Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফ’র ২৫ বছর

ড. জসীম উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

আপডেট: ২১:৫৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

প্রিন্ট:

দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফ’র ২৫ বছর

ঢাকা: কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠা করে। কোম্পানী আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত পিকেএসএফ একটি “লাভের জন্য নয়” প্রতিষ্ঠান, যার অর্থ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয়-অতিরিক্ত আয় কোন ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে বন্টিত না হয়ে পুনরায় দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে যে কোন কাজে ব্যয়িত হবে।

পিকেএসএফ মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমসমূহ সরাসরি বাস্তবায়ন না করে এর “সহযোগীসংস্থা” সমূহের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে। পিকেএসএফ জুন ২০১৪ পর্যন্ত ২৭৩টি সহযোগীসংস্থার মাঝে স্বল্প সার্ভিস চার্জে প্রায় ১৮,৮০২ কোটি টাকা জামানত বিহীন পুঁজি সরবরাহ করেছে। সহযোগীসংস্থাসমূহ এ তহবিল পুন:চক্রায়নের মাধ্যমে গ্রাম ও শহর এলাকার প্রায় ১.০৬ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে (যাদের শতকরা প্রায় ৯১.৬১ ভাগ মহিলা) একই সময়ে ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা পুঁজি সরবরাহ করেছে।

pksfপিকেএসএফ-এর বিতরণকৃত অর্থের আদায়ের হার ফাউণ্ডেশন ও সহযোগীসংস্থা পর্যায়ে শতকরা ৯৮.৮৫ ভাগ এবং সহযোগীসংস্থা ও সদস্যী পর্যায়ে শতকরা ৯৯.৬৫ ভাগ। মাঠ পর্যায়ে এ উচ্চ আদায়ের হার বজায় রাখার অন্যতম কারণ হলো, পিকেএসএফ সহযোগীসংস্থাসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যবস্থাপনিক সামর্থ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে।

সহযোগীসংস্থাসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৬৪ হাজার কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীকে সুশাসন, হিসাব ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, ঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ ব্যবস্থাপনা, আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডের ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ের উপর পিকেএসএফ প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সহায়তায়। এছাড়াও প্রায় ২৯ লক্ষ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক, শস্য, অশস্য, পশুসম্পদ, সামাজিক ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সহযোগী সংস্থাসমূহের দৈনন্দিন মাঠ-পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, মোটর সাইকেল, সাইকেল প্রভৃতি ক্রয়ের জন্য স্বল্প সার্ভিস চার্জে ঋণ প্রদান করে আসছে।

এ পর্যন্ত পিকেএসএফ সহযোগী সংস্থাসমূহের এ সকল দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য ৩০ কোটি টাকার নমনীয় ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে। পিকেএসএফ বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সামগ্রিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা ও ম্যানুয়াল তৈরি করেছে। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যেই দেশ ও বিদেশে দারিদ্র্য দূরীকরনের জন্য পিকেএসএফ একটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।

দেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পর্ষদের সদস্যদের এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দিক নির্দেশনায় পিকেএসএফ পরিচালিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে ফাউণ্ডেশনের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন দেশের প্রথিতযশা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, প্রখ্যাত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন মুখ্য সচিব জনাব মোঃ আবদুল করিম। এছাড়া পিকেএসএফ-এর রয়েছে উচ্চ মান সম্পন্ন দক্ষ কর্মীবাহিনী যারা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে এবং পিকেএসএফ-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে শ্রম ও সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার কার্যক্রম উত্তোরোত্তর সম্প্রসারণ করছে এবং স্বাভাবিকভাবেই তার কার্যক্রম, কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর হতে এ পর্যন্ত সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীসংস্থাসমূহের আর্থিক সহায়তায় অনেক প্রকল্প সফলভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানেও এর মূল কার্যক্রমগুলো ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইফাদ, ডিএফআইডি প্রভৃতি উন্নয়ন সহযোগীর আর্থিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।what is pksf

পিকেএসএফ তার কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয়ের সিংহভাগ খরচ করে থাকে দেশের দরিদ্র মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে। এ প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পিকেএসএফ সরকার ও বিভিন্ন বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প ও কর্মসূচি হলো দেশে মঙ্গা নিরসনের জন্য বৃহত্তর বরিশাল ও রংপুর জেলায় মংগা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারসমূহের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সমৃদ্ধি) কর্মসূচি, বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণতা জনিত ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্প, ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বীমা সেবা প্রদান এবং অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নের লক্ষে গৃহীত ইউপিপি-উজ্জীবিত প্রকল্প ।

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়ের আওতায় প্রকল্প এলাকায় দরিদ্র মানুষদের বসত-ভিটা উঁচুকরণ, প্রতিটি বেসরকারী স্কুল/কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, পাঠাগার প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ১টি টিউবওয়েল ও ২টি ল্যাট্রিন স্থাপন বা মেরামত, শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, যুব কর্মসংস্থান, বন্ধুচুলা ও সোলার সিস্টেম, বিশেষ সঞ্চয়, আর্থিক সহায়তা, দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের মেধা বৃত্তি প্রভৃতি কাজে সহায়তা করা হচ্ছে।

২০১২-১৩ অর্থ বছরে পিকেএসএফ প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করেছে প্রায় ৬১.২৭ কোটি টাকা, যা ২০১১-১২ ও ২০১০-১১ অর্থ বছরে ছিল যথাক্রমে ৩৪.৩৪ ও ৩০.৬৭ কোটি টাকা। মূলত দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দরিদ্র মানুষদেরকে অধিকতর সেবা প্রদানের জন্যেই পিকেএসএফ-এর এ ব্যয় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া পিকেএসএফ-এর উন্নয়ন সহযোগীরাও এ ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ব্যয়িত অর্থ উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট হতে পুণঃভরণ হিসেবে পাওয়া যায়।

কর্মসূচি/প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ব্যয়-এর দ্বিতীয় খাতটি হলো ঋণক্ষয় সঞ্চিতির সংস্থান রাখা। এ খাতটি যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়ের খাত, যা একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় সংগঠিত হয়ে থাকে। পিকেএসএফ এ ক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করে। একটি সুনির্দিষ্ট ঋণক্ষয় সঞ্চিতি নীতিমালার আলোকে প্রতিবছর কিছু অর্থ ঋণ ক্ষয় সঞ্চিতি তহবিলে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে যা প্রতি বছর আয়-ব্যয় নির্ণয়ে খরচ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।

২০১২-১৩ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৮৮.৯০ কোটি টাকা ঋণ ক্ষয় সঞ্চিতি খরচ হিসেবে সংস্থান রাখে যা মূলত হয়েছে ঐ বছর কয়েকটি বড় সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ে কিছু অর্থ ফেরৎ প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে। ঋণক্ষয় সঞ্চিতি বাবদ সংস্থানকৃত এ অর্থ পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকার কারণে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। তবে ঐ সংস্থাগুলো ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের শুরুতে বকেয়া অর্থসহ বর্তমান প্রাপ্য অর্থের অংশ নিয়মিত পরিশোধ করায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কোন ঋণ ক্ষয় সঞ্চিতির প্রয়োজন হবে না বরং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৮৯.২৫ কোটি টাকা আয় হিসেবে গণ্য হবে, যা প্রতিষ্ঠানটি নীট উদ্বৃত্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

প্রকৃত পক্ষে ঋণক্ষয় সঞ্চিতি প্রতিষ্ঠানটির কোন লোকসান নয় এটি একটি সাময়িক সঞ্চিতি। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮৮.৯০ কোটি টাকা ঋণক্ষয় সঞ্চিতি প্রভিশন করার কারণে ঐ বছর প্রতিষ্ঠানটি মোট আয়ের সাথে মোট ব্যয়ের অনুপাত কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এর পূর্ব ও পরবর্তী বছরসমূহে মোট আয়ের সাথে মোট ব্যয়ের অনুপাত কম রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মোট ব্যয় বৃদ্ধির আর একটি খাত হলো চাকুরেদের বেতন-ভাতা খাত। এ খাতে বর্ণিত সময়ে বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য নতুন প্রকল্পসমূহের এবং মূলস্রোতভূক্ত নতুন চাকুরে নিয়োগ দান করতে হয়েছে। উল্লেখ্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জনবলের বেতন ভাতাদি তারাই বহন করে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখনও বেতন-ভাতা খাতে আয়ের ৮%-এর বেশী খরচ করে না, যা অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য উদাহরণ হতে পারে।

কর্মসূচি/প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয়ের সর্বশেষ খাতটি হলো পুরো কাজটি পরিচালনা করতে হলে কিছু আর্থিক পরিচালন ব্যয় করতে হয় অর্থাৎ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট হতে গৃহীত ঋণের উপর সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয়। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এর পরিমান ছিল ১৫.৫০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য ফাউন্ডেশনের সকল অর্থের উৎস হলো বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী এবং এর নিজস্ব আয়।

পিকেএসএফ সামগ্রিক কর্ম পরিচালনায় সব সময় নতুনত্ব সৃষ্টিতে বিশ্বাসী। এ জন্য প্রতিবছর সহযোগীসংস্থাসমূহের নির্বাহী প্রধানদের এবং প্রতিষ্ঠানটির চাকুরেদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিদেশে প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য এ সম্পর্কিত সকল খরচ বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নকৃত প্রকল্প হতে নির্বাহিত হয়ে থাকে। পিকেএসএফ-এর নিজস্ব আয় হতে এখন পর্যন্ত এ জাতীয় ব্যয় বহন করা হয় নাই।

pksfপিকেএসএফ-এর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ফলে সকলের সহযোগিতায় দেশে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী অগ্রসর হয়ে পিকেএসএফ-এর অন্যান্য কার্যক্রম যেমনঃ জাগরণ, অগ্রসর, সুফলন, সাহস ইত্যাদি কর্মসূচি হতে ঋণ গ্রহণ করছে।

পিকেএসএফ-এর সফলতার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো এর দক্ষ কর্মী বাহিনী কর্তৃক সুনির্দিষ্ট পরিদর্শন নীতিমালার আলোকে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন। পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সকল দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ এবং এর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা টিম কর্তৃক নিয়মিত সহযোগীসংস্থার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়ে থাকে। ফাউণ্ডেশনের সভাপতির, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের কথা না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তিনি অব্যাহতভাবে সহযোগীসংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন করে থাকেন।

পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনে বিশ্বাসী। পিকেএসএফ-এর আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রতি বছর দেশের খ্যাতিমান ও ঋড়ৎবরমহ ধভভরষরধঃবফ নিরীক্ষা ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করানো হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠনটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সাধারণ পর্ষদ এ নিরীক্ষা ফার্ম নিয়োগদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আনয়নের জন্য একবারই এর গঠনতন্ত্রে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়।

ইতোপূর্বে এর পরিচালনা/সাধারণ পর্ষদের সদস্যগণ একবার নির্বাচিত হলে অসীম সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের পরে এ বিষয়ে পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে এক মেয়াদে তাঁরা ২ বছরের জন্য পরপর ৩ বারের বেশী দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এর ফলে বেশী সংখ্যক বিশেষজ্ঞদেরকে পিকেএসএফ-এর পর্ষদে অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পিকেএসএফ-এর সকল ধরণের নীতিমালা এর সহযোগী সংস্থাসমূহের সাথে ব্যপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুড়ান্ত করা হয়।

দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফ-এর মূল স্রোতের বিভিন্ন ঋণ কার্যক্রমের আওতায় বুনিয়াদ,জাগরণ, অগ্রসর, সুফলন এবং সাহস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় দারিদ্য্র দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সমৃদ্ধি) নামক একটি কর্মসূচি ২০১০ সাল থেকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
উন্নয়ন সহযোগীর আর্থিক সহযোগিতায় দেশের উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলায় মঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পিকেএসএফ ২০০৬ সাল থেকে দারিদ্র্য নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ “সংযোগ” নামে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কর্মসূচিটি বর্তমানে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলেন্স তহবিলে-এর অর্থায়নে কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রজেক্ট (সিসিসিপি) বিগত তিন বছর ধরে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর আর্থিক সহায়তায় উজ্জীবিত নামে একটি প্রকল্প সম্প্রতি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ইফাদের আর্থিক সহযোগিতা “পেস” নামক একটি নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে।

পিকেএসএফ দরিদ্র, অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুনির্দিষ্ট আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রমে শুধু অর্থায়ন নয়, নিজস্ব তহবিল হতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচিতে ব্যপকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, তা হলো টেকসই দারিদ্য্র বিমোচন। প্রতিষ্ঠানটি সকলের সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে সেটাই সকলের নিকট প্রত্যাশা।

Jaim_GM_PKSFলেখক: উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিকেএসএফ

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer