Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

পাতাপোড়া রোগের প্রকোপ ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ আমন মাঠে

মো. নজরুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১২ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ০২:২৯, ১২ অক্টোবর ২০১৭

প্রিন্ট:

পাতাপোড়া রোগের প্রকোপ ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ আমন মাঠে

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলার প্রায় সর্বত্র বিক্ষিপ্তভাবে পাতা পোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। জেলার ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, মুক্তাগাছা, ফুলপুর, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে পাতা মোড়ানো ভেকটেরিয়া রোগ দেখা দেয়ায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানের শীষের গোড়ায় বাদামী ধরনের দাগ পড়ছে। ফলে ধান পুষ্ট হওয়ার আগেই চিটা হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। একই সাথে উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। প্রবল বর্ষণ, উচ্চ তাপমাত্রার আদ্রর্তা, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা এবং ভোরে শিশির পড়া এ রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিরুপায় হয়ে কৃষক ছুটছেন গ্রাম ও শহরের ছত্রাক নাশকের দোকানে দোকানে। এর পরও বাঁচাতে পারছেন না তাদের বোরো ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, জেলায় ধানের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগ দেখা দেয়। প্রথম দিকে দুই একটা ধানে শীষ সাদা আকার ধারণ করে। আস্তে আস্তে পুরো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি অন্য জমিতে ছড়াচ্ছে। সাদা আকার ধারণ করা শীষগুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের লোকজনের শরণাপন্ন হলে তারা ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শে কাজ করেও রক্ষা হচ্ছে না ক্ষেতে থাকা ধান।

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের দরিল্যা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ব্রি- ৪৯ আমন বীজ রোপণের পর ধানের শীষ বের হওয়ার মূহূর্তে ধান গাছের পাতা পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ৪/৫ বার ওষুধ ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। তার প্রায় এক একর জমির ধান প্রায় পুরো শুকিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে এখন শুন্য হাতে মাঠ থেকে ফেরার উপক্রম দেখা দিয়েছে। তার মতো এলাকার আরো শত শত কৃষকের একই অবস্থা বিরাজ করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল মাজেদ বলেন, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, মুক্তাগাছা, ফুলপুর, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে পাতা মোড়ানো ভেকটেরিয়া রোগ দেখা দিয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এবারে আমন আবাদে পাতা পোড়া রোগের আক্রম বেশি দেখা দিয়েছে। এ রোগ সাধারণ বৃষ্টির পানি এবং বাতাসে ছড়ায়। এবারে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ার করণে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ফসলের মাঠে ব্রিধান ৪৯, মালতিসহ হাইব্রিড ও উফসী জাতে বেশি আক্রমণ করছে। রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমাদের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক এলাকায় অবস্থান করছেন। উপ-পরিচালক আরো জানান, প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৬০ গ্রাম পটাশ অথবা ৬০ গ্রাম থিওভিট অথবা ভেকট্রোবার্ণ ৩০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে গুলে তা ধান গাছে স্প্রে করতে হবে।

এ দিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য দেয় জেলায় ৪১ হেক্টর জমিতে পাতা পোড়ানো রোগ দেখা দিয়েছে। ত্রিশাল উপজেলা কৃষি অফিসার দ্বীপক কুমার পাল গতকাল দুপুরে জানান ত্রিশাল উপজেলাতে ১৫০ হেক্টও জমিতে এই রোগ দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ঝলসানো রোগ নামেও পরিচিত। পাতাপোড়া রোগের ব্যাকটেরিয়া জীবাণু আক্রান্ত। গাছ বা তার পরিত্যক্ত গোড়া, কুটা ও বীজ এবং আগাছার মধ্যেও থাকতে পারে। শিশির, সেচের পানি, বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুঁতির দানার মত গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে। পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে এ রোগের জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ফলে গাছের বিভিন্ন বয়সে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ (ক্রিসেক, পাতা পোড়া ও ফ্যাকাশে হলুদ) দেখা দেয়। বীজতলা থেকে চারা তোলার সময় যদি শিকড় ছিড়ে যায় তখন রোপণের সময় ব্যাকটেরিয়া সে ক্ষতের মধ্য দিয়ে গাছের ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া কচি পাতার ক্ষত স্থান দিয়েও প্রবেশ করে।

আক্রান্ত গাছের নিচের পাতা প্রথমে নুয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। এভাবে গোছার সকল পাতাই মরে যেতে পারে। এ অবস্থাকে ক্রিসেক বা নেতিয়ে পড়া রোগ বলা হয়। চারা বা প্রাথমিক কুশি বের হওয়ার সময় গাছের পাতা বা পুরো গাছটি ঢলে পড়ে। মাঝে মাঝে আক্রমণ প্রবণ জাতের ধানে পাতাগুলো ফ্যাকাশে হলদে রঙের হয়। গাছের বয়স্ক পাতাগুলো স্বাভাবিক সবুজ থাকে, কচি পাতাগুলো সমানভাবে ফ্যাকাশে হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। পাতা পোড়া রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমে পাতার কিনারা অথবা মাঝে নীলাভ সবুজ রঙের জলছাপের মত রেখা দেখা যায়।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer