ঢাকা : একে তো জ্যৈষ্ঠের চাঁদিফাটা রোদ, তার উপর আর্দ্রতা। দু’য়ের গুঁতোয় ঘেমে-নেয়ে-একসা! বাইরে বেরোলেই হেয়ার ক্লিপের শক্ত বাঁধুনিতে চুলের রাশ টেনে ধরা। ঘাম বসে, চুল না শুকানোর ফল, বিচ্ছিরি গন্ধ!
কড়া রোদ চোখ পাকিয়ে টেনে নিচ্ছে চুলের স্মুদনেস। এ হেন সমস্যার উপর বিষফোঁড়া এসির দাপট। ফলে কাঁধ ছাপিয়ে নেমে আসা চুলের ঢাল... গরমে বেহাল!
কিন্তু রেশমি উজ্জ্বল চুল! সে তো স্বপ্নসম। তাই কে না চায় তাকে ছুঁতে। তাই এ সময় দৈনন্দিন যত্ন, হেয়ার প্যাক বা চুলের ডায়েট... জেনে নিন আপনার প্রশ্নের উত্তর। রোজকার যত্নের ফর্মুলা
* নিয়ম করে রোজ চুল ভেজান। অফিসে বেরোতে হয় বলে, আপনি হয়তো প্রতিদিন চুল ভিজিয়ে গোসল করেন না। এতে আপনার চুলেরই ক্ষতি হচ্ছে। পলিউশন, ধুলো, ঘাম সব কিছু জাঁকিয়ে স্ক্যাল্পে আস্তানা গাড়ে। তাই অন্তত পানি দিয়ে ধুয়ে এগুলোকে বিদায় করুন। চুল উজ্জ্বল থাকবে। l সপ্তাহে তিন দিন থেকে চার দিন শ্যাম্পু করেন? তা হলে সেটা ফলো করুন। এ সময় স্ক্যাল্পে ময়লা বেশি জমে বলে শ্যাম্পু নিয়মিত করতে হয়। তাই শ্যাম্পু হওয়া চাই মাইল্ড, চুল যাতে তার ঔজ্জ্বল্য না হারায়। ঠিক এই কারণেই কিন্তু এ সময়ে ডিপ কন্ডিশনিং ভীষণ প্রয়োজন।
* আপনি কি খুব স্টাইলিশ কিংবা যে পেশায় আছেন তার জন্য হেয়ার কালার, কেমিক্যাল বেসড ট্রিটমেন্ট নিত্য চুলের উপর দিয়ে চলে? এই ক’টা মাস অন্তত এসবের কাছে যতটা না ঘেঁষা যায়, চেষ্টা করুন। আপনার লম্বা বিনুনি বা ছোট্ট পনিটিকে ওর মতোই থাকতে দিন। যতটা পারবেন ন্যাচারাল প্রডাক্ট ব্যবহার করুন। অত্যধিক শুষ্কতার জন্য এ সময় ডগা-ফাটার সমস্যাটা বেশি। তাই ডগা ফাটলেই ট্রিম করুন। এতে চুলে বাউন্স বেশি আসবে। আর একটা ছোট্ট টিপ দিয়ে রাখি, ট্রিমিংয়ের পর চুলের নীচের অংশে নারকেল তেল মাসাজ করুন।
* শ্যাম্পু করার মতো অয়েল মাসাজও খুব জরুরি। ব্লাড সার্কুলেশন এবং চুলের গোড়া মজবুত রাখার জন্য ভাল করে তেল মাসাজ করুন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু।
* ত্বকের মতো চুলেরও কিন্তু সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টরের দরকার হয়, সেটা জানেন কি? তাই খুব রোদে অনেকক্ষণ বাইরে থাকতে হলে, মাথায় স্কার্ফ জড়িয়ে রাখুন। ছাতা ব্যবহার করুন। বিশেষ করে কালার্ড হেয়ার হলে রোদে রং হালকা হয়ে যায়। তাই প্রডাক্ট ব্যবহার করুন যাতে এসপিএফ রয়েছে।
*ফ্রিজ কন্ট্রোল করাটা এ সময় কপালে ভাঁজ ফেলে। এর জন্য কী করা দরকার জানেন? চুল খোলা না রাখা। বেণী, নট, বান... যেমন খুশি চুল বাঁধুন। তবে টাইট করে নয়। l অ্যাভোকাডো অয়েল, অ্যালো ভেরা রস ও জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে রাখুন। যখনই চুল খুব ড্রাই লাগবে, এটা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। চটজলদি শাইন আসবে।
শাইন আনতে হেয়ার প্যাক
প্রোটিনের অভাবে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়। যেটা অনেকেই ভেবে দেখেন না, মনে করেন গরমে ঘাম জমে এমনটা হচ্ছে। তাই প্রোটিন হেয়ার প্যাক মাথায় মাখুন। ফলে চুল স্বাভাবিকভাবে লম্বা হবে। গোড়া থেকে মজবুতও হবে। আর উজ্জ্বল তো বটেই।
* ২টি ডিমের সাদা অংশ, ৪ টেবলচামচ দুধ, ৩ টেবলচামচ মধু এবং ১টি মাঝারি সাইজের কলা চটকে মেশান। এবার ক্রিমের মতো এই মিশ্রণটি অল্প-অল্প করে চুলের গোড়া থেকে ডগা অবধি একটা ব্রাশে করে লাগান। আধঘণ্টা রাখুন।
এ সময় মাখায় একটা শাওয়ার ক্যাপ জড়িয়ে নিন। তার পর শ্যাম্পু। খুব শুকনো এবং ড্যামেজড চুলে কিন্তু এই প্যাকটি ওষুধের মতো কাজ করে। ডগা ফাটা, শুষ্কতা দূরে সরিয়ে চুল বানায় মসৃণ। সেরা ফল পেতে সপ্তাহে দু’দিন হেয়ার প্যাকটি লাগান। l শুষ্ক চুলের জন্য এই প্যাকটি ভীষণ উপকারী।
*হাফ কাপ দুধে ৪ টেবলচামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। তার পর মেথি বেটে, তার সঙ্গে ২ টেবলচামচ দই ও ৩ টেবলচামচ নারকেল তেল মেশান। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে হালকা গরমজলে পানিতে ধুয়ে নিন। তার পর আবার প্যাকটি লাগান। আধঘণ্টা রেখে ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
*হাফ কাপ গরমজলে ২ টেবলচামচ জিলাটিন পাউডার ভিজিয়ে রাখুন। এর মধ্যে দিন ১টি ডিমের সাদা অংশ, ২ টেবলচামচ কন্ডিশনার এবং ২ টেবলচামচ মধু। পুরোটা খুব ভাল করে মিশিয়ে, একটি ব্রাশ দিয়ে চুলে লাগান। মিনিট কুড়ি রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন এবং কন্ডিশনার লাগান।
তা হলে এবার গরমে ‘চুল চরিত্র’ বেজায় জটিল, বলাটা অন্তত আপনাকে মানাবে না। তার চাহিদা বুঝে যত্ন করুন। দেখবেন, দিনে দিনে সে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা