ঢাকা : নারী কৃষক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, নারী কৃষকদের উন্নয়ন পরিকল্পনার বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)অর্জন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্যসীমা শতকরা ১২ ভাগে নামিয়ে আনতে কৃষি কাজে যুক্ত ৬৮.১ শতাংশ নারীর অন্যতম অবদান রয়েছে।
তাই দারিদ্র নিরসন ও এসডিজি বাস্তবায়নে এবং নারী কৃষকদের অধিকার সুরক্ষায় ১১ দফা সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে সম্মেলনে দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী নারী কৃষক সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান।
সম্মেলনে দেশের ৪০টি জেলার প্রায় বিপুল সংখ্যক নারী কৃষক ও কৃষি শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে অনুষ্ঠিত নারী কৃষক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি সাজেদা বেগম।
‘কৃষিতে নারী : অবদান ও অধিকার’ শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খানি বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মেরিনা যুথী ।
এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাদ্য বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারা।
মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ড.জয়নাল আবেদীন, এ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনালের সদস্য অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান ও মো. মহসীন প্রমুখ।
আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, শিগগিরই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার আইন করা হবে। নারীদের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করতে পারলেই বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে যাতে কোন দুর্নীতি না হয় সে জন্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধে সকল মহলকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবমতে সারা বিশ্বের মোট কৃষকের ৮০ ভাগই নারী। যাদের বেশির ভাগই অপুষ্টি, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের শিকার।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারীরা খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পরিবারের কাছেও এই নারীরা কৃষক হিসেবে কোনো সম্মান বা স্বীকৃতি পায়নি। যে কারণে নারী কৃষকরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, সেবা, গবেষণা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত। তাই ভূমিতে নারীর মালিকানা প্রদান এবং আলাদা নারী কৃষকদের পরিচয় পত্র প্রদান, নারী কৃষকদের ডাটাবেজকরাসহ ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।
‘সিডও’ সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কৃষিঋণ, আর্থিক সুবিধা, বাজারজাতকরণ সুবিধা, প্রযুক্তি সুবিধা, ভূমি সংস্কার ও ভূমি পুনর্বাসনে নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। নারীদের এই সমঅধিকারের আইনগত বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে এই নারী কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দ্বিতীয় পর্বে নারী বান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।