Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

দেড় হাজার কোটি টাকার রোপওয়ের প্রজেক্ট এখন চোরদের পেটে

চান মিয়া, ছাতক প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৩০, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

দেড় হাজার কোটি টাকার রোপওয়ের প্রজেক্ট এখন চোরদের পেটে

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের (রজ্জুপথ) দেড়হাজার কোটি টাকার সম্পদ এখন চোরদের পেটে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষের সুষ্টু তদারকির অভাবে রেলওয়ের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের রোপওয়ের অস্তিত্ব এখন বিলীন হয়ে গেছে।

অভিবাবকহীন হয়ে পড়েছে প্রজেক্টের দেড়হাজার কোটি টাকার সম্পদ। প্রয়োজনীয় উপকরণ, সুষ্টু তদারকিও চরম জনবল সংকটে প্রতিষ্টানটি এ পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে রেলওয়ের সম্ভাবনাময় একটি রাজস্ব খাতের সমাপ্তি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

সংশিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ১৯৬৬সালে রেলওয়ের নিজস্ব পাথর কোয়ারী ভারতীয় সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জের পাথর ছাতকে নিয়ে আসার লক্ষ্যে রেল বিভাগ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন রজ্জুপথ ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ১৯৬৮সালে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৯ কিঃমিঃ দীর্ঘ রজ্জুপথ (রোপওয়ে লাইন) নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

নির্মাণ কাজ শেষে ১৯৭০সালে এটির আনুষ্টানিক উদ্বোধন হলে ১শ’ ৭০ ঘন্টা সচল থাকার পর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এটি বন্ধ হয়ে পড়ে। স্বাধীনের পর যুদ্ধে বিধ্বস্থ রোপওয়ের কয়েকটি ট্রেসেলও ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন স্থাপনায় প্রায় ৫০কোটি টাকার সংস্কার কাজ শেষে ১৯৭৮সালে পুনরায় পাথর পরিবহন কার্যত্রম শুরু করে।

রোপওয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে নিয়োগকৃত ২৬৯ জনবলের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন ৮৭জন। ৪২৫টি বাকেটের মধ্যে ২৪৬টি বাকেট চালু থাকলেও ১৭৯টি বাকেট ছাতকস্থ রোপওয়ের আনলোডিং বাংকার সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে অচল পড়ে রয়েছে। এভাবে রোপওয়ের ভোলাগঞ্জে বাকেটে পাথর লোডিং কাজে ব্যবহৃত দুটি স্ক্র্যাভেটর ও জেনারেটরসহ প্রতিষ্টানের বিভিন্ন মালামাল মেরামত ও সংস্কার হচ্ছেনা। এগুলো সংস্কার করে প্রজেক্টটি পূনরায় চালু করতে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধের প্রয়োজন।

স্থানীয় রেল বিভাগ এ বরাদ্ধের জন্যে দীর্ঘদিন থেকে সংশিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদনের পরও এব্যাপারে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফলে অযত্ন-অবহেলায় অকেজো প্রায় ৫০কোটি টাকার মালামাল এখন নষ্ট হতে চলেছে।

জানা গেছে, ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯কি.মি. (১১.৫০ মাইল)। এরমধ্যে ৪টি ষ্টেশন ও ১২০টি ট্রেসেল রয়েছে। ১লক্ষ ২০হাজার ফুট দীর্ঘ তারের বেষ্টনীতে ৪২৫টি বাকেট পাথর পরিবহন করছে। প্রতি বাকেটে পাথরের ধারন ক্ষমতা রয়েছে ১২.৯২ ঘনফুট (৬শ’কেজি)। রোপওয়ের সর্বোচ্চ ট্রেসেলের উচ্চতা ১শ’৬৭ফুট, ট্রেসেলের দীর্ঘতম স্প্যান ১হাজার ৩শ’৩০ফুট ও সাধারন স্প্যান ৫শ’থেকে সাড়ে ৫শ’ফুট। এসব ট্রেসেল ও রোপ লাইন কেটে বিক্রি করেছে সঙঘবদ্ধ চোরচক্র। কিন্তু জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রোপওয়ের বার্ষিক পাথর পরিবহন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১২.০০লক্ষ ঘনফুট।

গত ২৫ বছরে রোপওয়ের পরিবাহিত পাথর হচ্ছে ১৩০.০০লক্ষ ঘনফুট। যা-পাথর পরিবহনের বার্ষিক গড় ছিল ৬.৫০লক্ষ ঘনফুট। ১৯৮৩-৮৪সালে সর্বাধিক ১০.৭৮লক্ষ ঘনফুট পাথর পরিবহন করে প্রজেক্টটি সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। এছাড়া ১৯৭৮-২০০০সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী থেকে ইজারা আয় ছিল ১১.৪৭ কোটি টাকা।

ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীতে রোপওয়ের অধিগ্রহনকৃত ভূমি হচ্ছে, ভাটরাই মৌজায় ২১৩.০৪একর, কালাইরাগ মৌজায় ৩০.৫৪একর ও কালাসাদক মৌজায় ৯৯.৮১একর সহ ছাতক- ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রোপওয়ের ট্রেসেল বরাবর ভূমি হচ্ছে আরো ১৬.৪৮একরসহ মোট ৩৫৯.৮৭একর।

ছাতকবাজার রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ প্রজেক্ট বন্ধ হলে রেল বিভাগকে উচ্চমূল্যে পাথর ক্রয় করে রেল লাইনে দিতে হবে। এতে প্রতিবছর রেল বিভাগের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ৫বছর থেকে প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় ট্রেসেলসহ মূল্যবান মালামাল চলে গেছে চোরদের পেটে। রোপওয়ে প্রজেক্ট রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer