Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

তেলাপিয়া চাষিদের জন্য সুখবর এনেছেন বশেমুরকৃবি’র গবেষকরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৯ জুন ২০১৭

আপডেট: ১০:৫৫, ২৯ জুন ২০১৭

প্রিন্ট:

তেলাপিয়া চাষিদের জন্য সুখবর এনেছেন বশেমুরকৃবি’র গবেষকরা

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর : বাংলাদেশে বাণিজ্যিক চাষে জনপ্রিয়তা পাওয়া তেলাপিয়া মাছের একটি নতুন রোগ শনাক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকরা।

একইসঙ্গে তারা এই রোগের দমন কৌশলও উদ্ভাবন করেছেন। মলিক্যুলার পদ্ধতিতে রোগটির জীবাণু শনাক্তের পর গবেষকদল ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে রোগটির নিরাময় কৌশল বের করতে সক্ষম হয়।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে দেশে নদ-নদী, খাল-বিলসহ মুক্ত জলাশয় ব্যাপক দূষণে আক্রান্ত হয়েছে। অব্যাহত দখল ও উজানে পানির প্রবাহ আটকে দেওয়ায় নদ-নদীর নব্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত সুস্বাদু মাছগুলো অধিকাংশই বিলুপ্তির তালিকায় নাম লেখায়।

এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে তেলাপিয়ার মতো মাছের বাণিজ্যিক চাষ ত্বরান্বিত হয়। মৎস্য গবেষকদের উন্নত জাত উন্নয়নের ফলে দ্রুত চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয় তেলাপিয়ার চাষ। বর্তমানে সমতলে বিপুল সংখ্যক মানুষ তেলাপিয়ার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। রাজধানীসহ মফস্বল শহরের বাজারগুলোতেও তেলাপিয়ার সহজলভ্যতা চোখে পড়ার মতো। অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়ায় নিন্মআয়ের মানুষদের প্রাণিজ আমিষের প্রধানতম উৎসব এখন এই তেলাপিয়া মাছ।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশকিছু রোগের প্রাদুর্ভাবে তেলাপিয়া চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাত্রাতিরিক্ত ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ প্রয়োগসহ বেশ কিছু কারণে মাছের উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর ফলে গবেষকরা বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় এই মাছের নতুন রোগ শনাক্ত ও এর প্রতিকারে কাজ শুরু করে।

বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ এবং ভাদ্র মাসের তীব্র গরমের সময় তেলাপিয়া মাছে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া রোগগুলোর কারণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মো: তোফাজ্জল ইসলাম এক যৌথ গবেষণা পরিচালনা করেন।

তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মলিকুলার পর্যায়ের গবেষণায় Enterococcus faecalis নামক নতুন একটি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা হয়। এটি সনাক্তকরণে 16S rDNS sequence homology এবং phylogenetic analysis পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মাছের ব্যাপক মৃত্যু ঘটে।

গবেষকরা জানান, ক্ষতিকারক এই প্যাথোজেনের আক্রমণে আক্রান্ত মাছের চোখ ঝাপসা হয়ে যায় ও কোটর থেকে বের হয়ে আসে, লেজ ক্ষয়ে যায়, বিভিন্ন পাখনার গোড়ায় রক্তক্ষরণ হয়, মাছ শ্বাসকষ্টে ভূগে এবং মারা যায়। এই প্যাথোজেনটি তেলাপিয়ার পাশাপাশি শিং ও মাগুর জাতীয় মাছেও রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

Scientific Reports এ প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ

সম্প্রতি এই উদ্ভাবন বিষয়ে Nature Group প্রকাশিত বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী Scientific Reports-এ Molecular Identification of Multiple Antibiotic Resistant Fish Pathogenic Enterococcus  faecalis and their Control by Medicinal Herbs (https://www.nature.com/articles/s41598-017-03673-1) শিরোনামে এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

-অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান

নিবন্ধে গবেষকরা বলেন, আমরা তেলাপিয়া মাছে Enterococcus faecalis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এক ধরণের নতুন রোগ এ দেশে প্রথম বারের মত সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি এবং পলিমারেজ চেইন রিয়েকশন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি। দুই ধরণের ওষুধি গাছের নির্যাস ব্যবহার করে রোগটির প্রতিরোধ এবং প্রতিকার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছি। আমাদের গবেষণা তেলাপিয়া মাছের এ ধরণে রোগ শনাক্ত ও দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: তোফাজ্জল ইসলাম

এ বিষয়ে গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মো: তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত মলিক্যুলার কৌশলটি তেলাপিয়া ও অন্যান্য মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ শনাক্ত করতে কাজে লাগবে। এ ছাড়া স্থানীয় ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস মাছের রোগ দমনে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে মাছ চাষীদের উপকারে আসবে বলে মনে করি।’

দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণার মাধ্যমে মুনতাসির রহমান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের একজন ছাত্র তার এমএস সম্পন্ন করেছেন। IDRS-BFRI-এর একটি কনট্রাক্ট প্রকল্প এবং বিশ্ব ব্যাংক এর উপ-প্রকল্প HEQEP-CP#২০৭১- এর আংশিক অর্থ সহায়তায় গবেষণা কাজটি পরিচালিত হয়েছে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer