Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ‘দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল’

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ‘দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল’

আমাদের এক জীবনেই এতকিছু দেখে যেতে পারবো তা কখনই চিন্তা বা আশা করি নাই। আর শুধু আমি কেন কেউই হয়তো এসব বিষয় ভাবতেই পারেন নি। আগে টিভিতে, বিদেশি সিনেমাতে এমনকি গল্পের বইয়ে কখনো সখনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী শুনেছি, দেখেছি এবং পড়েছি। তখন সেগুলোকে আসলেই নিছক কল্পকাহিনীই মনে হতো। আমার বয়স এখন পঞ্চশের কোটায়। এখন বাংলাদেশের গড়আয়ু বিবেচনা করলে আল্লাহর রহমতে স্বাভাবিকভাবে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার আশা করতেই পারি। এরকম গতিতে চলতে থাকলে বাকী জীবনে যে আর কী কী দেখবো তা ভাবতে পারছি না। কিন্তু আমরা দেখেছি, এর আগের চল্লিশ বছরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যা হয়নি বিগত ১০ বছরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে।

কম্পিউটার নামের একটি যন্ত্রের এত বহুমুখী ব্যবহার হবে তা কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। সেখানে সর্বশেষ সংযোজন হলো ইন্টারনেট। আর ইন্টারনেট মানে হলো নেটওয়ার্কিং। আগে একটি চিঠি লিখে তা পোস্ট করে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে হতো কবে অপরপক্ষ থেকে তার উত্তরটি আসবে। অপেক্ষা করতে করতে একসময় ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে ঘটন অঘটন অনেক কিছুই ঘটে গেছে। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের যে অভিনব এবং সহজ ও দ্রুততম পদ্ধতি ইলেক্ট্রনিক মেইল বা ই-মেইল পদ্ধতি চালু হয়েছে তা সেকেন্ডের মধ্যেই হাজার হাজার মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে অপরপ্রান্তে থাকা প্রিয় মানুষটির কাছে। এ যেন স্বপ্নের মতো।

উদাহরণ হিসেবে তো শুধু একটি ই-মেইলের কথাই বলা হলো। কিন্তু ইন্টারনেটের যে কতশত ব্যবহার আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। গুগল, ইয়াহু ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে অনুসন্ধান করলে ইন্টারনেটে পাওয়া যায়না এমন কিছু জিনিস নেই। এগুলো এখন মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজ করে দিয়েছে। মানুষের এখানে সেখানে ভ্রমণও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে দেখা যেতো একটি খবর নিয়ে শত শত মাইল দূরে চলে যেতে হতো। কিন্তু এখন এক আঙ্গুলের একটি ক্লিকের মাধ্যমেই দেশ বিদেশের খবরা-খবর চলে আসছে আমাদের হাতের মুঠোয়।

মজার ব্যাপার হলো ইন্টারনেট এখন শুধু আর সেই কম্পিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন তা যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফোনে এসে ঠেকেছে। একটি ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটারের যত যা ক্যাপাসিটি রয়েছে তার থেকে কোন অংশেই কম নেই একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে। আর সরকারি বিভিন্ন ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানি ছাড়াও এখন বেসরকারি অনেক কোম্পানি এখন ইন্টারনেট সহজে প্রোভাইড করছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি সহজভাবে করছে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। তারা তাদের ব্যবহৃত নেটওয়ার্কের সাথে সাথে ইন্টারনেট সহজসাধ্য করে দিয়েছে।

একসময় একটি মোবাইল ফোনের মূল্য অনেক ছিল যা কোন অবস্থাতেই সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিলনা। দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কানেকশন নিতে হতো এ বাংলাদেশে। কিন্তু এখন এটি শেখ হাসিনার সরকারের সহযোগিতায় নামেমাত্র মূল্যে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। ক্ষেতমজুর, দিনমজুর থেকে শুরু করে এখন আর এমন লোক খোঁজে পাওয়া যাবে না যার একটি মোবাইল কানেকশন নেই। কারো কারো একাধিক কানেকশন এবং মোবাইল সেট ব্যবহার করতে দেখা যায় হরহামেশায়। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বদাই ইন্টারনেট অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।

আর মানুষের জন্য তা এখন ভাত মাছের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন স্পিড বা গতি। এর ফ্রিকোয়েন্সি যত বেশি থাকবে তার গতি তত বেশি হবে। আর এখানে ইন্টারনেটের গতি বলতে একটি স্ক্রিনে ক্লিক করলে কত তাড়াতাড়ি সেটা রেসপন্স করছে কার উপর নির্ভর করে। আর স্পিড হলো সেই নেটওয়ার্কের কতটুকু ব্যান্ডউইথ রয়েছে তার উপর। আর সেটি আসে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অথবা অপটিক্যাল ফাইবারের ক্যাবল দিয়ে। বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ ক্যাবল উপর দিয়ে না নিয়ে একদেশ থেকে অন্য দেশে কিংবা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে সাগর মহাসাগরের নিচ দিয়ে বিশেষ ধরনের অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং করা হচ্ছে।

সেই কাজের অংশ হিসেবে ১৯৯২ সালে একবার এবং ১৯৯৪ সালে আরেকবার কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে ইন্টারনেটের জন্য সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপিত হলে সেখানে বাংলাদেশ সরকারকে তখন বিনামূল্যে তাতে সংযুক্ত হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-চারদলীয় জোট সরকার সেই সুযোগ না বুঝে গ্রহণ করেন নি বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজের বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এর পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সেখানে অর্থের বিনিময়ে সেখান দিয়ে যাওয়া দ্রুত গতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে যুক্ত হয়েছিলেন।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাতে আর কুলোচ্ছে না। সেজন্যই প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় পুনরায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আবারো দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ চালু করা হলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার পাঁচশত গিগাবাইট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের দ্বিতীয় সাব মেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন সি-মি-ইউ-৫ আনষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

এটি শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কিং, ইন্টারনেট স্পিড কিংবা কাজের গতিশীলতাই বৃদ্ধি করবে না, তা সারাদেশসহ বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, খুলনা ও যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক গতিশীলতা আনয়ন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ। আর এর মাধ্যমে দেশও ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলা।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer