ঢাকা : বাংলাদেশে বিদ্যমান পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ সালের ৪ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ধারা ৫ অনুযায়ী পাঁচ ধরনের পারিবারিক কলহের বিষয় এই আদালতকে একক এখতিয়ার দেয়া হয়েছে।
এক. বিবাহ বিচ্ছেদ
দুই. দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার
তিন. দেনমহর
চার. ভরণপোষণ
পাঁচ. অভিভাবকত্ব এবং শিশু সন্তান্দের হেফাজত
বিদ্যমান এই অধ্যাদেশটির বিধানাবলি বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মালম্বিদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
পাঁচ ধারায় উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ে এক এক ধর্মালম্বিদের এক এক ধরণের নিয়ম রয়েছে এবং পারিবারিক সমস্যাগুলো যার যার ব্যাক্তিগত ধর্মীয় আইনুযায়ী সমাধান করা হবে। যেমন ; মুসলমানদের ক্ষেত্রে দেনমোহর বিষয়টা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, তবে হিন্দু বা ক্রিস্টান্দের ধর্মে এই বিষয়টা নেই।
এখন প্রাথমিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি অন্য ধর্মালম্বিদের দেনমোহর সংক্রান্ত কোন সমস্যা পারিবারিক আদালতে আসে তাহলে আদালত কিভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে? সেক্ষেত্রে পারিবারিক আদালত মুসলিম আইনের দেনমোহর সংক্রান্ত মূলনীতিগুলো অনুসরণ করে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।
দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটা মামলার নজির রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ;
এক. খোদেজা বেগম বনাম মোহাম্মাদ সাদেক সরকার মামলায় একক বেঞ্চে মহামান্য উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে, "দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার বিষয়ের মামলা সংবিধানে উল্লেখিত স্বাধীনতা,সমতা , ন্যায়নীতি ও সামাজিক বিচারের পরিপন্থি এবং বাংলাদেশের কোন আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোন মামলা রক্ষণীয় নয়।"
দুই. হোসনা জাহান মুনা বনাম মোহাম্মাদ শাহাজাহান সাজু মামলায় একক বেঞ্চে মহামান্য উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে, " আইনসিদ্ধ কোন কারন ব্যাতিত কোন স্ত্রী তার স্বামীর দাম্পত্য অধিকার স্থগিত রাখতে পারবে না । যদি রাখে তাহলে তার স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারবে।
তিন. মোহাম্মাদ চান মিয়া বনাম রুপনাহার মামলায় একক বেঞ্চে মহামান্য উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে, "দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার বিষয় একটি পারস্পরিক অধিকার এবং এই বিষয়ের মামলা সংবিধানে উল্লেখিত ২৭ অনুচ্ছেদ, স্বাধীনতা,সমতা , ন্যায়নীতি ও সামাজিক বিচারের পরিপন্থি নয় ।
বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আদালত, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ এর বিধানাবলি সাপেক্ষে মামলার শুনানি ও বিচারকার্জ পরিচালনা ও ডিক্রি প্রদান করবে।
মুসলিম বিবাহ এবং বিচ্ছেদ নিবন্দন আইন অনুযায়ী প্রত্যেক বিয়ে নিবন্দন করা বাদ্ধতামুলক করা হয়েছে, অমান্যে শাস্তির বিধান। দেনমোহরের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
অভিভাবকত্ব এবং শিশু সন্তান্দের হেফাজতের বিষয়ে পারিবারিক আদালত,অভিভাবক এবং হেফাজত আইন ১৮৯০ এর বিধানাবলি অনুসরণ করবে।
পারিবারিক আদালতে আরজি দাখিল, সমন ও নোটিশ জারির ক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির নিয়মাবলী অনুসরণ করা হবে। সর্বোপরি পারিবারিক আদালতের সহজাত ক্ষমতার ভিত্তিতেও যেকোনো ধরনের পারিবারিক সমস্যার নিস্পত্তির নজির রয়েছে।
লেখক: শিক্ষানবিস আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।
বহুমাত্রিক.কম