Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

দূর্যোগ কবলিত হাওরের কলেজগুলোতে গলাকাটা ভর্তি ফি

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২৭ জুলাই ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

দূর্যোগ কবলিত হাওরের কলেজগুলোতে গলাকাটা ভর্তি ফি

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। সেই সাথে শুরু হয়েছে ভর্তি ফি’র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিজেদের খেয়াল খুশি মত গলাকাটার ফি নেওয়ার আয়োজন।

কলেজগুলো সরকার নির্ধারিত কলেজে ভর্তি ফি’র বাইরেও ভিন্ন ভিন্ন খাত দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। অধিকাংশ কলেজের কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ফি’র বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন কারণ দেখাতে পারেননি।

বোর্ডের নির্ধারিত ফি ২৬২ টাকা হলেও ১৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ হাজার টাকা নিচ্ছেন কোন কোন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবার যারা এসএসসিতে উত্তীর্ন হয়েছে তারা মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিজ নিজ এলাকার কলেজগুলোতে ভর্তি হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। অনেকেই আবার অতিরিক্ত ফি’র কারণে ভর্তির টাকা যোগাড় করতে না পারায় হিমশিম খাচ্ছেন।

অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপাড়ের অনেক অভিবাবকগনেই অভাবের তাড়নায় জীবন বাঁচার তাগিদে কাজের সন্ধানে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছেন লেখাপড়া বাধ দিয়ে সন্তানদের। এই অবস্থায় সরকার গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিটি কলেজে বোর্ড নির্ধারিত ফি নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান জেলাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সরকারি কলেজে এবার মানবিক, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি ফি নিচ্ছে ২৭১০টাকা, জেলার সদরের ইসলামগঞ্জ কলেজে এক মাসের বেতন সহ ২৭০০টাকা, মঈনুল হক কলেজে ২ মাসের বেতন সহ ২৫০০টাকা, আলহাজ্ব মতিউর রহমান কলেজে ২০০০ টাকা, এই কলেজের দরিদ্রের জন্য ১০০০হাজার টাকা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আব্দুল মজিদ কলেজে ২০০০টাকা, তাহিরপুর সদরের জয়নাল আবেদিন কলেজে ১০০০হাজার টাকা, বাদাঘাট কলেজে ২৫০০টাকা, বিশ্বম্ভরপুরের দ্বিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজে মানবিক ১৮০০ টাকা, ব্যবসায় ১৯০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে ২০০০ টাকা, দোয়ারা বাজার কলেজে ৩০০০ হাজার টাকা, জামালগঞ্জ কলেজে ১২০০ টাকা, দিরাইয়ের বিবিয়ানা মডেল কলেজে ১০০০হাজার টাকা, ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজে ২০০০হাজার টাকা ও ৬ মাসের বেতন সহ ৩২০০ টাকা। বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ৫০০ টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওইসব কলেজগুলো উন্নয়ন খাতে ১০০০ হাজার টাকা, বোর্ড ফি ২৬২টাকা, দরিদ্র তহবিল, খেলাধুলা, মিলাদ, পূজা এবং অন্যান্য সব মিলিয়ে ঐ টাকা নিচ্ছেন বলে জানান একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ।

হাওরপাড়ের ভিন্ন এলাকার অবিভাবকগন বলেন, এবার আমরা হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো চরম ক্ষতির শিকার হয়েছি। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা জীবন নিয়ে এমনিতেই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি-এখন যদি কলেজে ভর্তি করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় তাহলে কোথা থেকে দেব? এমনিতেই খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। কলেজে ভর্তির আসল টাই ত যোগাড় করতে গিয়ে জীবন শেষ এখন যদি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় তাহলে ত আর পারব না।

তারা বলেন, প্রতি বছর যা চায় তাই দিই কলেজে ভর্তি করতে। এইবার ত কম নিলেও চলে আমরাও বাচিঁ।

তাহিরপুর উপজেলার জয়নাল আবেদিন কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ আলী মর্তুজা জানান, অন্যান্য বছর ত অনেক বেশি টাকা নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবার চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে হাওরপাড়ের কৃষক পরিবারগুলো-তাই এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা প্রতি ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ১হাজার টাকা ভর্তি ফি নিচ্ছি।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরির্দশক কবির আহমেদ জানান, বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন ফি ১৮৫টাকা ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা দিয়ে দিয়েছে। বোর্ডে এখন একজন শিক্ষার্থীকে উন্নয়ন ফি ৫০টাকা, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট এবং রোভার স্কাউট ফি ১২টাকা এবং খেলাধুলা সহ অন্যান্য ফি বাবদ ২০০টাকা দিতে হবে। প্রতি শিক্ষার্থীকে ভর্তির সময় বোর্ডকে ২৬২ টাকা দিতে হবে এর বাহিরে কোন ফি নেই।

তিনি বলেন, যেহেতু কলেজগুলো সেশন ফি নিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে জেলা শহরে ২০০০ হাজার টাকা ও উপজেলা বা প্রত্যন্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সেশন ফি ১০০০হাজার টাকা নিতে পারে। এর কমও নিতে পারেন তবে বেশি নিলে আইন সঙ্গত হবে না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, এবার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার কৃষক পরিবার জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম দূর্যোগের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন। এর মধ্যে তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা জীবনও হুমকির মধ্যে আছে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর তথা জেলার সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এবার ভর্তি ফি ও বেতন মওকুফ করার দাবি জানাই।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer