ছবি: বহুমাত্রিক.কম
বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বড় বাশাইল গ্রামে প্রবাস ফেরত গৃহবধু ও তার দুবাই প্রবাসী স্বামীর পাঠানো অর্থ ও স্বর্ণালংকার হজম করতে শাশুড়ি, ভাসুর আর জা’য়ের প্ররোচণায় পাগল আখ্যায়িত ময়নার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন সাবেক চিফ হুইপআবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
অভিযুক্তদের পক্ষাবলম্বন করে টাকার বিনিময়ে ওই গৃহবধূকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে ওসি মো. মনিরুল ইসলাম সরকারি চিঠির নামে ‘প্রত্যয়নপত্র’ দিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরকে। চিকিৎসার নামে শিকলে বেঁধে গৃহবধূর অপচিকিৎসার সংবাদ দেখে ওই গৃহবধূর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
আগৈলঝাড়ার বড় বাশাইল গ্রামের দুবাই প্রবাসী বাবুল বৈদ্যর জর্ডান ফেরত স্ত্রী দু’সন্তানের জননী ময়না বৈদ্য (৩৫) কে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ দিন যাবৎ তার ভাসুর বিপুল বৈদ্য, শাশুড়ি গোলাপী ও তার পরিবারের সদস্যরা রহস্যজনক কারণে পাগল আখ্যা দিয়ে ঘরের একটি কক্ষে লোহার শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে।
ময়না জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের পাগলা নয়ামাটি এলাকার বিজয় বৈদ্যের মেয়ে। পারিবারিকভাবে বড় বাশাইলের বাবুল বৈদ্যের সাথে বিয়ে হয়। ওই ঘরে তার দু’টি সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে বৃষ্টি বর্তমানে দশম শ্রেণী এবং ছেলে সাগর নবম শ্রেণীতে পড়ছে। বিয়ের পরপরই বাবার টাকায় তিনি জর্ডান যান। স্বামী বাবুলকে তার টাকায় দুবাই পাঠান। গত তিন বছর পূর্বে জর্ডান থেকে বাড়ি ফিরে এলে দুবাইতে থাকাবস্থায় সম্প্রতি বাবুল আবার বিয়ে করে। এরপর থেকে তার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে তার ভাসুর বিপুল ও শাশুড়ি গোলাপী তার কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা এবং সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরৎ চাওয়ার কারণে তাকে লোহার শিকল দিয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়।
বিষয়টি সাংবাদিকরা গত রোববার থানাকে অবহিত করলে এসআই শাহজালাল ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকলে আটক গৃহবধূ ময়নাকে অবমুক্ত করে তার সুচিকিৎসার জন্য ওই পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে অভিযুক্ত সদস্যদের সন্ধ্যায় থানায় ওসির সাথে দেখা করতে বলেন।
ওইদিন সন্ধ্যায় ওসির সাথে ওই পরিবারের অভিযুক্ত সদস্যরা স্থানীয় ইউপি সদস্য খায়ের মোল্লা, কালাম মোল্লাসহ দেখা করে ওসিকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য অর্থ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি মো. মনিরুল ইসলাম।
অভিযোগকারীরা বলেন, ওসি মনিরুল ইসলাম ৭ অক্টোবর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বরাবরে ২০৫৬ (৫) নং স্মারকে ‘ময়না দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক রোগে ভুগছে, তার স্বামী বিদেশ থাকে। তার চিকিৎসা করার জন্য নিজস্ব কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। বর্তমানে ময়না বৈদ্যকে বাড়ির লোকজন আটকে রেখেছে’ জানিয়ে তার চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানান।
যার অনুলিপি পুলিশ সুপার, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর, গৌরনদী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা তার ডিপার্টমেন্টে এরকম রোগীর চিকিৎসার সুযোগ নেই জানিয়ে পরদিন ওসিকে চিঠির জবাব দেন তিনি।
এদিকে এ সংক্রান্ত খবর দেখে বরিশাল- ১ আসনের এমপি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের ডেকে মঙ্গলবার রাতে ময়নার খোঁজ খবর নেন।
বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালার মাধ্যমে নির্যাতিতা গৃহবধূ ময়নার চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে হাসপাতালের ১১০ নং রুমে ময়না চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম