Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে নতুন কৃষিনীতি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৩ জুলাই ২০১৮

আপডেট: ২৩:৪৬, ১৩ জুলাই ২০১৮

প্রিন্ট:

দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে নতুন কৃষিনীতি

ঢাকা : বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ। কারণ এখানকার শতকরা প্রায় আশি ভাগ নাগরিকই গ্রামীণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আর সেজন্যই কৃষির উন্নতি ও সমৃদ্ধির সাথে দেশের সার্বিক অর্থনীতির একটি সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।

সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনায় যেমনি প্রতিবছর একটি বার্ষিক বাজেট প্রণীত হয়ে থাকে। তেমনি স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি কিংবা দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন মিশন, ভিশনও ঠিক করা হয়ে থাকে। সেরকমভাবে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা যথা- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, রয়েছে মিশন-২০২১, রয়েছে পরিকল্পনা-২০৩০, ভিশন-২০৪১ এবং আরো রয়েছে আগামী একশত বছরের জন্য ডেল্টা বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা।

এগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিকে অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু কৃষি নীতির বিকল্প নেই। এজন্য কিছু দিন পর পর সরকার কর্তৃক লাগসই কৃষিনীতি প্রণীত হয়ে থাকে। তাই ২০১৩ সালের পর পাঁচ বছরান্তে এবছর জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়নে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

আমরা জানি বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষিখাত। সেজন্য কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকে নিম্নতম পর্যায়ে রেখে অত্যাধুনিক ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোড় দিয়ে কৃষিনীতির খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রীসভা। এসব নীতিমালার বিবেচ্য বিষয় হিসেবে প্রধান্য পাচ্ছে- কৃষি ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রতিকুল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কুষি কর্মসূচি গ্রহণ ইত্যাদি। তাছাড়া সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি পানি উত্তোলনের সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়গুলোকে যুক্ত করে নতুন জাতীয় কৃষিনীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা।

২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় কৃষিনীতিকে এবারে আরেকটু হালনাগাদ ও সমুদ্ধ করা হয়েছে। অনেক বিষয় এখানে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। বর্তমান কৃষিনীতি বেশ বিস্তারিত এবং সমৃদ্ধ। নতুন কৃষি নীতিতে ২২টি অধ্যায়, ১০৬টি অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। আগে ছিল ১৮টি অধ্যায় এবং ৬৩টি অনুচ্ছেদ। নতুন কৃষিনীতির অধ্যায়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে সঠিকভাবে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে। জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮ এর প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ভূমিকা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে কৃষি উন্নয়নে গবেষণা।

গবেষণার ক্ষেত্রে ১৯টি ক্ষেত্র নির্র্দিষ্ট করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে- কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, নিরাপদ খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন, কৃষি বিপণন, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিতে যুবশক্তি, কৃষিতে বিনিয়োগ, কৃষি সমবায়, কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি খাতে শ্রম, সমন্বয় ও সহযোগিতা ইত্যাদি। বিবিধ বিষয়ের মধ্যে- মেধাস্বত্ব, জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) এগুলোও রয়েছে।

এছাড়া আরো রয়েছে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, প্রচার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রাধান্য এবং উপসংহার অধ্যায়। ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি নতুন কৃষি নীতিতে সংযুক্ত করা হয়েছে যা আগে ছিলনা। তাছাড়া মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন, নগরকেন্দ্রিক কৃষি সম্প্রসারণ সেবা; এটিও আগের নীতিতে ছিলনা। এছাড়া কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়ই নয় সংশ্লিষ্ট হিসেবে বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও এ লক্ষ্যে কাজ করছে যাদের নীতির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় কৃষি শুমারি বাস্তবমুখী করতে ১৭০টি কৃষি পণ্যের জন্য তথ্যভা-ার তৈরী করা হচ্ছে। সেই তথ্যভা-ার ব্যবহার করে সেই ১৭০টি কৃষিপণ্য দেশ বিদেশে আমদানি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।

অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ইলিশ মাছকে একটি জিআই পণ্যের তালিকায় সংযুক্ত করতে পেরেছে। কাজ চলছে পাটসহ আরো কিছু কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মানদ-ে নিয়ে যাওয়ার। ১৪০টি কৃষিপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে জাতীয় কৃষিপণ্য রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমনিতেই জানি বর্তমান সরকার কৃষি ক্ষেত্রকে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। কাজেই বর্তমান সরকারের কৃষিনীতি কৃষি ও কৃষক এবং সর্বোপরি দেশের সার্বিক অর্থনীতিবান্ধব হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

কাজেই জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ অবশ্যই দেশবান্ধব একটি কৃষিনীতিই হবে। পরিবর্তিত জলবায়ু এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হলে একটি বাস্তবসম্মত কৃষিনীতির বিকল্প নেই। এবারে প্রণীত কৃষিনীতি তারই একটি সফল ও বাস্তব প্রতিফলন বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়নের ধারায় একটি পালক লাগাবে এ কৃষিনীতি- এটিই সকলের প্রত্যাশা।

লেখক: ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer