Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেপাল ট্যুর বাতিল করছে আতঙ্কিত বাংলাদেশী যাত্রীরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৫ মার্চ ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নেপাল ট্যুর বাতিল করছে আতঙ্কিত বাংলাদেশী যাত্রীরা

ঢাকা : বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বলছেন, নেপালের কাঠমান্ডুতে বেসরকারি বিমান ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে অনেক বাংলাদেশি নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন।

ট্র্যাভেল এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে অনেকেই ইউ-এস বাংলার টিকেট ফেরত দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির ফ্লাইট নিচ্ছেন।

আলিউল ইসলাম ভুঁইয়া পরিবারসহ নেপাল বেড়াতে যাবেন বলে সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলেছিলেন।কিন্তু কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনার পর পরিবারের সবাই মিলে সেই পরিকল্পনা ভয়ে বাতিল করে দিয়েছেন।

তিনি বলছিলেন, "ছেলে আর মেয়ে দুই বাচ্চার ২৩ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। এত অল্প সময়ে কোথায় যাওয়া যায়? আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে নেপালে যাবো। কিন্তু বাচ্চারা এবং আমার স্ত্রী এরা দুর্ঘটনার পর সেটি নিয়ে শোনার পরেই প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে দিয়েছে।"

তিনি বলছেন, "একটা ভুলের কারণে এত বড় একটা দুর্ঘটনা হল, এতগুলা প্রাণ চলে গেলো এতে ওদের মনের ভেতরে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।"

নেপাল বাংলাদেশীদের জন্য জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য।কারণ সেখানে খরচ কম আবার বিমানবন্দর থেকেই সহজে ভিসা নেয়া যায়।

বাংলাদেশের কক্সবাজার যেতে যা খরচ নেপালে সেইরকম খরচে বিদেশ ভ্রমণ বিশেষ করে হিমালয়ের দেশ এমন অনেক কিছুর কারণেই অনেকে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বেড়াতে যেতেন।

কিন্তু এখন শুধু বিমানে চড়ার আতঙ্ক নয়, এই দুর্ঘটনার পর পাহাড়ে ঘেরা ত্রিভুবন বিমানবন্দর যে বিশ্বের সবচাইতে বিপজ্জনক বিমানবন্দরের তালিকায় উঁচুর দিকে রয়েছে এমন খবর বের হওয়ার পর সেটিও চিন্তার বিষয় বলে জানালেন মি. ভুঁইয়া।কিন্তু বিষয়টি কি আরো অনেকের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে?

জানতে কথা বলেছি ঢাকার কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে। আকাশবারী হলিডেজ নামের একটি এজেন্সির সহকারী ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলছেন, তাদের ক্লায়েন্টদের অনেকেই নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করে অর্থ ফেরত নিয়েছেন।

তিনি বলছেন, "যারা নেপাল কাস্টোমার ছিল তাদের মধ্যে চারজন রিফান্ড নিয়েছে। এখন আর কাস্টোমার নেপাল যেতে চাচ্ছে না সেটা যে এয়ারলাইন্সই হোক না কেন।"

ট্যুর অপারেটররা মনে করছেন, অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও নেপাল ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবে বাংলাদেশীরা।কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরেও বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপাতত অনেকেই পিছপা হচ্ছেন বলে তারা তথ্য দিচ্ছেন।

নিয়মিত বিমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ভ্রমণ করেন একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা শামিম আহমেদ।

তিনি বলছেন, "১৯ তারিখ আমার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা। এর মধ্যে দুর্ঘটনার কথা শোনার পর একটা ভয় কাজ করছে যে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো আবার এখনই প্লেনে জার্নি করবো। তাই আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারে ঢাকায় নাহয় বাসেই যাবো"

ট্র্যাভেল এজেন্টরা বলছেন, বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মধ্যেও ডোমেস্টিক ফ্লাইটে অনেকেই ইউ-এস বাংলার টিকেট ফেরত দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির ফ্লাইট নিচ্ছেন।

জাস ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির সিনিয়র টিকেটিং ও রিজার্ভেশন অফিসার সাগর আহমেদ বলছেন, "ডোমেস্টিকেও দেখা যাচ্ছে যে অনেকের টিকিট করা ছিল। সেগুলো তারা কেউ পুরো ক্যান্সেল করছেন বা বদলে অন্য এয়ারলাইন্সের টিকেট নিচ্ছেন।"

ঠিক কী পরিমাণে টিকেট রিফান্ড দিতে হচ্ছে তা জিজ্ঞেস করলে মি. আহমেদ জানান, সেটি তার ক্ষেত্রে প্রায় ৩০%-এর মতো।

তবে এই পরিস্থিতি একদম সাময়িক বলে মনে করছে ইউ-এস বাংলার কর্তৃপক্ষ।কোম্পানিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের সকল ফ্লাইট ঠিকঠাক মতোই চলছে।

তিনি বলছেন, "এখন একটা আতঙ্ক তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই না তারা ইউ-এস বাংলাকে পুরোপুরি ডিনাই করছে। আমাদের সময় ও নিরাপত্তা সব দিক দিয়ে একদম ঠিক ছিল এবং আছে। ১২ তারিখ যেটা ঘটেছে তা শুধুমাত্র দুর্ঘটনা।"

তিনি বলছেন, "ইউ-এস বাংলা নিয়ে কোন ধরনের আশংকা বোধ করছি না। এখন হয়ত পুরো এভিয়েশন নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়েছে যেমন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার পরও একইভাবে ভয় পেয়েছেন অনেকে।"

টিকেট ফেরত ঠিক কতটা আসছে তার হিসেব ঠিক এখনি দিতে পারেননি মি. ইসলাম।তিনি বলছেন, তাদের মনোযোগ এখন মূলত দুর্ঘটনা-পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ের দিকেই রয়েছে।

বিবিসি বাংলা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer