Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারি চাষ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারি চাষ

ঢাকা : নড়াইল জেলায় দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারি চাষ। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে।

নড়াইলের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্ট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের অন্তত ২০টি জেলায়। সুপারির মৌসুমকে সামনে রেখে জেলার শত শত ব্যবসায়ী ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা।

নড়াইল কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, পূর্ব থেকেই সুপারি উৎপাদন হত এ জেলায়। কিন্তু তখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ হতো না। তখন শুধু জেলার বিভিন্ন বসত ভিটার চারিপাশে, বিভিন্ন পতিত জমিতে, ঘের অথবা পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে সুপারি গাছ ছিল।

সুপারির ফলন ভাল হওয়ায় ও বাজারে সুপারির দাম ভাল থাকায় জেলার চাষিরা দিনে দিনে সুপারি চাষের দিকে আগ্রহ দেখায়। গত ১০ বছর পূর্ব থেকে জেলার চাষিরা স্বল্প পরিসরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ শুরু করে। আর এ চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন সুপারি চাষ বাড়ছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার ৩ উপজেলায় সুপারি বাগান অনেক থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে এর চাষ করা হয়েছে। তবে কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও, কৃষক নেতা ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। জেলার তিনটি উপজেলাতেই এ চাষ ভাল হয়। তবে সদরে ও লোহাগড়া উপজেলাতে সুপারি চাষ অনেক বেশি।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত বেলে-দোয়াশ মাটিতে সুপারি চাষ ভাল হয়। জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সুপারির চারা লাগানো হয়। ৫ ফুট বাই ৫ ফুট দুরত্ব রেখে প্রতিটা চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর ৭-৮ বছর পর থেকে ফল আসা শুরু হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গাছে ফুল আসে ফুল থেকে ফল হয় এরপর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পরিপক্ক সুপারি গাছ থেকে পাড়া হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৬৮ মে.টন সুপারি উৎপাদন করা হয়। সুপারি গাছে তেমন কোন রোগ হয়না।

তবে সুপারি পাকার আগে কোন কোন গাছে সুপারিতে পোকা লাগে। এক প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করে সেটি দমন করা যায়। একটি গাছ থেকে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ বছর একভাবে ফল (সুপারি) পাওয়া যায়।

নড়াইলে সাধারনত বিভিন্ন হাটে-বাজারে সুপারি বেচাকেনা হয়। তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী হাট হল সদরের রুপগঞ্জ হাট এবং লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা বাজার। রূপগঞ্জ বাজারে প্রতিদিনই সুপারি বেচাকেনা হয়, তবে রোববার ও বৃহস্পতিবারে বড় পাইকারী হাট বসে। এড়েন্দা বাজারে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবারে সুপারির বড় পাইকারী হাট বসে, এহাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যায়।

এড়েন্দা বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ জানান, স্থানীয়ভাবে ২০০ পিস সুপারিতে এক কুড়ি হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি কুড়ি সুপারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের কাছে পাাইকারি বিক্রি করি। লাভ ভাল হয়।

লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা থেকে আসা সুপারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নওশের জানান, সে ১৪ বছর যাবত নড়াইল থেকে সুপারি পাইকারি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। তিনি প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক সুপারি নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে। লাভ ভাল হয়।

রুপগঞ্জ বাজারের সুপারী ব্যবসায়ী নির্মল কুমার দাস ও উত্তম দাস জানান,সুপারির মৌসুমে জেলায় শতাধিক হাট, বাজার ও বিভিন্ন স্থানে সুপারি বেচা কেনা হয়। চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে তিনটি পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে সেগুলো বিক্রি করা হয়। কাচা সুপারি রোদে শুকিয়ে সুপারির খোসা (খোলস) ফেলে দিয়ে প্রতি কেজি শুকনা সুপারি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা।

পাকা সুপারি বাজার থেকে কিনে পানিতে ৩ থেকে ৪ মাস পচন দিয়ে (ভিজিয়ে) সেগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়। পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় মজা সুপারি বলে। এই মজা সুপারির চাহিদা বেশি তাই দামও ভাল পাওয়া যায়।এছাড়া বাজার থেকে কাঁচা-পাকা সুপারি কিনে সেগুলো সাথে সাথে বিক্রি করে দেয়া হয়।

সুপারি চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর প্রথম ২-৩ বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তখন ছোট চারা গরু ছাগলে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে। প্রথম দিকে জমিতে স্বল্প পরিমান সারও দিতে হয়। ৫-৬ বছর পর গাছে ফল আসে। একবার ফল আসলে একাধারে অন্তত ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে তেমন কোন খরচ হয়না। প্রতিটা গাছ থেকে বছরে আকারভেদে ২শ থেকে ৪শ’ পিস সুপারি পাওয়া যায়।

লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের সুপারি চাষি নয়ন শেখ জানায়, বাপ দাদার আমল থেকেই আমাদের বাড়িতে অনেক সুপারি গাছ ছিল। প্রতি বছর আমি বসত ভিটার সুপারি গাছ থেকে অনেক সুপারি বিক্রয় করি। গত ৭ বছর পূর্বে এক একর ২২ শতক জমিতে সুপারি বাগান করেছি। আমার নতুন বাগানে গত বছর থেকেই কিছু কিছু গাছে ফল এসেছিল। এবছর বাগানের প্রায় সব গাছেই ফল হয়েছে। এবছরে আমার বাগানে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি খরচ বাদে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা লাভ হবে।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, এ জেলার মাটি সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী। এখানে অনেক আগে থেকে প্রচুর সুপারি গাছ ছিল। সুপারিচাষ একটি লাভ জনক ব্যবসা হওয়ায় জেলার অনেক চাষিরা তাদের পতিত জমিতে সুপারির বাগান করছেন। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। দিনে দিনে এ চাষি সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer