ছবি: বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : দীর্ঘশ্বাস আর কান্না ছাড়া আর কিছুই নেই দূর্যোগ-দূর্ভোগ কবলিত হাওরবাসী জীবনে। এ দূর্ভোগের শেষ কোথায়-এই প্রশ্নই কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে।
বার বার বন্যায় ক্ষতির শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে প্রতি বছর অসময়েই। সুনামগঞ্জ জেলায় বছরের শুরুতেই পানিতে ডুবে বোরো ধানের ক্ষতি সামাল দিতে না দিতেই এখন শুরু হয়েছে বন্যা।
অকালে বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সহায়তা। তা দিয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করছিল হাওরবাসী। এখন তা বন্ধ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আবারও চালু দাবি জানিয়েছে হাওরপাড়ের হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্তরা।
সরকারি যে সহায়তা দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় সমান্য। আর বর্তমানে এখনও সরকারি সহায়তা পায়নি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতন্ত্য এলাকার মানুষরা।
জানা গেছে, জেলায় ৭টি উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার ছোট ছোট দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রামগুলোর চারদিকে পানিতে থৈথৈ করছে। বসত-বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মা,বাবা রয়েছেন উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা মধ্যে।
এদিকে বন্যার পানি নিন্মাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা ও উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় পানিবন্দি হয়ে আছে হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ অসহায় সাধারন মানুষ। তবুও খোলা হয়নি আশ্রয় কেন্দ্র গুলো।
পানির জন্য কর্মহীন অবস্থায় থাকায় ও বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় খাবার সংকটে রয়েছে হাওর পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। অসহায় হাওরবাসীর মাঝে এখন বিরাজ করছে শুধু বুক ভড়া র্দীর্ঘশ্বাস।
জেলার তাহিরপুর বিশ্বাম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগড়, দোয়ারা, ছাতক, দিরাই-শাল্লা উপজেলায় ১০হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাওর পাড়ে টিউবওয়েল গুলো। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সংকট। বিশুদ্ধ পানি অভাবে দেখা দিচ্ছে নানান পানি বাহিত রোগ। এছাড়াও ভেঙ্গে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
নিন্মাঞ্চলের স্কুল, হাট-বাজার, বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট বন্যার পানি ডুবে আছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসাপাতাল, বিভিন্ন হাট-বাজার, স্কুল গুলোতে ছাত্ররা আসতে না পারায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
জেলার সীমান্ত এলাকার ছোট-বড় অর্ধশতাধিক ছড়া দিয়ে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে পাহাড় ধসের আতংকের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত এলাকায় ও নদী তীরবর্তী ঘরবাড়িগুলো রক্ষা করার জন্য ঐ এলাকার লোকজন করছে পানির সাথে যুদ্ধ।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজার ওষুধ কোম্পানির ফারিয়ার সভাপতি সুহেল আহমদ সাজু জানান, জেলা শহর সহ আশে পাশের উপজেলা গুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে আছে উপজেলা বাসীর। ডুবে যাওয়া হাট-বাজারের দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম আকাশ সমান। খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রমিকরা আছে মহা বিপদে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি জানান, বন্যার কারণে তাহিরপুর উপজেলার দ্বীপসদৃশ্য গ্রামগুলোতে যে পরিমাণ সরকারি সহায়তা পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবেই কম। সরকারি সহায়তা দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার সব কটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় আমরা সবাত্মক প্রস্তুত আছি।
বহুমাত্রিক.কম