বাগেরহাট : অপার সম্ভাবনা থাকলেও নানামুখি প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে আছে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন। বিগত দুই দশকেও এখানকার বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের আধুনিকায়ন, লবণ শিল্পের উন্নয়ন, নিউজপ্রিন্ট-হার্ডবোর্ড-টেক্সটাইল মিলস্ চালুর ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা মেলেনি।
ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।খুলনা-বাগেরহাটে শিল্পের অতিরিক্ত বিনিয়োগ কমেছে নড়াইল চুয়াডাঙ্গা মাগুরা ও মেহেরপুর বিনিয়োগ শূন্য।
শিল্প উদ্যোক্তাদের মতে, যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সরকারকে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর অর্থনীতিবিদ-গবেষকরা মনে করেন, খুলনায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাব, বিপণনে জটিলতা, কাঁচামালের উচ্চমূল্য, অসম প্রতিযোগিতা ও দুর্বল আইনী কাঠামোসহ ৯ ধরণের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। রয়েছে সরকারের আন্তরিকতার অভাবও।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিগত আট বছরে খুলনা-বাগেরহাটে নিবন্ধিত শিল্পের মূল বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালে শুধুমাত্র খুলনা জেলায় মূল বিনিয়োগ ছিল ৮০০ কোটি টাকা ও অতিরিক্ত বিনিয়োগ ৫৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে মূল বিনিয়োগ ২২২৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেলেও অতিরিক্ত বিনিয়োগ ৪০০ কোটি টাকা কমেছে। একই সময়ে বিভাগের নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও মেহেরপুর ছিল একপ্রকার বিনিয়োগ শূন্য। বিনিয়োগ উদ্যোক্তাদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রামের তুলনায় এখানে শিল্প পণ্য উৎপাদনের ব্যয় তুলনামূলক বেশি। এ কারণে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, সম্ভাবনা থাকলেও জ্বালানি ও শক্তিসম্পদের অভাব এখানে শিল্পায়নের প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, খুলনার রূপসা নদীর তীরবর্তী ফ্রোজেন ফুড ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়ায় হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। চলতি বছরে জেলার বটিয়াঘাটার পানখালিতে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস যৌথ উদ্যোগে এলপিজি গ্যাস বোতলজাতকরণ প্রকল্পের নিবন্ধন হয়েছে।
জানা যায়, বিগত এক যুগে খুলনায় ৩০১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফুড অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস্ উৎপাদনের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৬০টি প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল শিল্প, নিবন্ধিত শিল্পের সংখ্যা ৪৯টি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল শিল্প, নিবন্ধিত শিল্পের সংখ্যা ৪৩টি। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় পাট ও বস্ত্রশিল্পে জাতীয়করণকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে মুখ খুবড়ে পড়ছে, সেখানে সফলভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ এগিয়ে চলছে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, খুলনা বিনিয়োগের জন্য অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ কাঁচামাল, সহজলভ্য শ্রম ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ রয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের সহজে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। এছাড়া সরকার বেনাপোল-ঢাকা ও পায়রা-ঢাকা রুটে শিল্প করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। যা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, শিল্পপার্ক, পিপিপির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন অর্থনীতির জন্য জরুরি। সরকার সারাদেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে খুলনার তেরখাদা ও বটিয়াঘাটা রয়েছে। এরূপ সমন্বিত কার্যক্রম বিনিয়োগের সুদিন ফেরাতে পারে বলে তারা মনে করেন।
বহুমাত্রিক.কম