ছবি : সংগৃহীত
ময়মনসিংহ : ১৮ আগষ্ট ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস। শোকের মাস হওয়ায় তা বর্ণাঢ্যভাবে পালন করা হয়নি। শনিবার বিশেষভাবে সেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, কৃষক সমাবেশ, বাকৃবিতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শনী এবং সন্ধায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দেশে শীর্ষস্থান অর্জনের বিষয়ে বহুমাত্রিক.কম -এর সাথে কথা বলেছেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া শেখ।
বহুমাত্রিক.কম : আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আপনাদের পক্ষ থেকে কি ধরণের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় দুটি লক্ষ নিয়ে। একটি হচ্ছে শিক্ষা এবং গবেষণা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান বিতরণ নয় সাথে জ্ঞান সৃষ্টিরও জায়গা। অতএব জ্ঞান সৃষ্টি করতে হলে গবেষণা প্রয়োজন। সেই গবেষণার মাধ্যমে নিত্য নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়। যেটি শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অতএব শিক্ষা ও গবেষণা এই দুটি বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ। এখানে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়।
গবেষণাগুলো হতে হবে দেশের চাহিদা মোতাবেক। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় যে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সেটা কিন্তু আসলে শিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োগিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা অবদানের কথা ও গবেষণায় শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করে।
গবেষণায় আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। এর জন্য আমরা দেশীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত পেয়েছি ও পুরষ্কার পেয়েছি।বিভিন্ন কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার মত পৌঁছাতে পারিনি। এখন আমাদের মূললক্ষ হলো মানসম্মত শিক্ষা তৈরির পাশাপাশি শিক্ষার মানটাকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
বহুমাত্রিক.কম : পাঠ্যক্রম সময়ের সাথে যুগপোযোগী না হওয়ায় বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না শিক্ষার্থীরা-এমন অভিযোগ প্রায়শই উঠছে। পাঠ্যক্রম উন্নয়নে আপনারা কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন ?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : আমি আগেও বলেছি গবেষণার মত আমাদের শিক্ষার মান অতটা এগিয়ে যায়নি। যেজন্য সময়পোযোগী আমাদের কোর্স কনটেন্ট ও কোর্স কারিক্যুলামের পরিবর্তন দরকার। সুতরাং আমাদের মূল লক্ষ থাকবে শিক্ষার মানোন্নয়ন। সেজন্য সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউশন কোয়ালিটি ইনসিউরিটি সেল, আইটিসি সেল, হেকেপ প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু প্রকল্প উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আমরা নিজেরাও সেল্ফ এসেসমেন্টের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এবিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
বহুমাত্রিক.কম : আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন কোন খাতে আপনি বেশি উন্নয়ন করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে তেমন কোন বড় ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়নি। হলের অবস্থাগুলোও নাজুক। ছাত্রসংখ্যা বাড়ানো হলেও বাহ্যিক বাড়তি কোন গবেষণাগার ও শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো হয়নি। এজন্য সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৫০ কোটি টাকার একটা পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। ৬০০ কোটি টাকা উন্নয়ন পরিকল্পনা ও টাকা মেরামত বাবদ ৫০ কোটি ধরা হয়েছে। দ্রুত বাস্তবায়ন হলে কোন সমস্যাই থাকবে বলে আশা করছি।
বহুমাত্রিক.কম : শিক্ষার্থীরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বর্ষের শিক্ষার্থীরা কয়েক মাসের সেশনজটের কবলে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনের জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : এ ব্যাপারে আমি সম্মানিত ডিনদের সাথে কথা বলেছি। পরবর্তী সময়ে যেন সেশনজট না হয় সেজন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
বহুমাত্রিক.কম : শিক্ষার মান উন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন আছে কি? আপনি কি মনে করেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : শিক্ষার মানোন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন আছে। গবেষণার ধরণও আমরা পরিবর্তন করেছি। সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানি ও ইন্ডাস্ট্রির সাথে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি করছি। যেটা আমাদের ও সাথে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। আমাদের প্রযুক্তিগুলো তাদের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌছাতে পারছি। কৃষকেরা সেগুলো ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। উৎপাদনের বৃদ্ধির সাথে আমাদের প্রক্রিয়াধীন খাবারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম : অনেকেই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যার পর থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে? এ সমস্যা নিরাসনে কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : এগুলো সমস্যা সমাধানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অনেক পরিশ্রম করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে পাবলিক রাস্তা হওয়ার কারণে এমনটা বেশী হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। রাস্তাটি যেন পাবলিক ব্যবহার না করে। রাস্তাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলে এমনটা আর হবে না।
বহুমাত্রিক.কম : আপনার দায়িত্বকালীন সময়ে উল্লেখযোগ্য কি কি করা হয়েছে?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ইমেরিটাস অধ্যাপক পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে। সাথে প্রো-ভিসি পদও সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে রাজধানীতে গেস্টহাউস নির্মিত হয়েছে। আশা করছি সেগুলো অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও বেগম রোকেয়া হল করা হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম : এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে আপনি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর : সম্প্রতি দেশে প্রথম ফুড সিকিউরিটি ও ফুড সেফটি নামে দুটি বিষয় খোলা হয়েছে। এই দুই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হয়। এটা আমাদের দেশের নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে আশা করছি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত ও গৌরবমন্ডিত এই প্রতিষ্ঠান। কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পথিকৃৎ পূর্ণাঙ্গ ও প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসাবে এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ গর্বিত প্রতিষ্ঠনে পরিণত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনের ধারা বজায় রেখেছে। মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের গুরুত্বদায়িত্ব বহনে সমর্থ তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
বহুমাত্রিক.কম