Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

নেতাজিই কি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী?

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

নেতাজিই কি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী?

ঢাকা : ১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হয়েছিলেন সেই সরকারের ‘প্রথম’ প্রধানমন্ত্রী৷ নেতাজির জন্মদিনেই ইতিহাসের সেই পাতা তুলে ধরলেন পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়৷

১৯৪১-এর ১৬ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে পালিয়েছিলেন৷ নানা জায়গা ঘুরে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, ইতালীয় দূতাবাসের সহায়তায় তিনি রাশিয়া হয়ে জার্মানিতে গিয়ে পৌঁছন৷ গঠন করেন যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে এক বাহিনী, যাঁরা ইন্ডিয়ান রিজিয়নের সদস্য হলেন৷

কিন্তু ভৌগোলিকভাবে অত দূর থেকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত থাকা যে বেশ কঠিন! এটা উপলব্ধি করে নেতাজি পূর্ব-এশিয়ায় চলে আসতে চান৷ রাসবিহারী বসু তখন জাপানে৷ সাবমেরিন করে জাপানে পৌঁছলে রাসবিহারী বসু নেতাজির হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷

জাপান সরকার সর্বতোভাবেই এই স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতকে সাহায্য করে ব্রিটিশ-শাসনমুক্ত করতে প্রস্তুত ছিল৷ কিন্তু একইসঙ্গে তারা বাহিনীকে রাখতে চেয়েছিল আজ্ঞাধীন৷ সুভাষচন্দ্র জাপান কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, শুধুমাত্র মিলিটারি কার্যক্রম ভারতের স্বাধীনতার জন্য পর্যাপ্ত নয়৷ চাই আলাদা প্রচার কার্যক্রম৷ এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, একটি স্বাধীন সরকারের প্রতিষ্ঠা– যাকে ‘অক্ষশক্তি’ প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে৷ নেতাজি পূর্ণ উদ্যমে নতুন স্বাধীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নিলেন৷

১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠিত হয় তথাকথিত প্রথম ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার: ‘Provisional Government of Free India’৷ গঠিত হয় পূর্ণ মন্ত্রিসভা৷ আর রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে প্রথমেই শপথ নেন সুভাষচন্দ্র বসু৷

নিজের হাতে রাখেন পররাষ্ট্র ও যুদ্ধবিষয়ক দফতর৷ অর্থমন্ত্রী এ. সি. চট্টোপাধ্যায়, নারীবিষয়ক মন্ত্রী লক্ষ্মী সেহগল, প্রচার ও প্রপাগান্ডা দফতরের প্রধান এস. এ. আইয়ার৷ এ. এন. সরকার-সহ আরও ১৫ জন ছিলেন মন্ত্রিসভায়৷ রাসবিহারী বসু মনোনীত হন এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা৷

সে রাতেই প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্রের বাসভবনে মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে৷ রাত বারোটার পর সিঙ্গাপুর রেডিও মারফত প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন৷

একবছর দশ মাস এই স্বাধীন সরকার দেশ শাসন করেছিল৷ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের পূর্ব সীমান্ত ছিল এই সরকারের শাসনাধীন৷ কিন্তু ১৯৪৫-এর ৬ ও ৯ আগস্ট আমেরিকা অ্যাটম বোম নিক্ষেপ করায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় জাপান এবং প্রধান সাহায্যকারীর অনুপস্থিতিতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিকল্পিত পথে পূর্ণতা লাভ করতে ব্যর্থ হয়৷

কিন্তু ২১ অক্টোবর ১৯৪৩-এ যে অন্তর্বর্তীকালীন ‘স্বাধীন’ ভারত সরকার স্থাপিত হয়েছিল তাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ৷ ক্রোয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, জার্মানি, জাপান, ফিলিপাইন্স, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, মাঞ্চুকুয়ো(চিন)- সহ ১০টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষের নেতৃত্বে এই সরকার প্রকাশ করেছিল ডাকটিকিট৷ চালু রেখেছিল নিজস্ব ডাকব্যবস্থা, কারেন্সি নোট৷ স্থাপিত হয়েছিল আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক)৷

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শন করে নেতাজি এ দু’টি জায়গার নাম বদলে রেখেছিলেন ‘শহিদ’ ও ‘স্বরাজ দ্বীপ’৷ নিয়োগ করেছিলেন প্রশাসক৷ এই সরকার বিদেশে দূতাবাসও স্থাপন করে৷ ‘প্রধানমন্ত্রী’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর এই কথা বর্তমান প্রজন্ম কেন সেভাবে জানে না, তা এক বিস্ময়! সংবাদ প্রতিদিন

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer