিশুরা।

তবে, অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এ কাজ শিশুদের জন্য নয়, আমাদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। এদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকৃতির বন্ধু হিসেবে পথশিশুদের পুরষ্কৃত করা হলো। এ অনুষ্ঠানের স্বার্থকতা-তাদেরকে নতুন জীবনে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। তারা যেন জীবনের কথা বুঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়।

তিনি বলেন, শহরকেন্দ্রিক শিশুদের জন্য শিশুকল্যাণ স্কুল আছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চল কেন্দ্রিক ঝরে পড়া শিশুদের জন্য ২০ হাজার স্কুল রয়েছে। আগে প্রায় ৩০ হাজার আনন্দ স্কুল ছিলো। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এসব স্কুলের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। সরকারের নিজস্ব খরচে পরিচালিত হচ্ছে শিশুকল্যাণ স্কুল। এর মাধ্যমে কোনো গ্রামাঞ্চলে ৩০/৪০ জন শিক্ষার্থী পেলেও সরকার সেখানে স্কুল করে দিচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, জীবন আর প্রকৃতি একটি অভিন্ন ব্যাপার। প্রকৃতি যদি না থাকে জীবন থাকবে না। তাই আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।

বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভাল রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যেখানে সেখানে উচ্ছিষ্টগুলো ফেলে শহর জঞ্জাল বাড়িয়ে তুলছি।

অবহেলিত শিশুদের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই উচ্ছিষ্টগুলো শিশুরা সংগ্রহ করছে, কাজটি তাদের জন্য দুরহ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন তাদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষপূর্তিতে তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।

বক্তব্য রাখেন, ইমপ্রেস টেলিফেল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি বলেন, আমাদের চারপাশ সুন্দর থাক, প্রকৃতি ভাল থাক-এটা সবারই চাওয়া। সবার এই চাওয়া নিয়েই কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। আর এ কারণেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সবাই। ফাউন্ডেশনের কাজের সফলতা কামনা করেন তিনি।

আরো বক্তব্য রাখেন, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক আবদুর রশিদ মজুমদার। তিনি বলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। একাজের জন্য তিনি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ড. ইনাম আল হক, মঞ্জুরুল হান্নান খান, ড. মনোয়ার হোসেন, ড. নূরজাহান সরকার, আবদুল ওহাব, ড. ইশতিয়াক সোবহান, ড. জসিম উদ্দিন ও জুনায়েদ কবিরসহ প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে কেক কেটে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়।

২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রকৃতি সংরক্ষণের ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। দেখতে দেখতে ৭ বছর পূর্ণ হলো প্রতিষ্ঠানটির। ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রেক্ষাপটে গবেষণা, সচেতনতা, শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’-এর পথ চলা শুরু হয়।

দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারক মহলের সামনে তুলে ধরতে গত সাত বছরে দুর্গম পাহাড় থেকে গভীর অরণ্য আর সাগরতলে ছুটে গেছে প্রকৃতি ও জীবন দল। অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানটি দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটির ২৩৭টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে।

প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের জন্য দেশে-বিদেশে ফাউন্ডেশন এবং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু সম্মানিত হয়েছেন। ফোবানা এ্যাওয়ার্ড-২০১৬, জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫, চাঁদ সুলতানা পুরস্কার-২০১৫, বিজনেস এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪, বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৩, এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছরের মতো এবার প্রকৃতি ও জীবন ফাউ-েশন-চ্যানেল আই পরিবেশ সংরক্ষণ পদক প্রদান করা হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer