Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা-বুদাপেস্ট সম্পর্ক জোরদারে পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪০, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ঢাকা-বুদাপেস্ট সম্পর্ক জোরদারে পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত

ছবি-পিআইডি

ঢাকা : বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরি ভবিষ্যতে তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুন:স্থাপন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সহযোগিতার পাঁচটি ক্ষেত্র সনাক্ত করেছে। খবর বাসস’র 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ২০১৮ সালের মধ্যে কূটনৈতিক মিশন অথবা কনস্যুলেট অফিস খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিমর্মভাবে হত্যা করার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার সকালে কসুত স্কয়ারে হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে তারা দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করতে কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি পর্যায়ে আলোচনার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য তিনটি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে উভয় নেতা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুরত্ব কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। দুটি দেশই সহযোগিতার ক্ষেত্রে আন্তরিক।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহসিকতার রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে তাঁর পরিবারের সংগ্রাম ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন।

ওরবান বলেন, হাঙ্গেরি থেকে বাংলাদেশের দুরত্ব অনেক। তবে দেশটি আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান এবং বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাবার বিষয়ে আমাদের অনেক আগ্রহ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, তার দেশ একাধিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে, পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এবং দেশটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হাঙ্গেরী এই ভোগান্তি নিরসনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে। শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ায়ও অনুরূপ সমস্যা রয়েছে।

শেখ হাসিনা ভিক্টরের বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার যথাশিগগির সম্ভব ঢাকায় হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এবং দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

ভিক্টর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান ও জিরো টলারেন্স নীতির প্রশংসা করে বলেন, কোন ধর্ম, জাতি অথবা জাতিগত মতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক থাকতে পারে না, সন্ত্রাসীরা হবে নিগৃহীত।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরী সফর দুই দেশের সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। তিনি বলেন,বৈঠকে সহযোগিতার পাচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে।

শহীদুল হক বলেন, গবেষণাসহ পানি ব্যবস্থাপনা খাতে সহযোগিতার জন্য একটি ‘ওয়াকিং গ্রুপ’ গঠন করা হবে। এছাড়াও দু’দেশ পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত তহবিলে সহযোগিতা করবে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা বাড়ানোর ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করায় দুই নেতা এই খাতে নতুন নতুন প্রকল্প চালুর ব্যাপারে সম্মত হন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থান এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৃষিখাতে দেশটির সম্ভাবনা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

শহীদুল হক জানান, উভয় প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের বিষয়টি জোরদারে সম্মত হন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী বছর চিকিৎসা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিজ্ঞানে পড়াশোনার জন্য ২শ’ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে পুর্ণাঙ্গ বৃত্তি দিবে হাঙ্গেরী এবং ভবিষ্যতে এটা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

অন্যদিকে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন- সেদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী লেভেন্তে ম্যাগইয়ার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যান্ডর পিন্টার এবং কৃষিমন্ত্রী জসল্ট নেমেথ।
দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষিসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ও সাধারণ বিষয়াবলী নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা করেন।
বৈঠকের আগে দুই নেতা কিছুসময় একান্তে কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান ‘চেয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী মাসে ঢাকায় ৯ম ‘গ্লোবাল ফোরাম অব মাইগ্রেশন’ আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং তিনি আশা করেন, হাঙ্গেরী ওই বৈশ্বিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে।

এর আগে, পার্লামেন্ট ভবনে এসে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। এ সময় গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল শেখ হাসিনাকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করে। এসময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer