Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

পতিসর কাছারি বাড়িতে পর্যটকদের ভিড়

আব্দুর রশীদ তারেক, নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৪৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

পতিসর কাছারি বাড়িতে পর্যটকদের ভিড়

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

নওগাঁ : “ আমাদের ছোট ছোট নদী/ চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে” বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত “আমাদের ছোট নদী” কবিতা যা কবি লিখেছিলেন জেলার আত্রাইয়ের পতিসরের কাছারি বাড়িতে অবস্থানের সময়। যে বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে আঁকা-বাঁকা নাগর নদী।

বিশ্বকবি তার বিখ্যাত কবিতা “দুই বিঘা জমি” “সন্ধ্যা” সহ অসংখ্য বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম রচনা করেছেন এই পতিসরের কাছারি বাড়িতে বসে।

এবার ঈদে কবিগুরুর কাছারি বাড়িতে লক্ষ্য করা গেছে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। এলাকার মানুষ এই বিখ্যাত বাড়িকে ঈদে স্ব-পরিবারে ভ্রমণ করার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিনোদন পাওয়ার জন্য সবাই কবিগুরুর এই কাছারি বাড়িকে পছন্দ করে নিয়েছেন। জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে কবিগুরুর এই কাছারি বাড়ি অন্যতম।

রবি ঠাকুরের এই পতিসরের কাছাড়ি বাড়িটি এক অনন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থান পেতে পারে দেশের পর্যটন শিল্পের মধ্যে। এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে শুধু কবির জন্মোৎসবে নয় বছরের যে কোন সময়ে দেশি-বিদেশি রবীন্দ্র ভক্ত পর্যটকরা এখানে আসবেন যার বিনিময়ে সরকার রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবেন অর্থ।

প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ এই পতিসর কাছারি বাড়িতে বিশ্বকবির জন্মোৎসব সরকারি ভাবে জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন করা হয়। প্রায় এক বিঘা জমির উপর অবস্থিত কবির এই কাছারি বাড়ি। এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র।

সূত্রে জানা, ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই কালিগ্রাম পরগনাকে ক্রয় করে ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অংশে অর্ন্তভুক্ত করেন। এরপর বিশ্বকবি ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আসেন তার এই পতিসরের কাছারি বাড়িতে জমিদারি দেখাশোনা ও খাজনা আদায় করতে।

সেই সময় এই পরগনা থেকে খাজনা আদায় হত প্রায় ৫০,৪২০টাকা। বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ থেকে তিনি এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালিন সময়ে এখানে অবস্থিত কৃষি ব্যাংকের মারফত পাঠিয়েছিলেন। এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেয়ার লক্ষে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনষ্টিটিউশন স্থাপন করে এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শত বিঘা জমি দান করেন।

১৯৩৭ সালের ২৬ জুলাই কবি শেষ বারের মত এসেছিলেন তার পতিসরের কাছারি বাড়িতে।

কবির ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ সালে এই এলাকার প্রজাদের জন্য সর্বপ্রথম আধুনিক সময়ের কলের লাঙ্গল এনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তৎকালিন সরকার ১৯৫২ সালে এক অডিন্যান্স বলে কালিগ্রাম পরগনার জমিদারি কেড়ে নিলে ঠাকুর পরিবারের এই জমিদারি হাতছাড়া হয়ে গেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বস্ত্রীক পতিসর যাতায়াত বন্ধ করে দেন। তৎকালিন রবীন্দ্র বিরোধী পাকিস্তান সরকার ১৯৪৭ হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে দেয়নি ।

এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে সেই সময়ের তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর সর্বপ্রথম অতিথি হিসেবে এখানে এসেছিলেন। ১৯৯৪ সালে সরকারি ভাবে পতিসরের এই রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং সরকারি ভাবে প্রতি বছর এখানে বিশ্বকবির জন্মোৎসব উদযাপন করা হয়।

এখানে বর্তমানে একটি দৃষ্টি নন্দন ডাকবাংলো, একটি কৃষি কলেজ ও কাছারি বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব দিকে নির্মাণ করা হয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ। এছাড়াও কবির স্মৃতির সাক্ষর বহনকারি ঘর-দরজাও অনেকটা মেরামত করা হয়েছে।

গত বছরের ১এপ্রিল হতে এখানে টিকেটের ব্যবস্থা করা হয় । মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫টাকা, মাধ্যমিকের পর হতে সকল পর্যায়ে ১৫টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০টাকা এবং ইউরোপের নাগরিকদের জন্য ১০০টাকা হিসেবে টিকেটের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর। নওগাঁ শহর থেকে পতিসরের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার এবং আত্রাই হতে ৪৬ কিলোমিটার। নওগাঁ এবং আত্রাই হতে মাইক্রোবাস, বাস, সিএনজি যোগে পতিসরে যাওয়া যায়।

বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আল মামুন বলেন, ঈদে এবছর তুলনামুলক ভাবে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। এতে সরকার কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব হিসেবে এখান থেকে আয় করেছেন। তবে কবিগুরুর এই কাছারি বাড়িকে জাতীয় পর্যায়ে যদি আরো আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তোলা যায় তাহলে এটি একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

রাণীনগর থেকে আসা দর্শক মো: এরশাদুল ইসলাম জানান, আমি ঢাকায় চাকরি করি। পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। তাই ঈদে কবিগুরর পতিসরে স্ব-পরিবারে এসেছি বেড়ানোর জন্য। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো বলে হাজার হাজার দর্শক একটু বিনোদনের জন্য এখানে এসেছে স্ব-পরিবারে। ভবিষ্যতে এখানে শিশুদের জন্য পার্কের ব্যবস্থা করলে অনেক ভালো হবে।

আদমদীঘি থেকে আসা হেলাল উদ্দিন বলেন ব্যস্ততার কারণে স্ব-পরিবারে কোথাও বেড়ানোর সময় হয় না। তাই এবার ঈদে স্ব-পরিবারে দিনব্যাপি ভ্রমণের জন্য কবিগুরুর কাছারি বাড়িতে এসেছি। আমার সন্তানদের শিক্ষনীয় অনেক বিষয় এখানে আছে। তারা বিশ্বকবির অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচয় হতে পারবে বলে মাঝে মধ্যেই এখানে বেড়াতে আসার চেষ্টা করি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer