Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পোল্ট্রি শিল্পে জাগরণ : যুক্ত হচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা

এস এম মুকুল

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ২২ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

পোল্ট্রি শিল্পে জাগরণ : যুক্ত হচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা

ছবি : সংগৃহীত

আমাদের পোল্ট্রি শিল্প দেশীয় পুঁজি এবং দেশীয় উদ্যোগে তিলে তিলে গড়ে উঠা একটি নতুন শিল্প ইতিহাস। এই শিল্পটির কল্যাণে একইসাথে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি এবং গ্রামীণ মানুষের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এই শিল্পটি মাংস ও ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বিপুল বর্ধিষ্ণু জনশক্তির পুষ্টি চাহিদা মিটাচ্ছে। গার্মেন্টসের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। দেশের অন্যতম পোল্ট্রি শিল্প-এলাকা টাঙ্গাইল জেলা। সারাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মুরগীর মাংস ও ডিমের চাহিদার যোগান আসে এ জেলা থেকেই। জেলায় পোল্ট্রিশিল্প খাতে প্রতিদিন প্রায় ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। দেশের অন্যতম আরেকটি পোল্ট্রি শিল্প এলাকা গাজীপুর। দেশের এক-চতুর্থাংশ ডিম ও মাংস উৎপাদন হচ্ছে গাজীপুরে। উৎপাদন খরচ কমাতে গাজীপুরের ২২ খামারি নিজেদের খামারের প্রয়োজনীয় ফিড নিজেরাই উৎ্পাদন করছেন। বর্তমানে সারা দেশে ছোট-বড় খামার রয়েছে কমবেশি ৭০ হাজার। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।

দেশে এক সময় কোন জিপি ফার্ম ছিল না। পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। বর্তমানে এ খাতে ৮ টি কোম্পানির ১৫ টি খামার গড়ে উঠেছে। বেড়েছে পিএস খামার বা হ্যাচারি সংখ্যা। দেশে বর্তমানে ২০৫ টি হ্যাচারি রয়েছে। এক সময় প্যাকেটজাত ফিড আমদানি হতো। এখন দেশেই ১৮৬ ফিডমিল রয়েছে। আগে দেশীয়ভাবে তেমন কোন ওষুধ তৈরি হতো না। এখন প্রায় ৩০টি কোম্পানি দেশীয়ভাবে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করছে। ফলে আমদানি নির্ভরতা কমছে। এভাবেই নীরবে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিপ্লব ঘটছে। দেশে একই সঙ্গে বেড়েছে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন। পোল্ট্রি শিল্প মানুষের স্বপ্ন পূরণের জায়গা। এ খাতে শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। পরোক্ষভাবে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল ৬০ লাখ মানুষ। ২০৩০ সালে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে প্রায় ১ কোটি মানুষ। সম্ভাবনাময় এ শিল্প ২০২১ সালের মধ্যে বছরে ১২০০ কোটি ডিম ও ১০০ কোটি ব্রয়লার উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হলে দেশের চাহিদা পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।

ইতোমধ্যেই পোল্ট্রি শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগে ৭টি বিদেশি কোম্পানির মধ্যে ৫টি ভারতের, ১টি থাইল্যান্ডের এবং ১টি চীনের। জানা গেছে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতায় পড়েছে দেশি খামারগুলোর। বিদেশি অর্থপুষ্ট খামারগুলো ঋণ নিয়ে আসছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ সুদে। আর দেশি খামারগুলোকে ঋণ সংগ্রহ করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে। তাই বিদেশি খামারগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্থানীয় বড় খামারগুলোকেও অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঝরে পড়ছে ছোট বা প্রান্তিক খামারিরা। তাদেও দিকে সরকাওে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ সমস্যার জরাজঞ্জালে প্রান্তিক খামারিদের হতাশা বাড়ছে। দেশে কোন ডিম সংরক্ষণাগার নেই। এ কারণে ডিমের দাম খুব বেশি উঠানামা করে। সংরক্ষণাগার থাকলে সারা বছর ডিমের দাম একই রকম থাকবে। যার মাধ্যমে ভোক্তারা এবং খামারিরা উপকৃত হবেন। তাই এই শিল্পের স্বার্থে সরকারি ডিম সংরক্ষণাগার স্থাপন করা খুবক জরুরি। তাছাড়া দেখা গেছে- মুরগির খাদ্য তৈরির কাঁচামাল ভুট্টার দাম কমলেও ফিডের দাম কখনো কমে না। ডিমের দাম নির্ধারণ করে ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা।

প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে ডিম ও মাংস সংরক্ষণাগার স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি। কৃষিক্ষেত্রের মতো পোল্ট্রি শিল্পের ছোট ছোট খামারিকে জন্য ৫ শতাংশ সুদে আলাদা ঋণ প্রদান করা, পোল্ট্রি বীমা চালু করা, প্রশিক্ষণের জন্য আঞ্চলিক প্রাণিসম্পদ অফিসগুলো কাজে লাগানো, বাজেটে ভুট্টাসহ পোল্ট্রি ফিডে ব্যবহৃত বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), সয়াবিনের ওপর থেকে ১০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ওষুধের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক এবং ডিডিজিএস এর ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টদের দাবিগুলো বাস্তবতা যাচাই করে বিবেচনা করা দরকার।

পক্ষান্তরে এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উচিত হবে- সবচেয়ে নিরাপদ ও পুষ্টিমাণ সমৃদ্ধ পোল্ট্রির ডিম ও মাংস যত সুলভে দেশের বাজার সৃষ্টি করা যায় এ শিল্পের বিকাশ ততই ত্বরান্বিত হবে। সাশ্রয়ী দামে জনগণ ডিম আর মাংস পেলে সবাই তা ভোগ করতে পারবে। আর তখনই পুষ্টির ঘাটতি কমবে আমরা পাব স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম। ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফালোভী হলে তার ফল ভাল হবে না। চায়নাদের মতো মানসিকতা নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ী মহলকে কাজ করতে হবে- কম লাভে বিক্রির জন্য পণ্যকে সহজ্যলভ্য করা আর বেশি বিক্রির মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া।

এস এম মুকুল : কৃষি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ও কলাম লেখক, [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer