Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুমুরিয়ায় আড়াইশ’ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন, সংরক্ষণ সংকট

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:১৯, ২৬ জুলাই ২০১৭

আপডেট: ০২:৩০, ২৬ জুলাই ২০১৭

প্রিন্ট:

ডুমুরিয়ায় আড়াইশ’ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন, সংরক্ষণ সংকট

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। এই উপজেলায় বছরে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়। সবজি উৎপাদন, বীজ উৎপাদন ও সবজি আবাদে নতুন তুন প্রযক্তি উদ্ভাবন বাস্তবায়নে সফলতা পেয়েছেন যেমন কৃষক তেমনি কৃষি কর্মকর্তারাও। গত ১৮ বছরে এই উপজেলার ৮ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন ১০ বার।

তবে কৃষিজ পণ্য বাজারজাত করার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন কৃষকেরা। আবার সবজির সংকটের মুহুর্তে ভোক্তাদেরকেও বেশি দামে সবজি কিনতে হয়। জেলার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, বটিয়াঘাটায় নোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সেথানে সবজির উৎপাদন তেমন একটা হয় না বললেই চলে। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

এই উপজেলায় এ যাবত কৃষিতে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ৮ জন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এরা হলেন-বরাতিয়া গ্রামের সুভাষ মল্লিক তিনি ফুলকফি উৎপাদন করে ১৯৯৯ সালে পুরস্কার পান। কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ ও বাস্তবায়নে ২০০০ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পান তৎকালিন ব্লক সুপারভাইজার শেখ জাহিদুল ইসলাম।

নিজ উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন ও চারা বিতরণে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবীন্দ্র নাথ মল্লিক। ২০১৩ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়কে বৃক্ষ রোপন, পরিচর্যা ও সংরক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক অর্জন করে মাটি-মা-মণীন্দ্র- সাবিত্রী নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। খর্নিয়া গ্রামের মোঃ হানিফ মোড়ল মানসম্মত সবজির বীজ উৎপাদনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করেন।

এবছর ২০১৭ সালে এই উপজেলার তিন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পদক অর্জন করেন। তারা হলেন, কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ ও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরদার আব্দূল মান্নান, নার্সারিতে চারা উৎপাদনে ডুমুরিয়ার বান্দা গ্রামের অশোক বৈরাগী ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে চাকুন্দিয়া গ্রামের সুরেশ্বর মল্লিক।

জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সবজি গ্রাম বলে খ্যাত শোভনা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন মোড়ল বলেন; বাড়ির পার্শ্বে পৈত্বিক ৬ বিঘা জমিতে, মাছ, সবজি, ফলের আবাদ করেছেন। এবার সবজি বিক্রি করেছেন প্রায় ২ লাখ টাকা। বোরো মৌসুমে ধান পেয়েছিলেন প্রায় আড়াই শ মণ। মাছ বিক্রি করেও পেয়েছেন বেশ টাকা।

কুলবাগান থেকে আয় হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা মুনাফা করেন তিনি। তাঁর ঘেরের পানিতে মাছ, জমিতে ধান, ঘেরের আইলে (বেঁড়ি) সবজি। এই নিয়েই তার দিন কেটে যায়।

তিনি জানালেন, তার উৎপাদিত কৃষিজ পন্য বিক্রি করতে নিয়ে যেতে হয়, খর্নিয়া বাজারে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎপাদিত পন্য বিক্রি করে দিতে হয়। যদি সংরক্ষণ করা যেত তবে পরবর্তিতে যখন তরকারির সংকট দেখা দেয় তখন বেশি দামে বিক্রি করা যেত। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় সবজি পচেঁ যায়। তিনি জানান, বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমের শশা, খিরাই, কুমড়া, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও লাউয়ের মাদা দিয়েছেন।

শোভনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সরদার আব্দুল গণি জানান, শোভনা ইউনিয়ন এক সময়ে সবজির জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে বেশিরভাগ জমিতে নোনা আটকে থাকতো। কিন্তু বছর ৫/৭ আগের সেই নোনার অবস্থা আর নেই। আবারও ব্যাপক ফসল ও সবজির আবাদ হচ্ছে। এতে করে মানুষের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসছে।

তিনি জানান, ইউনিয়নের বিলের অভ্যন্তরের বেশ কিছু খাল ছিল ; যার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। আবার যে গুলো এখনও বেঁচে আছে তা প্রভাবশালিরা ইজারা নিয়ে নীতিমালা না মেনে মাছ চাষ করছে। এ সকল সরকারি খাল, নালা জলাশয় উন্মুক্ত রেখে কৃষির কাজে ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে কৃষকেরা ব্যাপক লাভবান হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার মধ্যে শোভনা, আটলিয়া, খনির্য়ায় বেশি সবজির আবাদ হয়। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে (১ জুলাই- ১৫ অক্টোবর) ২ হাজার ৪০০ হেক্টর (১ হেক্টর=২.৪৭ একর) জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। চাষীরা এবার ভাল ফলন পাবে। খরিপ-১ (১৬ মার্চ- ৩০জুন) সবজির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে । রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর- ১৫ মার্চ) সবজি আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে।

তিনি জানান, খুলনা জেলায় যে পরিমাণ সবজির উৎপাদন হয় তার ৮০ ভাগ উৎপন্ন হয় এই উপজেলায়। বছরে ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রায় ২ শত কোটি টাকার সবজির আবাদ হয়। কিন্তু উৎপাদিত এই সবজি সংরক্ষণ করার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই কৃষকেরা কম দামে তাদের উৎপাদিত কৃষিজ সামগ্রী বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

খুলনা জেলার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় এই উপজেলায় মোট জনসংখ্যা, ৩ লাখ ৫হাজার ৬৭৫জন। মোট আবাদি জমির পরিমান ৮৫ হাজার ৩৮২ হেক্টর (১ হেক্টর= ২ দশমিক ৪৭ একর)। এর মধ্যে এক ফসসি জমির পরিমান ৫৪ হাজার ২৬০ হেক্টর, দুই ফসলি ২৩ হাজার ২ হেক্টর ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ ৮ হাজার ১২০ হেক্টর। ডুমুরিয়ায় দানা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। বছরে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে ৭২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer