ছবি: বহুমাত্রিক.কম
সাভার : কালিয়াকৈর-দরবাড়িয়া-বাইদগাঁও-কবিরপুর প্রায় ৭কিলোমিটার সড়কে খনাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। সেই সাথে দূর্ভোগে পড়ছে ওই সড়টি দিয়ে চলাচলরত সাভার ও কালিয়াকৈর উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবীর মানুষ।
সেই সাথে জিরনী-আমতলা সড়কের আধাকিলোমিটার সড়কের সম্পূর্ণ অংশেই বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এ সড়টিতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। প্রতিদিনই সড়কের মাঝে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশা, রিকশা ভ্যান সহ নানা যানবাহন। আটককে যাচ্ছে বড় যানবাহন। ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। আধাকিলো রাস্তা এখন যেন লক্ষাধিক মানুষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসী ও দুর্ভোগে পড়া মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও ঢাকার সাভার উপজেলার কবিরপুর-বাইদগাও-দরবাড়িয়া-জালশুকা এলাকায় প্রায় সাত কিলোমিটার এই সড়কটি।
এরই মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইবাড়া-জালশুকা সড়কের জালশুকা থেকে দরবাড়িয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার কালিয়াকৈর উপজেলা এলজিইডি এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের কবিরপুর থেকে বাইদগাও পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ ও জিরানী-আমতলা সড়কটি পড়েছে ঢাকার সাভার উপজেলার এলজিইডি আওতাভুক্ত। এটি দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক।
এ সড়কের দু-পাশে সাভার উপজেলার কবিরপুর, বাইদগাও এবং কালিয়াকৈর উপজেলার দরবাড়িয়া, চাতলভিটি, সোহাগীরটেক, জালশুকাসহ প্রায় ২০-২৫টি গ্রাম রয়েছে। এছাড়া সড়কের আশে-পাশে রয়েছে বাইদগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইদগাও উচ্চ বিদ্যালয়, বাইদগাও আইডিয়াল পাবলিক স্কুল, বাইদগাও মারকাযুল উলুম মাদ্রাসা, বাইদগাও দারুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিম খানা, বাইদগাও আলিয়া মাদ্রাসা, দরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা।
এদিকে, জিরানী-আমতলা সড়কের (আধাকিলোমিটার) অবস্থা এতটাই নাজুক যে যানবাহনতো দূরের কথা মানুষ খালি পায়েই হেটে চলতে পারেনা। রাস্তার পুরো অংশেই বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে তাতে পানি জমে রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ওই সড়কে দূর্ঘটনা। এ সড়কের উভয় পাশে রয়েছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে চরম দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিল্পকারখানার শ্রমিকসহ দুই উপজেলার হাজার হাজার বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ চলাচল করে। ওই দুই উপজেলার লোকজন এছাড়াও ওই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও ঢাকার ধামরাই উপজেলার লোকজন চলাচল করে।
ওই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও টানা বৃষ্টি ও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এ সড়কের কার্পেটিং ও ইট সলিং উঠে বিভিন্ন স্থানে খনাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখান দিয়ে শত শত ইটভাটার ট্রাক চলাচল করায় সড়কটি বেশি নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজনের দাবি। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। ঘটছে দূর্ঘটনাও। চরম দূর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জালশুকা থেকে দরবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই অচল অবস্থা। বড় যানবাহন তো দুরের কথা রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল নিয়েও চলাচল করা যাচ্ছে না। সড়কটি ৩-৪ যুগ আগের আগের হলেও রাস্তায় তেমন কোন কাজ হয়নি। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মেহের আলী, সামান উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন বলেন, ওই সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার অল্পকিছু অংশে ইট সলিং করা হলেও তা ভেঙ্গে ও উঠে গেছে। এখানকার পুরো অংশেই খারাপ অবস্থা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এদিকে কোন নজর নেই।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) প্রকৌশলী সালমান রহমান রাশেল জানান, ওই রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেছেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি অনুমোদন হবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
এছাড়া সাভার উপজেলার ওই সড়কের কবিরপুর থেকে বাইদগাও পর্যন্ত সড়কটি কার্পেটিং করা ছিল। কিন্তু টানা বর্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কবিরপুর মোড়ে, ত্বোহা ট্রেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার সামনে ও তেলিবাজার এলাকায় খানাখন্দ ও গর্তে ভরা বেশি।
স্থানীয় সফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন বলেন, যদিও গত দুই মাস আগে ওই সড়কের কবিরপুর থেকে বাইদগাও পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত রমজান ঈদের আগে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছে, এখনো কাজে যোগ দেয়নি। সাভার উপজেলার আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার সংস্কার কাজ হয়েছে। সেটাও সড়কের কিছু অংশ বাদ রেখে মাঝে মাঝে সংস্কার কাজ করা হয়। ওই বাদ রাখা অংশে সড়কের সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা।
এব্যাপারে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) দীরেন চন্দ্র দেবনাথ জানান, গতকাল অফিসে ঠিকাদারী লোকজন আসছিল। দ্রুত কাজ করার জন্য তাদের বলে দেওয়া হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম