Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত মনু সেতু, দ্রুত সংস্কারের দাবি

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১১, ১৭ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত মনু সেতু, দ্রুত সংস্কারের দাবি

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : সম্প্রতি অব্যাহত বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোষ্ট সড়কের মনু সেতুটি। ভাঙ্গনের হাত থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাময়িকভাবে রক্ষা করলেও নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের আঘাতে এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দ্রুত সংস্কার কাজের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

জানা যায়, গত মে মাস থেকে টানা বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল ¯্রােতে চাতলাপুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির নিচ থেকে মনু সেতু এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হতে থাকে। ফলে সেতুটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে। পরবর্তীতে চাতলাপুর মনু সেতু রক্ষায় মৌলভীবাজারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজ উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে সিমেন্ট ও বালু ভর্তি বস্তা সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর পশ্চিম প্রান্থে স্থাপন করে সাময়িকভাবে সেতুটি রক্ষার চেষ্টা করে।

গত শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার রাতভর টানা বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থাপিত সিমেন্ট বালু মিশ্রিত অসংখ্য বস্তা ভেসে গেছে। ফলে মনু সেতুটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনের ধরণ দেখে ধারণা করা যাচ্ছে দ্রুত প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন না করলে আগামীতে সেতুর উত্তর পশ্চিম প্রান্থসহ সড়কের একটি অংশ ভেঙ্গে যেতে পারে।

শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আলী বলেন, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনের নমুনায় তারা আতঙ্কিত। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জরুরী ভিত্তিতে সেতু রক্ষার সাময়িক চেষ্টা করলেও সেতুর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর সেতু ভেঙ্গে গেলে শুধু এ ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের মানুষের সমস্যা নয়, দুই দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছাড়াও আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

মনু নদীর দক্ষিণ পূর্বাংশে রয়েছে শরীফপুর ইউনিয়নের নয় গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসতি। তাছাড়া এ অংশে তিনটি গ্রাম্য হাট ছাড়া ভারতের ত্রিপুরার সাথে সংযুক্ত চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন, অভিভাসন কেন্দ্র (ইমিগ্রেশন পোষ্ট) একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুইটি বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি। মনু নদীর উপর আগে কোন সেতু না থাকায় নৌকা ব্যবহার করে দ্’ুদিকে যাতায়াত করা হত। সেতুর ওপারের লোকজন নৌকায় সেতু অতিক্রম করে কুলউড়া উপজেলা সদরসহ জেলা সদর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীরাও চাতলাপুর চেকপোষ্ট হয়ে দুই দেশে যাতায়ত করতেন।

২০০৫ সালে চাতলাপুর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় মনু নদীর উপর ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি ঢালাই সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতু নির্মাণের পর দু’দিকে যোগাযোগ সহজতর হওয়ার পাশাপাশি ভারতের উত্তর ত্রিপুরার সাথে আমদানি রপ্তানি বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে চাতলাপুর এলাকার মনু সেতুটি যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এদিকে মনু সেতু রক্ষায় গত বুধবার বিকালে শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সহ¯্রাধিক জনতা প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নের দাবিতে সেতুর উপর দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা দ্রুত সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এলাকা মেরামতের দাবি জানান।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দুর্বল হওয়ায় জরুরী পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু এলাকায় গাছের পাইলিং করে বালু সিমেন্ট মিশ্রিত বস্তা স্থাপন করে সেতু রক্ষার চেষ্টা করা হয়ছে। আসলে সেতু রক্ষা করতে হলে সেতু এলাকার পশ্চিম দিকে কমপক্ষে ৫০০ ফুট প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার করে স্থায়ীভাবে উন্নয়ন করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দু বিজয় শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কোন কাজ করা যায়নি। এ এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের উন্নয়নসহ চেকপোষ্ট থেকে মৌলভীবাজার সদর পর্যন্ত মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩৯টি পয়েন্টে পাথরের ব্লক স্থাপনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুমোদন হলে শুষ্ক মৌসুমে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে ফাঁক পাওয়া গেলে জরুরি ভিত্তিতে চাতলাপুর মনু সেতু এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নে কাজ শুর করা হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer