Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ড্রেজারে বালু উত্তোলন : বগুড়ায় হুমকির মুখে ৪ সেতু

আবদুল ওহাব, বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:২৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ড্রেজারে বালু উত্তোলন : বগুড়ায় হুমকির মুখে ৪ সেতু

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

বগুড়া : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাঙালি নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর তলদেশ থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ৪টি বড় সেতু। এতে প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও আশপাশের আবাদি জমি ধসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধুনট উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে বাঙালি নদী প্রবাহিত। নদীর বথুয়াবাড়ী, বেড়েরবাড়ী ও বিলচাপড়ী এলাকায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, চারটি আরসিসি গার্ডার সেতু। তবে সেতুগুলোর জন্য হুমকি হলেও ওই সেতুগুলোর দু’পাশে বসানো হয়েছে, শ্যালো মেশিন চালিত অন্ততঃ ২০টি ড্রেজার মেশিন। এ মেশিনের সঙ্গে পাইপ লাগিয়ে নদীর গভীর তলদেশ থেকে বোরিং করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

নদী থেকে তোলা বালু পাইপের মাধ্যমে সেতুর নিচে ও আশপাশের কৃষকের জমিতে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাকে করে বালু বহন করে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নদীতে এভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর দু’পাশে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি ধসে পড়ছে। রাস্তা ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

বথুয়াবাড়ী বালু পয়েন্টে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধ আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পৈত্রিক তিন বিঘা জমির মালিক ছিলাম। প্রভাবশালীরা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলায় এ পর্যন্ত দেড় বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট জমিও হুমকির মুখে। শুধু আমজাদ হোসেন নয়, তার মতো আজিবর রহমান, মজনু মিয়া, সকিতন বেওয়াসহ অনেক কৃষকের জমি এখন নদী গর্ভে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বথুয়াবাড়ী এলাকায় গোলজার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বালু মহল চালাচ্ছেন। তার পার্টনার হিসেবে রয়েছেন, শেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজমুল আলম খোকনসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। মোবাইল ফোনে গোলজার হোসেন বলেন, অনেক টাকা খরচ করে জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে এক বছরের জন্য বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। তবে তার বালু উত্তোলনে কারো ক্ষতি হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে বিলচাপড়ী এলাকায় আবাদি জমি ও জোড়া সেতুর পাশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য অভিযুক্ত ড্রেজারের মালিক রবিউল হাসান উৎসব ও আলিম হোসেন সঙ্গে কথা বললে তারা জানান,‘তারা মেশিন ভাড়া দিয়েছেন। বালু মহাল চালাচ্ছেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান মাসুদ ও শেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজমুল আলম খোকন। অন্যদিকে খোকন দাবি করেন, তিনি কোনও বালু মহালের সঙ্গে জড়িত নন, কেউ কেউ অন্যায়ভাবে তার নাম ব্যবহার করছেন। একইভাবে বেড়েরবাড়ী সেতুর পাশেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ধুনট উপজেলা জাতীয়তাবাদী তরুণ দলের নেতা রায়হান আহমেদসহ কয়েক জন প্রভাবশালী ওই বালু মহল নিয়ন্ত্রণ করছেন।

শুধু বথুয়াবাড়ী, বিলচাপড়ী ও বেড়েরবাড়ী এলাকাতে নয়, বর্তমানে ধুনট উপজেলার বাঙালি ও ইছামতি নদীর ৫০টিরও বেশি পয়েন্টে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অব্যাহত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুই তীরের আবাদি জমি, রাস্তা ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এরপরও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন।

্িবষয়টি নিয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer